ইনটেনসিভ ফিস কালচারে মাছ উৎপাদন বাড়বে দশ গুণ

‘আমাদের তো অনেক জাতের মাছ আছে দেশে, যেসব মাছের মধ্যে কিন্তু অনেকগুলোই খাল-বিলে হচ্ছে, এগুলো আমরা হারভেস্ট করি। অনেক মাছ যেগুলো খাল-বিলে হয়, সেগুলোর চাষ পদ্ধতি মানুষ শিখে ফেলেছে। আমি রিসেন্টলি ময়মনসিংহ গিয়েছিলাম, সেখানে ক্ষুদ্র কুটির সংস্থার একটা অঞ্চল আছে, ওই অঞ্চলে একটা শেডের নিচে চারটা দশ কিউবিক মিটার ভেসেলের ভেতরে চাষ করছে। ট্যাংরা মাছ এবং ছোট ছোট কিছু মাছ চাষ করছে। এবং এখানে তাদের ধারণা একটা দশ কিউবিক মিটারের একটা চেম্বার থেকে মাছ পাওয়া সম্ভব হবে প্রায় চারশো থেকে পাঁচশো কেজি। হেক্টরে হিসাব করলে এটা প্রায় দেড়শো টন হয়ে যায়। তার মানে আমি যে গল্পটা বলছিলাম, ইজরাইল বা অন্য দেশের কথা, প্রায় সেইম প্রসেস এটা। টেকনোলজিটা কানাডা থেকে আনা হয়েছে। এ কাজগুলো কিন্তু শুরু হয়েছে। তো এই কাজগুলো আস্তে আস্তে আরো বাড়াতে হবে। ব্যাপকভাবে প্রচার করতে হবে। পুকুর কেটে মাছ চাষ না করে, বাড়ির ভেতরে সুন্দর করে ইনটেনসিভ ফিশ কালচার করলে কিন্তু প্রোডাকশন অনেক বেশি পাওয়া যায়। এই কাজ এখনই শুরু করা যেতে পারে। পুকুর না করে বাড়িতে দশ কিউবিক মিটার ভেসেলের ভেতরে পানিগুলোকে সাইকেল এবং ফিল্টার করে যদি সার্বক্ষণিক পানি দেওয়া হয়; খাবার দেওয়া হয়, তাহলে কিন্তু মাছের উৎপাদন অনেক বাড়বে। এবং ভালো মানের মাছও পাওয়া যায়’- বলেছেন এসিআই এগ্রি বিজনেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও এসিআই লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক ড. এফ এইচ আনসারী। আজকের বাজার ও আজকের বাজার টেলিভিশন এবিটিভির কাছে বাংলাদেশের পক্ষে যে মাছ উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ স্থান অর্জন করা সম্ভব সেই গল্প বলেছেন। তাঁর সঙ্গে কথপোকথনের চুম্বক অংশ তাঁরই ভাষায় প্রকাশ করা হলো।

