ইউক্রেন সীমান্তের কাছে বেলারুশিয়ানদের যুদ্ধের অবসানের জন্য আকুল আকাঙ্ক্ষা

ইউক্রেনীয় সীমান্ত থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে বসবাসকারী বেলারুশিয়ান অবসরপ্রাপ্ত সের্গেই বুদিউখিন বলেছেন, সীমান্তের ওপারে যুদ্ধ কখনই খুব বেশি দূরে বলে মনে হয় না। বেলারুশের গোমেল থেকে এএফপি এ খবর জানায়।

বেলারুশ, ইউক্রেন ও রাশিয়ার সীমান্তের কাছাকাছি পাঁচ লাখ মানুষের বসবাসকারী গোমেল শহরের লেনিন অ্যাভিনিউতে ৬৩ বছর বয়সী এই বুদিউখিন বলেন, ‘আমি ভয় পাচ্ছি।’

তুষারপাতের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা সাবেক এই ইলেকট্রিশিয়ান যার জ্যাকেটের পিছনে ‘বেলারুশ’ শব্দটি গর্বের সাথে মুদ্রিত আরও বলেন, ‘আমি শান্তি চাই।’

দেশটির মিত্র রাশিয়া ইউক্রেনে অগ্রসর হওয়ার প্রাক্কালে ‘যুদ্ধ এবং শান্তি’ বেলারুশের বুদিউখিন ও আরো অনেকের ভাবনায় এসেছে।

নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তিন বছরের সংঘাতের অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।

বেলারুশের কর্তৃত্ববাদী প্রেসিডেন্ট ও রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ট মিত্র আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো রোববারের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নতুন মেয়াদে জয়লাভ করতে চলেছেন।

২০২২ সাল থেকে গোমেলের বিমানবন্দরটি ইউক্রেন হামলার জন্য রাশিয় প্রেরিত বিস্ফোরক ড্রোন উৎক্ষেপণের প্রধান ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করে আসছে।

বুদিউখিন বলেন, তিনি রাশিয়ানদের তার ‘ভাই’ হিসেবে দেখেন। তার মা একজন রাশিয়ান এবং বাবা বেলারুশিয়ান। তিনি বলেন, তার ভয় থাকা সত্ত্বেও,  তিনি প্রয়োজনে অস্ত্র হাতে নিতে প্রস্তুত আছেন।

– সীমান্তের ওপারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা-

সোভিয়েত যুগে আটকে থাকা ধূসর একাধিক শহরতলির মতই গোমেল, স্থানীয়রা কাছাকাছি সীমান্তের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বর্ধিত পরিবারের কথা বলে।

বাস স্টপের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা স্থানীয় আরেক ব্যক্তি তামারা বলেন, ‘আমার স্বামী রাশিয়ান এবং ইউক্রেনে আমাদের অনেক আত্মীয়স্বজন রয়েছে।’ ‘তাই এই পরিস্থিতি আমাদেরও কষ্ট দেয়।’ তিনি বলেন, তিনি তার দুই সন্তান ও নাতির জন্য ‘স্থিতিশীলতা’ চান।

তামারা বলেন, ‘এখন বেশিরভাগ সময় শান্ত”, কিন্তু ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে বেলারুশিয়ান সেনাবাহিনী বলেছিল যে তারা তাদের আকাশসীমার উপর আক্রমণাত্মক ড্রোন আটকে দিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমি চাই সবকিছু যত দ্রুত সম্ভব শেষ হোক।’

অন্যরা অভিযোগ করেন, যুদ্ধের কারণে তাদের সীমান্তের ওপারে যাতায়াত বন্ধ হয়ে গেছে।

এক গয়নার দোকানে কর্মরত ২১ বছর বয়সী আলেকজান্দ্রা বলেন, ‘আমরা যখন শান্তিতে ভ্রমণ করতে পারতাম তখন সত্যিই দারুন লাগত।’ ‘মাঝে মাঝে আমরা উত্তর ইউক্রেনের শহর চেরনিগিভে কেনাকাটা করতে যেতাম।’ কিন্তু তিন বছর ধরে তিনি ইউক্রেন যেতে পারছেন না।

-লুকাশেঙ্কোর অবস্থান-

মস্কোর সাথে বেলারুশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকা এবং রাশিয়ার কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্রের দেশে মোতায়েন কিছু লোকের মধ্যে বেলারুশ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা তৈরি করে।

তবে লুকাশেঙ্কো বলেছেন, তার দেশ ‘যুদ্ধ করতে চায় না।’

১৯ বছর বয়সী ছাত্র দিমিত্রি তেরেশেঙ্কো তার বান্ধবী আলিনার সাথে হাত ধরে গোমেলে হেঁটে যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন,  ‘বেলারুশে যুদ্ধ হওয়ার কোনও আশঙ্কা নেই, আমি আমাদের প্রেসিডেন্টেেক বিশ্বাস করি।’

আরেকজন স্থানীয়, ৬২ বছর বয়সী প্রাক্তন শ্রমিক, ইউরি তোলাইকো বলেন, তিনিও ‘ভয় পান না”। তার কাছে, বেলারুশিয়ান, রাশিয়ান এবং ইউক্রেনীয়রা ‘একই মানুষ’।
ইউক্রেন  তার পশ্চিমা মিত্রদের তহবিল এবং অস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার আক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করছে, তখন এই সংঘাতে উভয় পক্ষের লাখো লাখো সৈন্য ও বেসামরিক নাগরিক হতাহত হয়েছে।

তোলাইকো বলেন, এর একটি সমাধান আছে বলে তিনি মনে করেন, আর সেটি হলো, ‘ন্যাটোকে তার অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে, রাশিয়ার সাথে শান্তি স্থাপন করতে হবে এবং বলতে হবে ‘ঠিক আছে, আমরা ভুল ছিলাম।’

– ট্রাম্পের শান্তি আহ্বান –

ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের ক্ষমতায় ফিরে আসার ফলে একটি মীমাংসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, কারণ রিপাবলিকান নেতা প্রচারণার সময় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে তিনি ‘২৪ ঘন্টার মধ্যে’ সংঘাতের অবসান ঘটাতে পারবেন।

তবে রাশিয়া এবং ইউক্রেন এখনও কোনও চুক্তি থেকে অনেক দূরে বলে মনে করা হচ্ছে তবে পুতিন বলেছেন,  তিনি আলোচনার জন্য প্রস্তুত।

অবসরপ্রাপ্ত ইলেকট্রিশিয়ান সের্গেই বুদিউখিন বলেন, ট্রাম্পের অধীনে কোনো অগ্রগতির আশা খুবই ক্ষীণ বলে দেখছেন। ট্রাম্পকে  অপ্রত্যাশিত বলে মনে করেন উল্লেখ করে বুদিউখিন বলেন, ‘তিনি এক দিন এক কথা বলেন, আবার পরের দিন তিনি বিপরীত কথা বলেন।’

তিনি বলেন, ‘যদি আপনি বলেন যে আপনি একদিনে এতো সমস্যার সমাধান করতে পারবেন তাহলে মনে করতে হবে আপনি নির্বোধ।’