স্বাধীনতা দিবসের আমন্ত্রণপত্রে বিকৃত করে বঙ্গবন্ধুর ছবি ছাপানোর অভিযোগে বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গাজী তারিক সালমানকে গ্রেফতারের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পর্যন্ত বিস্মিত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম।
বৃহস্পতিবার ২০ জুলাই আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা বিবিসিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ খবর জানা গেছে।
সেখানে বলা হয়েছে, পরিক্রমায় সরাসরি দেওয়া সাক্ষাৎকারে এইচ টি ইমাম বলেন, আমরা সবাই, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আজ যত কর্মকর্তা ছিলেন, এটি দেখে আমরা সবাই বিস্মিত হয়েছি। যে ব্যক্তি এই মামলা করেছেন, আমরা মনে করি, তিনি অত্যন্ত ঘৃণিত কাজ করেছেন।
এইচ টি ইমাম জানান, তিনি তাৎক্ষণিকভাবে প্রধানমন্ত্রীকে একজন ইউএনওকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়ার ছবিটি দেখান। ছবিটি দেখে প্রধানমন্ত্রী বিস্মিত হন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্ধৃত করে এইচ টি ইমাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী বললেন, ক্লাস ফাইভের ছেলেমেয়েদের মধ্যে প্রতিযোগিতার আয়োজন করে এই অফিসার সুন্দর একটি কাজ করেছেন এবং সেখানে যে ছবিটি আঁকা হয়েছে, সেটি আমার সামনেই আছে, আপনারা দেখতে পারেন এবং এই ছবিটিতে বিকৃত করার মতো কিছু করা হয়নি। এটি রীতিমতো পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য। এই অফিসারটি রীতিমতো পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য। আর সেখানে উল্টো আমরা তাঁর (ইউএনও) সঙ্গে এই করেছি, এই বলে প্রধানমন্ত্রী তিরস্কার করলেন। বললেন, এটি রীতিমতো নিন্দনীয়।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মচারীকে কোনো রকম অনুমোদন ছাড়া কীভাবে গ্রেপ্তার করা হলো—এই প্রশ্নের জবাবে এইচ টি ইমাম বলেন, এটি করা যায় না। কারণ, ইউএনও হচ্ছেন উপজেলা পর্যায়ে সরকারের সবচেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তাঁকে কোনো শাস্তি দিতে হলে বা তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা বা কোনো রকম কিছু করতে হলে সরকারের অনুমোদন প্রয়োজন।
ঘটনার জন্য বরিশালের ডিসি-এএসপিকে দায়ী করেন এইচ টি ইমাম।
প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা বলেন, পুলিশ যে ব্যবহার করেছে, এই ছেলেটির (ইউএনও) সঙ্গে, যেভাবে তাঁকে নিয়ে গেছে, এ নিয়ে ওখানকার ডেপুটি কমিশনার, পুলিশ সুপার, এঁদের প্রত্যেককে আমি দায়ী করব। এঁদের বিরুদ্ধেও আমাদের বোধ হয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
কীভাবে পুলিশ এ রকম একটি মামলা নিল, বিচারক কীভাবে মামলাটি গ্রহণ করলেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন এইচ টি ইমাম। তিনি বলেন, এ ঘটনায় মাঠপর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে, তাঁদের সঙ্গে তিনিও একমত।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, এইচ টি ইমাম বলেন, আমাদের অফিসারটিকে যেন হেনস্তা করার জন্য পুলিশ যেভাবে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাচ্ছে, এই পুরো ঘটনায় যে রকম তীব্র ক্ষোভ ফেটে উঠেছে, আমি তার সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত।
এইচ টি ইমাম বলেন, ঘটনাটি শোনার পরপরই প্রধানমন্ত্রী জানতে চেয়েছিলেন, যে ব্যক্তি এই মামলা করেছে, সে কে?
মামলা দায়েরকারী ব্যক্তি সম্পর্কে সঙ্গে সঙ্গে খোঁজ নিয়েছেন জানিয়ে এইচ টি ইমাম বলেন, এই লোক পাঁচ বছর আগেও আওয়ামী লীগে ছিল না। দলের ভেতরে ঢুকে পড়া এই অতি উৎসাহীরাই এই কাণ্ড ঘটিয়েছে, এই চাটুকারেরাই আমাদের ক্ষতি করছে।
এইচ টি ইমামের মতে, এ ঘটনার পেছনে তিনটি কারণ থাকতে পারে। প্রথমত, ইউএনওর বিরুদ্ধে হয়তো তাঁদের কোনো ক্ষোভ ছিল। তাঁকে অপমানিত করা ছিল তাঁদের লক্ষ্য। দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন সার্ভিসের মধ্যে একটি অসন্তোষ সৃষ্টি করা। তৃতীয়ত, সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করা।
ঘটনাটি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং দলটির সমমনাদের মধ্যেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে বলে বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে জানানো হয়।
প্রসঙ্গত, তারিক সালমান বরিশালের আগৈলঝাড়ার ইউএনও থাকার সময় গত স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে ছাপানো আমন্ত্রণপত্রে পঞ্চম শ্রেণিপড়ুয়া এক শিশুর আঁকা বঙ্গবন্ধুর ছবি ব্যবহার করেন। এ ঘটনায় বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সৈয়দ ওবায়েদুল্লাহ গত ৭ জুন বরিশাল মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে ইউএনওর বিরুদ্ধে পাঁচ কোটি টাকার মানহানির মামলা করেন। মামলাটি আমলে নিয়ে বিচারক ২৭ জুলাইয়ের মধ্যে তারিক সালমানকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়ে সমন জারি করেন।
জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে তারিক সালমানকে বরগুনা সদর উপজেলায় বদলি করা হয়। গত বুধবার ওই মামলায় আদালতে হাজিরা দিয়ে জামিনের আবেদন করেন তারিক সালমান। আদালত প্রথমে তা নামঞ্জুর করে ইউএনওকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। দুই ঘণ্টা পর তার জামিন মঞ্জুর করা হয়।
আজকের বাজার: আরআর/ ২১ জুলাই ২০১৭