বিশ্বে মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান
মাছ উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান বর্তমানে চতুর্থ। তবে আমার মনে হয় প্রথম হওয়ার ক্ষমতা আছে। বাংলাদেশের মানুষ মাছ ভাত খায়। আর যেহেতু মার্কেট আছে, সেহেতু মানুষ ট্রাই করেছে এবং এটাকে যত বড় করে নেয়া যায়, সেটা চেষ্টা করেছে। আমরা যদি দেখি পাঁচ বছর বা ছয় বছর আগের কথা, তখন আমাদের দেশে মাছের প্রধান সোর্স ছিল খাল-বিল, নদী এবং সমুদ্র। আমাদের দেশের মানুষ সমুদ্রের মাছ খুব একটা খায় না। এখন যেটা এত বছর পরে রিভার্স হয়ে গেছে, এখন মাছের সোর্স হচ্ছে পুকুর, ৫৫% মাছ আসছে পুকুর থেকে, যে সমস্ত পুকুরে মানুষ মাছ চাষ করে সেখান থেকে। যেহেতু চাষ করে কিন্তু মাছ উৎপাদন করছে এবং এখানে চাষের মাছের গ্রোথ ভালো হচ্ছে, যার কারণে ওভারঅল গ্রোথে যেয়ে দেখা গেল যে, পৃথিবীতে মাছ উৎপাদনে আমরা চতুর্থ হয়ে গেলাম। বাংলাদেশে আমরা প্রায় ৩৭ লক্ষ টন মাছ উৎপাদন করতে পারছি । কিন্তু এর পেছনে যদি আমরা তাকিয়ে দেখি যে, কত বড় জায়গাতে করছি? কীভাবে করছি? কত খরচে করছি? এর ছবিটা কিন্তু একটু আলাদা। আমরা যদি দেখি যে খাদ্য গ্রহণের অনুপাত, অর্থাৎ এক কেজি তেলাপিয়া মাছ করতে গেলে বাংলাদেশে ১.৭ কেজি খাবার লাগে। অথচ যদি আমরা থাইল্যান্ডের কথা বলি, তারা কিন্তু ১.৩ কেজি খাবারে এক কেজি মাছ করে ফেলছে। আর যদি দেখি আরও ইনটেনসিভ কালচার, অন্যান্য দেশে যেমন ইজরাইল অথবা পোল্যান্ডের কথা ভাবি, তারা ১.১ কেজি খাবারে এক কেজি মাছ করে ফেলছে। এই যে পার্র্থক্য, এখন দেখার বিষয় হলো, যারা ১.১ কেজি খাবারে করছে, তাদের লাভ নিশ্চয়ই অনেক বেশি হচ্ছে। আর যারা ১.৭ কেজি খাবারে করছে, তাদের তো প্রফিট কমে যাচ্ছে। কারণ খাবারের দাম যথেষ্ট বেশি। আবার যখন মাছের উৎপাদন কম হচ্ছে, তখন অনেক বেশি জায়গায় মাছ করতে হচ্ছে যেহেতু মাছের ভালো বাজার আছে। তাহলে ইস্যুটা হলো এই, যে পরিমাণ মাছ আমরা এখন উৎপাদন করছি, ওই একই পরিমাণ মাছ আমরা আরও কম জায়গায় করতে পারতাম কি না? এই প্রশ্ন কিন্তু থেকে যায়। শুধু তেলাপিয়া নয়, সব জাতের মাছের বেলাতেই কিন্তু একই অবস্থা। আমরা যদি পাঙাশের কথা বলি, পাঙাশেরও একই অবস্থা। রুই, কাতলাসহ সব জাতের মাছের বেলাতেই আমাদের ফুড কনজাম্পশন রেশিও অনেক বেশি, মানে অনেক বেশি খাবার দিয়ে, অনেক কম মাছ উৎপাদন করা হচ্ছে। তারপর হলো, হেক্টর প্রতি মাছের উৎপাদন কত? আমাদের দেশে প্রতি হেক্টরে তেলাপিয়া হয় গড়ে ১২-১৩ টন, অথচ থাইল্যান্ডে হয় ২৫ টন। আবার একই জিনিস প্রায় ১৫০ টন হয় পোল্যান্ডে বা ইজরাইলে, এটা হলো ইনটেনসিভ ফিশ কালচার বা নিবিড় মাছ চাষ।

