বদলে যাচ্ছে এনবিআর। বদলে যাচ্ছে করসেবা প্রদানের ধরন। কাস্টমসের পর এবার আয়কর কর্মচারীদের নির্দিষ্ট ইউনিফর্ম বা পোশাক বাধ্যতামূলক করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। অভিন্ন পোশাক প্রদানের মাধ্যমে আয়কর বিভাগে পরিবর্তনের আরো একটি মাইলফলক অতিক্রম করবে। প্রাথমিকভাবে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের এ পোশাক প্রদান করা হবে।
১২ নভেম্বর রোববার এনবিআরে এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া। সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পোশাকের ধরন ও কাপড় নির্বাচনের জন্য ৪ জন কর কমিশনারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এনবিআর সূত্র জানায়, গতবছর আয়করের ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারি বিশেষ করে নৈশ্য প্রহরী, অফিস সহায়ক ও চালকদের অভিন্ন ইউনিফর্ম (সাফারি ড্রেস) দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এনবিআর। সে অনুযায়ী এনবিআর একটি আদেশও জারি করে। এ তিন শ্রেণির কর্মচারীরা গত একবছর ধরে ইউনিফর্ম ভাতাও পেয়ে আসছেন। ভাতা পেলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা পোশাক তৈরি করেনি।
কর অঞ্চল-৪,৭,৮ ও ঢাকার বাইরে কয়েকটি কর অঞ্চলের এ তিন শ্রেণির কর্মচারীদের পোশাক তৈরিতে বাধ্য করে। কিন্তু বেশিরভাগ কর অঞ্চলের কর্মচারীরা এনবিআরের আদেশ মানেনি। সূত্র আরও জানায়, এবার আয়কর মেলায় কর্মচারীদের পোশাক পরিধানের নির্দেশ দেয় এনবিআর চেয়ারম্যান। কিন্তু বেশিরভাগ কর অঞ্চলের কর্মচারীরা এ আদেশ মানেনি।
এনবিআরের আদেশ কঠোরভাবে পরিপালন করতে নির্দেশ দিয়েছে সংস্থাটির চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান। অভিন্ন পোশাকের মাধ্যমে আয়কর বিভাগের আলাদা ভাবমূর্তি তৈরি হবে বলে জানানিতিনি।
চেয়ারম্যানের নির্দেশ অনুযায়ী রোববার সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় এ তিন শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য অভিন্ন ও ভালো মানের পোশাক তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কাপড় ও রং পছন্দের পর সোমবার সিদ্ধান্ত হবে। সভা সূত্র জানায়, এ তিন শ্রেণির কর্মচারীদের পোশাকের জন্য আলাদা অর্থ বরাদ্দ রয়েছে। ভালো মানের কাপড় দিয়ে এ পোশাক তৈরি করতে প্রয়োজনে বরাদ্দ বাড়ানো হবে। প্রতিটি পোশাকের পকেটে কর্মচারির নাম, কাঁধের এক পাশে কর্মচারির পদবি ও অন্য পাশে কর অঞ্চলের নাম থাকবে। যাতে কর্মচারিকে সনাক্ত করা সহজ হয়।
প্রাথমিকভাবে ঢাকার ১৫টি কর অঞ্চল, কর পরিদর্শন পরিদপ্তরের প্রায় ২ হাজার নৈশ্য প্রহরী, অফিস সহায়ক ও চালকদের এ পোশাক দেওয়া হবে। পর্যায়ক্রমে সারাদেশের কর অঞ্চলের কর্মচারীরা এ পোশাক পাবেন। সূত্র আরও জানায়, সভায় আয়কর পরিদর্শকদের (ইনকাম ট্যাক্স ইন্সপেক্টর) পোশাকের বিষয়ে আলোচনা হয়। সেক্ষেত্রে বরাদ্দ না থাকায় পোশাক চূড়ান্ত হয়নি। তবে বরাদ্দের জন্য প্রস্তাব করা হবে। প্রাথমিকভাবে আয়কর পরিদর্শকদের একটি অভিন্ন পোশাক তৈরিতে শিগগিরই নির্দেশ দেবে এনবিআর।
এ বিষয়ে এনবিআরের সদস্য (কর প্রশাসন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, নৈশ্য প্রহরী, অফিস সহায়ক আর চালকদের আমরা পোশাক দেব। আগামীকাল সিদ্ধান্তের পর আদেশ জারি করা হবে। অভিন্ন পোশাকের মাধ্যমে কর্মচারীদের মাঝে সেবার মানসিকতা তৈরি হবে। আশা করি ডিসেম্বর মাস থেকে তারা পোশাক পাবে। কর পরিদর্শকদের পোশাকের বিষয়টি দেওয়ার বিষয়টিও আমরা চিন্তা করছি।
এরআগে গেলো ৪ নভেম্বর রাজধানীর অফিসার্স ক্লাবে বিসিএস (কাস্টমস এন্ড ভ্যাট) এসোসিয়েশন কর্তৃক আয়োজিত ‘সুশাসন, নৈতিকতা ও মূল্যবোধ’ বিষয়ক সেমিনারে কাস্টমস কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ইউনিফরম ব্যবস্থা চালু করা হবে বলে জানান এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান। তিনি বলেন,আগামী মাস থেকেই বাংলাদেশ কাস্টমসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ইউনিফর্ম পরিধান করতে হবে। কাস্টমসের কমিশনার, ডিজি থেকে শুরু করে সিপাহি পর্যন্ত সকলের জন্য নির্ধারিত পোশাক থাকবে বলে জানান এনবিআর চেয়ারম্যান। তিনি বলেন বলেন, বাংলাদেশ কাস্টমসের রঙ ও স্বরূপ বদলাচ্ছে। আগামী ডিসেম্বরে সিপাই থেকে কমিশনার ও ডিজি পর্যন্ত ইউনিফর্ম পরিধানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক কাস্টমসের উত্তম চর্চার অংশ হিসেবে এই ইউনিফর্ম পরিধানের ব্যবস্থা। সেবার মান, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও পেশাদারিত্ব বৃদ্ধির জন্যই এই ব্যবস্থা বলে জানান তিনি।
এতোদিন কেবল ইন্সপেক্টর ও সুপরিনটেন্ডেন্ট পর্যন্ত বাধ্যতামূলক ছিলো। তবে মেম্বার ও চেয়ারম্যানের জন্য ইউনিফর্ম অপশনাল।
উক্ত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এনবিআর সদস্য ও এসোসিয়েশন সভাপতি খন্দকার আমিনুর রহমান। ইউনিফর্ম বিষয়ে উপস্থাপনা দেন চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের কমিশনার মো. নুরুজ্জামান ও এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সহিদুল ইসলাম। বক্তব্য রাখেন কমিশনার সৈয়দ গোলাম কিবরীয়াসহ আরো অনেকে।
আজকের বাজার:এলকে/এলকে ১৩ নভেম্বর ২০১৭