ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ দুদিনের সফরে ২২ অক্টোবর রোববার ঢাকা আসছেন। সফরের সময় তিনি ভারতীয় অর্থায়নে ১৫টি বড় উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করবেন। এছাড়া তিনি ঢাকায় বাংলাদেশ-ভারত জয়েন্ট কনসালটেটিভ কমিশন—জেসিসির বৈঠকে যোগ দেবেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, জেসিসি বৈঠকে বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের নানা ইস্যুতে আলোচনা হবে। এ সময় মায়ানমারের রাখাইনে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর দেশটির সেনাবাহিনীর চালানো সহিংসতার বিষয়ে ভারতের আনুষ্ঠানিক অবস্থান জানতে চাইবে ঢাকা।
সূত্র জানায়, সুষমা স্বরাজ রোববার দুপুরে বিশেষ বিমানে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু বিমানঘাঁটিতে অবতরণ করবেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাবেন। বিকালে হোটেল সোনারগাঁওয়ে বাংলাদেশ-ভারত জয়েন্ট কনসালটেটিভ কমিশনের চতুর্থ বৈঠকে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে কো-চেয়ার হিসেবে যোগ দেবেন। দ্বিপক্ষীয় ওই বৈঠক শেষে সন্ধ্যায় সুষমা স্বরাজ সাক্ষাত করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে। সেখান থেকে হোটেলে ফিরে তিনি তার সম্মানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়োজিত নৈশভোজে অংশ নেবেন।
সুষমা স্বরাজ আগামীকাল ২৩ অক্টোবর সকালে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনের নবনির্মিত চ্যানসারি কমপ্লেক্স উদ্বোধন করবেন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেখানে উপস্থিত থাকবেন। সুষমা স্বরাজ এ সময় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভারতীয় অর্থায়নে ১৫টি প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। অনুষ্ঠান শেষে তিনি ঢাকা ত্যাগ করতে বিমানবন্দরে যাবেন বলে কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে।
এক মাসেরও কম সময়ে বাংলাদেশে ভারতের কোনো ঊর্ধ্বতন মন্ত্রীর এটা দ্বিতীয় সফর। এর আগে চলতি মাসের শুরুতে ভারতের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি ঢাকা সফর করেন। সফরে ভারতীয় অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশের সঙ্গে ৪৫০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি স্বাক্ষর করেন। বাংলাদেশ বর্তমানে ভারতের একক বৃহত্তম ঋণগ্রহীতা। ২০১০ সালের পর থেকে বাংলাদেশকে প্রদত্ত ভারতীয় ঋণের পরিমাণ ৮০০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। ভারতের কূটনৈতিক সূত্রগুলো ঢাকাকে সে দেশের সরকারের অ্যাক্ট ইস্ট নীতির অন্যতম স্তম্ভ বলে অভিহিত করেছে। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশই এখন ভারতের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মিত্র।
সূত্র জানায়, সুষমা স্বরাজের সফরে রাজনৈতিক বিষয়াদির পাশাপাশি রোহিঙ্গা সংকট, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন ও ব্যবস্থাপনা, বিশেষ করে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির বিষয়টি আলোচনার টেবিলে তুলবে ঢাকা। জেসিসির বৈঠকের এজেন্ডায় সন্ত্রাস ও উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ও ভারতের অভিন্ন অবস্থানের বিষয়টিও থাকছে। বাংলাদেশে আগামী বছর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথা রয়েছে। আসন্ন নির্বাচন প্রশ্নে দিল্লির মনোভাবের বিষয়টি সুষমার সফরে স্পষ্ট হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সম্প্রতি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফর বিষয়ে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহিদুল হকের নেতৃত্বে স্বরাষ্ট্র, নৌ, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতিসহ অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে উপস্থিত এক কর্মকর্তা জানান, এবারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যুটি বেশি গুরুত্ব পাবে। বাংলাদেশ এ বিষয়ে ভারতের আনুষ্ঠানিক অবস্থান জানতে চাইবে। রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বর নির্যাতন চালানোর সময়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মায়ানমার সফর করেন। এ সময় রাখাইনে সহিংসতা নিয়ে ভারতের তেমন জোরালো আওয়াজ ছিল না। ফলে সব মিলিয়ে একটি বিভ্রান্তিমূলক অবস্থান বিরাজ করছে। এজন্যই আনুষ্ঠানিকভাবে দিল্লির কাছে অবস্থান জানতে চাইবে ঢাকা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০১৪ সালে দিল্লিতে বাংলাদেশ-ভারত তৃতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এরপর দীর্ঘদিন বৈঠকটি মুলতবি ছিল। বিশেষ করে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ অসুস্থ হয়ে পড়ায় পরবর্তী বছরে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়নি। আর সুস্থ হয়ে ওঠার পর তার ঢাকা আসার কথা থাকলেও, জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দেয়াসহ বিভিন্ন ব্যস্ততায় তা হয়ে ওঠেনি। কাজেই এবারের বৈঠকটি দীর্ঘ দুই বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
সূত্র জানায়, এবারের বৈঠকে চলতি বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের ফলাফল ও সিদ্ধান্তগুলোর বাস্তবায়ন অগ্রগতি দেখা হবে। বিভিন্ন প্রকল্পের ধীরগতির কারণ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করা হবে। চুক্তিবদ্ধ কাজগুলো কীভাবে আরো দ্রুতগতিতে শেষ করা যায়, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বিশেষ করে বিদ্যুত্ ও জ্বালানি খাতের প্রকল্পগুলো এবং দুই দেশের ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্ট ও কানেক্টিভিটি বৈঠকে পাশাপাশি বিশেষ গুরুত্ব পাবে।
ভারতীয় অর্থমন্ত্রীও ঢাকা সফরকালে কানেক্টিভিটির বিষয়টিতে বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় উন্নয়ন অংশীদারিত্ব ও উপ-আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতার সাফল্য এবং এ অঞ্চলে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে কানেক্টিভিটির বিষয়টি বিশেষ তাত্পর্যবহ।
আজকের বাজার:এলকে/এলকে ২২ অক্টোবর ২০১৭