আর্থিক সংকটে হাজারো জেলে পরিবার

ভরা মৌসুমেও রুপালি ইলিশের দেখা মিলছে না মেঘনায়। মাছ না পাওয়ায় আর্থিক সংকটের মুখে পড়েছে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার কয়েক হাজার জেলে পরিবার। তাছাড়া ইলিশশূন্যতায় অভাব-অনটন আর চরম হতাশায় উপজেলার জেলেপাড়াগুলোতে চলছে হাহাকার। তবে নদীতে জাল ফেলে দুই-একটা ইলিশের দেখা মিললেও আশানুরূপ ইলিশ ধরা না পড়ায় এনজিওর লোন আর মহাজনের দাদনের টাকা পরিশোধের ভাবনাই জেলে পরিবারে নেমে এসেছে হতাশা। অথচ ইলিশকে ঘিরেই জীবন ও জীবিকার চাকা ঘুরছে এখানকার জেলে এবং আড়তদারদের।

গত মার্চ-এপ্রিল- এ দুই মাস নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হতেই নদীগুলোতে দেখা দিয়েছে ইলিশের আকাল। আশানুরূপ ইলিশ না পাওয়ায় জেলে এবং আড়তদাররা তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। তবে বৈশাখের শেষের দিকে জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়লেও জ্যৈষ্ঠ মাস ইলিশের ভরা মৌসুম। সেই হিসেবে ইলিশ মৌসুমের প্রায় দুই মাস অতিবাহিত হলেও মেঘনায় আশানুরূপ ইলিশের দেখা মিলছে না।

জেলেরা জানান, জ্যৈষ্ঠ থেকে ইলিশের ভরা মৌসুম। কিন্তু মৌসুমের দু’মাস পেরিয়ে গেলেও জালে ধরা পড়ছে না ইলিশ। সারাদিন জাল বেয়ে উঠছে না খরচের টাকা। এতে করে নদীতে জাল ফেলে ফিরতে হচ্ছে খালি হাতে। তাছাড়া অনেকেই এনজিও ও বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে ইলিশ বিক্রি করে পরিশোধ করবেন। কিন্তু ইলিশ না পাওয়া ঋণের দেনা শোধ করতে পারছেন না। ফলে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় এনজিও ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিভিন্ন কথা শুনতে হচ্ছে।

সামরাজ, বকশী, খেজুরগাছিয়া, ঘোষেরহাট, মাদ্রাজ বেড়িভাঙ্গা, বেতুয়া, হাজীরহাট, ঢালচর, চরপাতিলা, কুকরি-মুকরিসহ বিভিন্ন মৎস্য ঘাটগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, ঘাটে নৌকা নোঙর করে জেলেরা অলস সময় কাটাচ্ছেন। দুই-এক ঝুড়ি মাছ ঘাটে আনা হলেও নেই হাঁকডাক। তাছাড়া এ সময় যে পরিমাণ মাছ পাওয়ার কথা তার দশ ভাগের এক ভাগও ইলিশ কেনা-বেচা নেই। ফলে আড়তে অলস সময় পার করছেন আড়তদাররা। এদিকে আড়তদাররা ইলিশের ওপর নির্ভর করে জেলেদের মধ্যে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। মেঘনায় মাছ পাওয়া গেলে তা বিক্রি করে একটা নির্দিষ্ট অঙ্কের মুনাফা অর্জন করবেন এ আশায়। কিন্তু তাদের চোখে এখন বিষাদের ছোঁয়া।

সামরাজ মৎস্যঘাট এলাকার জেলে কামাল মাঝি, রফিক মাঝি ও মনির মাঝি জানান, প্রতি বছর এ সময়ে নদীতে প্রচুর ইলিশ মাছ পাই। কিন্তু এ বছর নদীতে তেমন ইলিশ নেই। আর তাই নদীতে জাল ফেলে প্রায় খালি হাতে ফিরতে হয়। এভাবে চলতে থাকলে পরিবার-পরিজন নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে।

খেজুরগাছিয়া মৎস্যঘাটের আড়তদার আকতার হোসেন জানান, ইলিশের আয়ের ওপর নির্ভরশীল তার পরিবার। বর্তমানে নদীতে ইলিশ না থাকায় ধারদেনা করে সীমাহীন কষ্টে রয়েছেন। স্থানীয় মৎস্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মেঘনার মাঝ নদীতে অনেক ডুবচরের কারণে অবাধে ইলিশ আসতে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। তাদের ধারণা, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নদীতে ইলিশের বিচরণ কমে যাচ্ছে।

আজকের বাজার: আরআর/ ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