ইইউ বঙ্গপোসাগরীয় অঞ্চলে বাংলাদেশের আরও সক্রিয় ভূমিকা আশা করে

বাংলোদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধি রেনসে তিরিঙ্ক বলেছেন যে, বঙ্গপোসাগরীয় অঞ্চলে বাংলাদেশের আরও সক্রিয় ভূমিকা আশা করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। শুধু এই অঞ্চল নয়, পুরো ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বাংলাদেশের কৌশলগত অংশগ্রহণ বৃদ্ধির মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ইইউ এর কার্যক্রম বৃদ্ধি করা সম্ভব।

বৃহস্পতিবার কসমস ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ-ইউরোপীয় ইউনিয়ন সম্পর্ক: ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা’ শীর্ষক অনলাইন আলোচনায় (ওয়েবিনার) মূল বক্তা হিসেবে ইইউ দূত একথা বলেন। এসময় তিনি বলেন, একসাথে সমঝোতার মাধ্যমে কাজ করার জন্য ইইউ সকল দেশের জন্যই নিজেদের দ্বার উন্মুক্ত রেখেছে।

উক্ত আলোচনায় উদ্বোধনী বক্তব্য দেন কসমস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এনায়েতুল্লাহ খান এবং সভাপতিত্ব করেন প্রখ্যাত কূটনীতিক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী।

এছাড়া সভায় আলোচক প্যানেলে ছিলেন সিপিডির বিশিষ্ট ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, বিজিএমইএ এর সাবেক প্রধান ড. রুবানা হক, পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউট এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ড. জিয়াদি সাত্তার এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ এবং কসমস ফাউন্ডেশনের ইমেরিটাস উপদেষ্টা সাবেক রাষ্ট্রদূত তারিক এ করিম।

রেনসে তিরিঙ্ক বলেন, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬০ ভাগ মানুষের বসবাস, আর এই অঞ্চল থেকেই বৈশ্বিক জিডিপির প্রায় ৬০ শতাংশ আসে। অর্থাৎ বৈশ্বিক উন্নয়নে এই অঞ্চলের মানুষের অবদান দুই-তৃতীয়াংশ। এই অঞ্চলের উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে প্রাধান্য দেওয়ার কথা উল্লেখ করেন তিনি।

আলোচনায় এনায়েতুল্লাহ খান বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নে ইইউ খুব ঘনিষ্ট সহযোগী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। বিশেষ করে দারিদ্র বিমোচন, সুশাসন, উৎপাদন খাতে বহুমুখী সম্ভাবনা তৈরি করা ইত্যাদি। তিনি আরও বলেন, ইইউ বেশকিছু মানবিক মূল্যবোধের ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যা বর্তমান ইউরোপীয় জীবনধারা অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে।

ড. ইফতেখার আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন স্বাভাবিক ভাবেই একই চিন্তাচেতনা এবং সাদৃশ্যের ওপর নিজেদের সুদৃড় সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। ভূরাজনীতির দিকে আলোকপাত করে তিনি বলেন, বিশ্বের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট, চীন এবং ইইউ মূখ্য ভূমিকা রাখবে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, বর্তমান বিশ্ব সমঝোতার বদলে সংঘাতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সাবেক এই পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ কোনও দেশের নেতিবাচক উদ্দেশ্য সাধনে নিজেদের অন্তর্ভুক্ত করবে না। বাংলাদেশ সুন্দর ও স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়।

এর প্রেক্ষিতে ইইউ দূত রেনসে তিরিঙ্ক বলেন, এই অঞ্চলের সমাজ ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা বজায় রাখার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যকার ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতা বড় একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তিনি ‘ইউরোপ-চীন: কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি ২০১৯’ এর কথা উল্লেখ করে বলেন, চীন এবং ইইউ একই সাথে সহযোগী, আবার প্রতিদ্বন্দ্বীর ভূমিকাতেও আছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ যেমন ভারত এবং চীনের সাথে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রেখে চলছে, ঠিক একইভাবে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সাথে সম্পর্ক বজায় রেখে চলতে চায় ইইউ। ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আলোচনায় যুক্ত হয়ে বলেন, বিশ্বের বর্তমান অস্থিতিশীল অবস্থায় বাংলাদেশকে দারুণভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। বাংলাদেশের অন্যতম বন্ধু ইউরোপীয় ইউনিয়ন। কিন্তু জলবায়ুর বিষয়ে ইইউ এর উদ্যোগ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন ড. দেবপ্রিয়।

বিজেএমইএ’র সাবেক সভাপতি রুবানা হক কোভিড পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতির শুরুর দিকে অল্প কয়েকজন রাষ্ট্রদূতের মধ্যে ইইউ দূত অন্যতম, যিনি নিজ দায়িত্ব না এড়িয়ে বাংলাদেশে পোশাক শিল্প সংশ্লিষ্ট মানুষদের কথা শুনেছেন, পাশে ছিলেন।

অধ্যাপক ইমতিয়াজ বলেন, রেনসে তিরিঙ্ক বাংলাদেশের ভালো বন্ধু হয়ে সবসময় পাশে ছিল। তিনি আশা করেন, বিদায়ী এই দূত বাংলাদেশের ইইউ সম্পর্কের কিছু অসম্পূর্ণ বিষয়গুলো সমাধানে ভূমিকা রাখবেন।

এই আলোচনা কসমস ফাউন্ডেশনের অ্যাম্বাসডর লেকচার সিরিজের অংশ হিসেবে আয়োজন করা হয়। বর্তমান কোভিড পরিস্থিতির কারণে এই লেকচার সিরিজ অনলাইনেই আয়োজন করা হচ্ছে। সম্প্রতি জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত এবং চীনের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়। খবর-ইউএনবি

আজকের বাজার/আখনূর রহমান