আলো জ্বলছে ভোলার দুর্গম ১৬টি চরে

জেলার বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলগুলোতে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করা হচ্ছে। মুজিব বর্ষ উপলক্ষে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড’র মাধ্যমে ১৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৬টি দুর্গম চরে খুব শিগগিরই আলো জ্বলবে। নদীর তলদেশের ৩ থেকে ৪ ফিট নিচ দিয়ে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে ৮৮ দশমিক ৬০ কিলোমিটার এলাকায় লাইন স্থাপন করা হবে। আর প্রতি কিলোমিটার লাইন সংযোগে ব্যয় হচ্ছে ৫০ লাখ টাকা করে। ইতোমধ্যে এসব চরে লাইন স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে বেশ কয়কটিতে কাজ শুরু করা হয়েছে। এদিকে চরাঞ্চলে বিদ্যুতায়নের খবরে আনন্দ প্রকাশ করেছে চরাঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষ। তারা মনে করছে, এর মাধ্যমে অন্ধকারের অভিশাপ থেকে মুক্ত হয়ে আলোর পথে যাত্রা করবে তারা। একইসাথে জীবনমানে পরিবর্তন আসবে তাদের।

ভোলা পল্লী বিদ্য্যুত সমিতির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) আবুল বাশার আযাদ বলেন, এসব চরের মধ্যে ভোলা সদরের ভবানীপুর, মেদুয়া ও কাচিয়া চর। তজুমোদ্দিনের মলংচরা, সোনাপুর, চর জহিরউদ্দিন, চর মোজাম্মেল ও চর আব্দুল্লা। চরফ্যাসনের চর কুকরী-মুকরী ও মুজিবনগর। এছাড়া পটুয়াখালীর চর মমতাজ, চর বোরহান, চর বিশ্বাস, চর কাজল, চর হাদি ও লক্ষীপুরের সোনার চরসহ মোট ১৬টি চরে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হবে। তিনি আরো বলেন, চর মোজাম্মেল, চর জহিরুদ্দিন, চর মলংচড়া ও চরআব্দুল্লাহ ছাড়া বাকি ১১টি চরের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে। অন্যগুলোর কাজও শীগ্রই আরম্ভ হবে। চলতি বছরের মধ্যেই এসব কাজ সম্পন্ন করার টার্গেট রয়েছে। আর প্রাথমিকভাবে এর মাধ্যমে উপকৃত হবে ৩২ হাজার ৮১৫টি পরিবার।

প্রায় ২৫ বছর আগে ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার মধ্য মেঘনার বুকে জেগে ওঠে চর মোজাম্মেল। সময়ের সাথে বিভিন্ন এলাকা থেকে ভূমিহীনরা আশ্রয় নিয়ে গড়ে ওঠে বসতি। গত ১০ বছরের প্রায় ১০ হাজার মানুষের আবাসস্থলে পরিণত হয় এ চর মোজাম্মেল। এখানে বসবাস করা মানুষ গুলো শহরের আধুনিক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। বিদ্যুৎ হলো তাদের কাছে এক স্বপ্নের মতো। তারা কখনো ভাবেনি এ দুর্গম জনপদে বিদ্যুৎ আসবে। তাদের স্বপ্ন এবার হাতের মুঠোয় ধরা দিচ্ছে। চর মোজাম্মেলের মুক্তিযোদ্ধা বাজারের পল্লী চিকিৎসক শহিদুল ইসলাম জানান, চর মোজাম্মেলে বিদ্যুৎ আসবে এটা ছিল স্বপ্নের মত। এখন আমরা জেনারেটরের মাধ্যমে দৈনিক ২০ টাকা করে বিদ্যুৎ ক্রয় করি। কিন্তু তাতে তেমন লাভ হয়না। ফ্রিজ চালানো যায়না। ফ্রিজ চলাতে না পারার কারণে জরুরী ওষুধ আমরা রাখতে পারি না। মানুষ যার ফলে বিপাকে পড়ে। আশা করি বিদ্যুৎ আসলে এ সমস্যা আর থাকবেনা।

কৃষক তৈয়ব জানান, বিদ্যুৎ না থাকায় আমাদের ছেলে মেয়েরা সন্ধ্যার পর ঠিক মতো পড়া লেখা করতে পারেনা। তেল কিনে হারিকেনের বাতি দিয়ে সবার পক্ষে রাতে ছেলে মেয়েদের পড়াশুনা করা সম্ভব হয় না। সবার পক্ষে সোলার কেনাও সম্ভব নয়। তাই চরে বিদ্যুৎ দেয়ার উদ্যোগ নেয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান তিনি। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সাঈদ বলেন, স্থানীয় চরগুলো দীর্ঘদিন অবহেলিত অবস্থায় ছিলো। বর্তমান সরকার চরে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানের উদ্যোগ নেয়ায় মানুষের দুরাবস্থা কেটে যাবে। দুর্গম স্থানে বসেই শহরের সুবিধা ভোগ করতে পারবে তারা। প্রায় অধিকাংশ চরেই আমাদের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের আগেই কাজ শেষ করার প্রচেষ্টা থাকবে বলে আশা তার। তথ্য-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান