আড়াই মাস সংসার করেও অবিবাহিত জান্নাতুল নাঈম

পারিবারিকভাবে যথাযথ নিয়ম মেনেই বিয়ে হয়। কাবিননামায় লেখা হয় ৮ লক্ষ টাকা। উসুল ধরা হয় ৩ লক্ষ।বিয়ের উকিল হন মেয়ের বাবা তাহের মিয়া। বিয়েতে কাজী ছিলেন আবু তালেব। কোনো নিয়মেই খামতি রাখেননি বর পক্ষ। প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা খরচের বিয়ের সংসার হয় মাত্র আড়াই মাস। এরপরই ডিভোর্স। বিয়ের ভিডিও ফুটেজও প্রকাশ হয়েছে। অথচ এখনও নিজেকে অবিবাহিত দাবি করছেন সদ্য ঘোষিত মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ জান্নাতুল নাঈম এভ্রিল। তার প্রাক্তন স্বামী মনজুর উদ্দিন রানার গ্রাম চট্টগ্রামের চন্দনাইশ গিয়ে এসব তথ্য জানা যায়।

মনজুর উদ্দিন রানা জানান, তাদের বিয়ে হয় ২০১৩ সালের ২১ মার্চ। তখন জান্নাতুল নাঈমের ডাক নাম আমেনা। তখন তিনি চন্দনাইশ বড়মা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী। আর মনজুর জামিয়াতুল আহম্মদিয়া সুন্নি আলিয়া মাদ্রাসার ছাত্র। এখন তিনি কাপড় ব্যবসায়ী।চন্দনাইশ পৌর এলাকায় অবস্থিত মনজুরের কাপড়ের দোকানের নাম ভিআইপি ক্লথ স্টোর অ্যান্ড টেইলার্স।

তিনি আরও জানান, ডিভোর্সের সময় জান্নাতুল নাঈম আমেনা দুই মাসের সন্তান-সম্ভবা ছিলেন । এরপর নিরুদ্দেশ হয়ে যান আমেনা। দীর্ঘদিন পর তার বাবা-মা জানতে পারেন- স্থানীয় এক যুবকের হাত ধরে ঢাকায় চলে গেছেন আমেনা। ঢাকায় এসে জান্নাতুল নাঈম আমেনা হয়ে যান জান্নাতুল নাঈম এভ্রিল। আর হঠাৎ করেই গত শুক্রবার রাতে তাকে ঘোষণা করা হয় মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ। এ নিয়েও রয়েছে বিতর্ক। বিচারকদের দাবি তিনি বিজয়ী তালিকায় ছিলেন না। এরপর মিডিয়ায় নানা আলোচনার সূত্র ধরে বেরিয়ে আসে বিয়ের খবরও। এতকিছুর পরও নিজের অবস্থান থেকে অনড় জান্নাতুল নাঈম। অস্বীকার করছেন বিয়ের বিষয়।

প্রশ্ন উঠেছে, একজন বিবাহিত মহিলা কীভাবে ‌‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদশ’ হন? বিচারকদের রায়কে পাশ কাটিয়ে জান্নাতুল নাঈম এভ্রিলকে দ্বিতীয় থেকে প্রথম করায় আয়োজক প্রতিষ্ঠানটিকে নিয়েও সমালোচনার ঝড় ওঠেছে।

জান্নাতুল নাঈম নামের যে প্রতিযোগীকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়েছে, তিনি নাকি বিচারকদের পছন্দের তালিকায় ছিলেন না। যাচাই-বাছাই শেষে বিচারকরা ভোট দিয়ে যাকে প্রথম নির্বাচিত করেন, আয়োজকের নির্দেশে উপস্থাপক তাকে দ্বিতীয় ঘোষণা করতে বাধ্য হন। এমন কাণ্ডে বিস্মিত হয়েছেন গ্র্যান্ড ফিনেলের ছয় বিচারক।

গত জুলাই মাসে আয়োজক প্রতিষ্ঠান অন্তর শোবিজ আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ নির্বচনের ঘোষণা দেয়। আয়োজক প্রতিষ্ঠানের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার জন্য প্রাথমিকভাবে প্রায় ২৫ হাজার আগ্রহী নাম নিবন্ধন করেন। তাদের মধ্য থেকে কয়েকটি ধাপে বাছাই করা হয় সেরা ১০ জনকে। এই ১০ জন হলেন রুকাইয়া জাহান, জান্নাতুল নাঈম এভ্রিল, জারা মিতু, সাদিয়া ইমান, তৌহিদা তাসনিম, মিফতাহুল জান্নাত, সঞ্চিতা দত্ত, ফারহানা জামান, জান্নাতুল হিমি ও জেসিকা ইসলাম।

২৯ সেপ্টেম্বর গত শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারের নবরাত্রী হলে এ প্রতিযোগিতায় গ্র্যান্ড ফিনেলে অংশ নেন তারা। যিনি সেরা হয়েছেন তিনি ১৮ নভেম্বর চীনের সানাইয়া শহরে অনুষ্ঠেয় ৬৭তম মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ থেকে অংশ নেবেন।

‘লাভেলো মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ প্রতিযোগিতার গ্র্যান্ড ফিনেলের বিচারক ছিলেন জুয়েল আইচ, শম্পা রেজা, বিবি রাসেল, চঞ্চল মাহমুদ, রুবাবা দৌলা ও সোনিয়া বশির কবির। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন শিনা চৌহান।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুজন বিচারক গত শনিবার সকালে কথা বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। তাদের মতে, ‘এটা খুব অন্যায় হয়েছে। আমাদের সবার কাছে যে প্রথম হয়েছে, তাকে প্রথম করা হয়নি। যাকে প্রথম করা হয়েছে, সে আমাদের প্রথম তিনজনের তালিকায়ও ছিল না। যেহেতু এটা একটা আন্তর্জাতিক ইভেন্ট, তাই আমরা এমন একজন প্রতিযোগীকে বাছাই করতে চেয়েছি, যে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে তুলে ধরতে পারে।

চন্দনাইশ পৌরসভার কাজি অফিস থেকে পাওয়া কাবিননামা অনুযায়ী ২০১৩ সালের ২১ মার্চ চন্দনাইশ পৌর এলাকার বাসিন্দা ও কাপড় ব্যবসায়ী মোহাম্মদ মনজুর উদ্দিনের সঙ্গে বিয়ে হয় জান্নাতুলের। একই বছরের ১১ জুন তালাকনামায় সই করেন জান্নাতুল।

আজকের বাজার: আরআর/ ০২ অক্টোবর ২০১৭