ইউনাইটেড পাওয়ারের মুনাফা প্রবৃদ্ধি অব্যাহত

আজকেরবাজার ডেস্ক: চলতি হিসাববছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে (জুলাই’১৬-মার্চ’১৭) ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ইউপিজিডি) মুনাফায় প্রায় ১২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। প্রবৃদ্ধির এমন ধারা ভবিষ্যতেও বজায় থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মঈন উদ্দিন হাসান রশিদ।

বুধবার তৃতীয় প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ আশাবাদ প্রকাশ করেন।

ইউপিজিডির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, কোম্পানির মুনাফা আরও বাড়াতে নানামুখী উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম ইপিজেডের বাইরের প্রতিষ্ঠানের কাছেও এখন বিদ্যুৎ বিক্রি করছে এ কোম্পানি। এছাড়া জেনারেটরের সঙ্গে টারবাইন বসিয়ে বাষ্প উৎপাদন শুরু হয়েছে, যা সীমিত পরিসরে কিছু কারখানার কাছে বিক্রি করা হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে ইউপিজিডির পরিচালক ও ইউনাইটেড গ্রুপের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ হাসান রাজা বলেন, তারা একটি সমন্বিত এলএনজি প্রকল্পে বিনিয়োগের কথা ভাবছেন। বর্তমানে এ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ প্রকল্পের আওতায় ৫০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। তবে বিষয়টি একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে আছে।

তিনি বলেন, তারা ইউপিজিডিকে এক হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি কোম্পানিতে রূপান্তরের স্বপ্ন দেখেন। এর অংশ হিসেবে ইউনাইটেড গ্রুপের দুটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান শাহজাহান উল্লাহ পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড ও ইউনাইটেড আশুগঞ্জ পাওয়ার লিমিটেডকে অধিগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন না পাওয়ায় ওই পরিকল্পনা বাতিল করা হয়। আগামিতে অনুমোদন পাওয়া গেলে কোম্পানি দুটি অধিগ্রহণে ফের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

রাজধানীর গুলশানে ইউপিজিডির প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কোম্পানির চেয়ারম্যান জেনারেল মোহাম্মদ আব্দুল মুবীন (অব:), পরিচালক আখতার মাহমুদ রানা, আহমেদ ইসমাইল হোসেন ও ফরিদুর রহমান খান উপস্থিত ছিলেন। মার্চেন্ট ব্যাংক, ব্রোকারহাউজ, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা এতে অংশ নেন।

অনুষ্ঠানে আর্থিক প্রতিবেদন উপস্থাপনের পাশাপাশি ইউপিজিডির ব্যবসা সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন তুলে ধরেন ব্যস্থাপনা পরিচালক মঈন উদ্দিন হাসান রশিদ।

তিনি বলেন, ইউপিজিডি দেশের প্রথম কমার্শিয়াল আইপিপি। এটি মূলত ঢাকা ও চট্টগ্রাম ইপিজেডে বিদ্যুত সরবরাহ করে থাকে। ঢাকায় ৩৫ মেগাওয়াট ও চট্টগ্রামে ৪৪ মেগাওয়াট দিয়ে শুরু করলেও বর্তমানে এটি যথাক্রমে ৮৮ ও ৭২ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করছে। উভয় ইপিজেডে ১০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিক্রির সুযোগ রয়েছে। কমার্শিয়াল আইপিপি হওয়ায় অন্যান্য আইপিপি থেকে তাদের কিছু বাড়তি সুবিধা রয়েছে। সাধারণ আইপিপিগুলোকে সরকারের বেঁধে দেওয়া দরে উৎপাদিত পুরো বিদ্যুত তাদের কাছে বিক্রি করতে হয়। কিন্তু কমার্শিয়াল আইপিপির যে কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে বিদ্যুৎ বিক্রি করার স্বাধীনতা রয়েছে। তাই বিদ্যুতের ভালো দাম পাওয়া যায়।

রাতের বেলা বিদ্যুৎ উৎপাদন করে তা ইপিজেডের বাইরের প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করতে শুরু করেছেন তারা। মঈন উদ্দিন হাসান রশিদ বলেন, উৎপাদন ক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার ও মুনাফা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছেন। রাতের বেলায় ইপিজেডের প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকে বলে বিদ্যুতের তেমন চাহিদা থাকে না। এতে ইউপিজিডির উৎপাদন ক্ষমতা অব্যবহৃত থেকে যায়। এমন অবস্থায় জেনারেটরগুলোকে অলস ফেলে না রেখে রাতের বেলা বিদ্যুৎ উৎপাদন করে তা ইপিজেডের বাইরের প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করতে শুরু করেছেন তারা। এর ব্যাপ্তি বাড়াতে তারা ৫৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করেছেন। দেশে ইউপিজিডি ছাড়া আর কোনো বেসরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানির নিজস্ব সঞ্চালন লাইন নেই।

ইউপিজিডির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, দুই ইপিজেডের বিদ্যুৎকেন্দ্রে ১৭টি বড় ইঞ্জিন (জেনারেটর) রয়েছে। এর সাতটিতে বয়লার বসানো হয়েছে। এসব বয়লার থেকে উৎপাদিত বাস্পের ২৫ শতাংশ বিভিন্ন টেক্সটাইল মিলের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। উৎপাদন ক্ষমতাকে পরিপূর্ণভাবে কাজে লাগাতে আগামিতে তারা স্টিমকেন্দ্রিক কারখানা স্থাপনের সম্ভাব্যতা খতিয়ে দেখবেন।

পরীক্ষামূলকভাবে ২৫ কোটি টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে
কোম্পানির অবণ্টিত মুনাফা (জবঃধরহ ঊধৎহরহমং) খুবই কার্যকরভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ব্যাংকের মেয়াদি আমানতের সুদ হারে এই তহবিল থেকে ইউনাইটেড গ্রুপের বিভিন্ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া এ তহবিল থেকে পরীক্ষামূলকভাবে ২৫ কোটি টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়তে পারে বলে জানান ইউপিজিডির ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

তিনি বলেন, সরকার যে ১০০ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সেখানেও ইউপিজিডির বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার সুযোগ আসতে পারে। ইতোমধ্যে অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের আহ্বানে তারা মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতা বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের একটি প্রস্তাব জমা দিয়েছেন।

উল্লেখ, গত ১৮ এপ্রিল মঙ্গলবার ইউপিজিডির পরিচালনা পর্ষদ তৃতীয় প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন করে। আলোচিত প্রান্তিকে কোম্পানিটি শেয়ার প্রতি আয় ৩ টাকা ৪ পয়সা আয় করে। গত বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে কোম্পানির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ২ টাকা ৫৩ পয়সা। তৃতীয় প্রান্তিকে আগের বছরের তুলনায় ইপিএস বেড়েছে ৫১ পয়সা বা ২০.১৫ শতাংশ। তিন প্রান্তিকে কোম্পানির ইপিএস হয়েছে ৮ টাকা ৮৫ পয়সা। গত বছরের একই সময়ে এটি ছিল ৭ টাকা ৯১ পয়সা। এ হিসেবে আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির ইপিএস বেড়েছে ৯৪ পয়সা বা ১১.৮৮ শতাংশ।
আজকেরবাজার:এলকে/আরআর/২০ এপ্রিল,২০১৭