জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান বলেছেন, এখন আয়কর আর ভীতির বিষয় নয়। আয়কর প্রদান অত্যন্ত সহজ একটি বিষয় এবং আয়কর দেওয়াটা সবার নাগরিক দায়িত্ব।
২৬ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার রাজধানীর মিরপুরে এনবিআরের কর অঞ্চল-৩ আয়োজিত ‘আয়কর ক্যাম্প ও করদাতা উদ্ধুদ্ধকরণ’ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রী প্রাজ্ঞ প্রকাশ ভঙ্গিতে বলেন, আমাদের ব্যবসায়ী ও জনগণ আয়কর দিয়ে বাহাদুরী দেখাচ্ছেন। আয়কর দিয়ে জনগণের বাহাদুরী দেখানোর সময় এখন। আয়কর আর করদাতা সংগ্রহে আমরা সারাদেশে যাচ্ছি। জনগণকে বাহাদুরী দেখানোর সুযোগ দিচ্ছে এনবিআর।
নজিবুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সারাবিশ্বে বাংলাদেশ একটি উন্নয়নের রোল মডেল হয়েছে। এ রোল মডেলকে আরও সমুন্নত ও সুসংহত করার জন্য রাজস্ব আহরণের প্রক্রিয়া আরও সুসংহত হবে। গত বাজেটে অর্থমন্ত্রী দেশের যে অমিত সম্ভাবনা রয়েছে সে সম্ভাবনাকে উৎঘাটিত এবং ধারাবাহিকভাবে ব্যবহার করার কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, প্রথম আমাদের বাজেট ছিল ৭৮৬ কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রীর হাত ধরে বাড়তে বাড়তে তা ৪ লাখ কোটি টাকা অতিক্রম করেছে। তার স্বপ্ন হচ্ছে ৫ লাখ কোটি টাকায় উপনীত করার। সবার অব্যাহত সহযোগিতার মাধ্যমে এটা সম্ভব হবে।
চেয়ারম্যান বলেন, অর্থমন্ত্রী কর বাহাদুর পরিবার সম্মাননা দেয়ার কথা বলেছেন। বাংলাদেশে যারা আয়কর দেন অর্থমন্ত্রী তাদের বিভিন্নভাবে সম্মাননা দেয়ার জন্য ইতোমধ্যে প্রস্তাব দিয়েছেন। আমরা আয়কর মেলা করে ট্যাক্স কার্ড দিই। আগামী ১ থেকে ৭ নভেম্বর আয়কর মেলা অনুষ্ঠিত হবে। নভেম্বরের ২৪ থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত জাতীয় আয়কর সপ্তাহ। ঢাকা থেকে শুরু করে উপজেলা পর্যন্ত আমরা বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান করি। বাংলাদেশ যে এগিয়ে যাচ্ছে এর প্রমাণ হচ্ছে আমাদের একটি নিজস্ব আয়কর দিবস রয়েছে। নভেম্বর মাস হচ্ছে বাংলাদেশের জন্য আয়কর প্রদানের একটি উৎসব।
তিনি বলেন, ট্যাক্স ক্যাম্প এর মাধ্যমে আমরা করদাতাদের দোরগোড়ায় যাচ্ছি। সুদূর চর কুকরি-মুকরি, টেকনাফ থেকে তেতুলিয়াসহ সারাদেশে এ ক্যাম্প হচ্ছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় এ ক্যাম্প করা হচ্ছে।
কর বাহাদুর পরিবার সম্মাননা সম্পর্কে চেয়ারম্যান বলেন, একই পরিবারের উপার্জনক্ষম সবাই কর দিলে তাদের আমরা চিহিৃত ও পুরস্কারের ব্যবস্থা করবো। কাজ শুরু হয়েছে। শিগগিরই কাজ শেষ করে আয়কর মেলার শেষে তা ঘোষণা ও পুরস্কার দেয়া হবে।
তিনি বলেন, দেশে একটি রাজস্ববান্ধব সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায়ও তা উল্লেখ করেছেন। আমরা করসেবা প্রদান শুধু উপজেলা নয়, ইউনিয়ন পর্যন্ত নিয়ে গেছি। ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার ব্যবহার করে ই-টিআইএন, অন্যান্য কর, ভ্যাট ও শুল্ক সেবা সংক্রান্ত সেবা, তথ্য প্রদান করছি।
চেয়ারম্যান বলেন, অভ্যন্তরীণ সম্পদের ওপর নির্ভর করে দেশের উন্নয়ন করতে হবে। সেজন্য আয়করের এত বেশি প্রয়োজন। ভ্যাটে কোনো ফাঁকি দেয়া যাবে না। নাগরিকদের পবিত্র দায়িত্ব হচ্ছে সরকারকে সঠিকভাবে রাজস্ব দেয়া। রাজস্ব দিলেই পদ্মাসেতু, রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্পের মতো উন্নয়ন কাজ হবে। এসব জনগণের করের টাকায় হচ্ছে।
উন্নয়নের জন্য কর প্রদান অব্যাহত রাখার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, আমার সহকর্মীরা অতীতের সব দুর্নাম মুছে ফেলে আপনাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন; একটি করদাতাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন। আমরা সুশাসন ও আধুনিক ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে কাজ করছি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা-১৬ আসনের সংসদ সদস্য মো. ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা বলেন, করযোগ্য ব্যক্তি কর প্রদান না করলে সামান্য জরিমানার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এ জরিমানার পরিমাণ অনেক বেশি করা উচিত।এমন আইন করা উচিত যে সম্পদ অনুযায়ী কর নেয়া।
অর্থমন্ত্রীর প্রতি আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের অনেক করযোগ্য ব্যক্তি রয়েছে। ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে অন্তত ৫ কোটি মানুষকে অনলাইনের আওতায় আনুন। তাদের সম্পদ অনুযায়ী কর আদায় করলে ২০৪১ নয়, ২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত দেশে পরিণত হবে। রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ করযোগ্য সবাইকে করের আওতায় আসার আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে কর অঞ্চল-৩ এর কমিশনার নাহার ফেরদৌস বেগম এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন এনবিআর সদস্য (কর প্রশাসন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) মো. আব্দুর রাজ্জাক। অনুষ্ঠানে ১৭৬ জন করদাতার মধ্যে কর সনদপত্র বিতরণ করা হয়।
আজকের বাজার : এলকে/এলকে ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