পোল্যান্ডে অবশ্য সারা দেশে হয় না, দুই একটা ল্যাবরেটরি আছে যেখানে হচ্ছে। এখন ইস্যুটা হলো, যারা কম জায়গায় বেশি মাছ চাষ করছে, তাদের কস্ট অব প্রোডাক্ট কিন্তু অনেক কমে যাচ্ছে। যেমন, জমি কম লাগছে, খাবার কম লাগছে। অনেক বেশি জায়গায় গেলে মাছের ওয়েস্টেজ বাড়ছে, নষ্ট হচ্ছে, মর্টালিটি বেড়ে যাচ্ছে। এই যে ডিফারেন্স আছে, যার কারণে আজকে যে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, গ্লোবালি বাংলাদেশের মাছ কিন্তু খুব একটা কম্পিটিটিভ হচ্ছে না। কস্ট অব প্রোডাক্টস অনেক বেশি হওয়াতে আমরা কম দামে মাছ বেঁচতে পারি না এবং কোয়ালিটি মাছ দিতে পারি না, এসব কারণে আমাদের মাছ খুব একটা দেশের বাইরে যাচ্ছে না। আপনি যদি মিয়ানমারের মতো দেশের কথা চিন্তা করেন, যেখানে টেকনোলজি নাই, সেখানে ওরা খাল-বিল, নদী-নালা থেকে মাছ হারভেস্ট করে ওই মাছ প্যাকেট করে বিক্রি করে, ওই কারণে ওদের মাছের মার্কেটটা আস্তে আস্তে অনেক বড় হয়েছে । থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়ার মাছের মার্কেট বড় হচ্ছে, এভাবে বহু দেশ মাছ উৎপাদনে এগিয়ে যাচ্ছে। এখন আমরা মাছ উৎপাদনে চতুর্থ থাকাটা বুঝলাম, একটা গর্বের ব্যাপার, দেশের ব্র্যান্ডের ব্যাপার। কিন্তু অভ্যন্তরীণভাবে আমি একজন কৃষক। আমি যদি কম খরচে মাছ চাষ করতে না পারি, আমি না পারবো কম খরচে বেঁচতে, আর যে দামে আমি বিক্রি করবো, সেই দামে তো আমার লাভ হবে না। তখন মাছ চাষে আমার উৎসাহ দিন দিন শেষ হয়ে যাবে। হয়তো যতটা আমরা এগিয়েছি, ততটা আবার পেছাতে শুরু করতে হবে। এবং যখন বাংলাদেশে মাছের চাহিদা তেমন থাকবে না, তখন কিন্তু দেশের বাইরের কথা চিন্তা করতে হবে। আস্তে আস্তে যেখা যাবে, আমাদের যতটুকু মাছের দরকার, ততটুকু উৎপাদন হয়ে গেছে। তারপর কিন্তু চাষিরা আর খুব বেশি উৎপাদন করবে না, কারণ দাম কমে যাবে। তখন তো বাইরের মার্কেট দেখতে হবে। তার জন্য লাগবে কোয়ালিটি মাছ। কোয়ালিটি মাছের জন্য পুকুরের তলার পানি স্বাস্থ্যকর হতে হবে, যথেষ্ট অক্সিজেন থাকতে হবে, খাবারের কোয়ালিটি ভালো হতে হবে, মাছের গ্রোথ ভালো হতে হবে, মাছের বডিতে যে ফাইবার আছে সেটা ভালো হতে হবে, তাহলেই কিন্তু আমরা ভালো একটা ব্যবসা করতে পারবো। তাই বিশ্বে চতুর্থ হওয়া একজন কৃষকের অবস্থার সাথে খুব একটা যোগ নাই, বরং পুরো ব্যাপারটা একেবারে ডি-লিঙ্কড । আমি একজন কৃষক, মাছ চাষ করেও আমি এতটা বেশি প্রফিট আর্ন করতে পারি নাই। যেখানে বাংলাদেশ মাছ উৎপাদনে পৃথিবীতে চতুর্থ দেশ, সেখানে আমার লাভ অনেক বেশি হওয়া উচিত ছিলো -এটাই ভাবা উচিত মানুষের।

তাহলে করণীয় কী
অবশ্যই আমাদের মাছ চাষের উন্নত টেকনোলজি দিতে হবে মানুষকে, শেখাতে হবে। মাছের জন্য ভালো মানের খাবার দিতে হবে। এ ব্যাপারে ট্রেনিং দিতে হবে মানুষকে, ইনটেনসিভ মাছ কালচারের চর্চা করতে হবে, সেমি-ইনটেনসিভ মাছ কালচার বাড়াতে হবে। তখন দেখা যাবে যে, উৎপাদনশীলতা অনেক বেড়ে যাবে, আবার এতে করে মাছের গুণগত মান অনেক ভালো হবে। অনেক কম জায়গায় আজ যে পরিমাণ মাছ উৎপাদন হচ্ছে, একই পরিমাণ জায়গায় আরও বেশি মাছ উৎপাদন করা যাবে।

আমাদের দেশে গবেষণায় মানে যা যা বলছি, এর কতটা করা সম্ভব ? এসিআই এগ্রি-বিজনেস এখনও কতটুকু করতে পেরেছে?
সবই করা সম্ভব। আমরা দেখলাম যে, মাছ যে জায়গায় করে, সেটা একটা পুকুর। পানি আছে, পানিটা বদ্ধ পানি। এখন নিয়মিতভাবে যেখানে খাবার দিচ্ছি, মাছের পেটের মধ্যে অনেক খাবার যাচ্ছে, অনেক খাবার কিন্তু পানির নিচে যেয়ে পঁচে যাচ্ছে। যখন পানির নিচে মাটিতে গিয়ে পঁচে যায়, তখন অক্সিজেনের অভাব হয়, সেখানে মাছ থাকতে পারে না। আবার অনেক সময় আমরা কি করছি, মাছের খাবার যেটা দিচ্ছি, সেই খাবারটা প্রোটিন নয়। অথচ যে মাছটা আছে, ভেসে ভেসে মাছ প্রোটিন-খাবারটা খেতে পারে। যখন ওই খাবার পানির নিচে চলে যাচ্ছে, তখন খাবার অপচয় হচ্ছে। কৃষকের ক্ষতি হচ্ছে। আবার অনেক খাবার দিচ্ছি, যেটা খুব বেশি পুষ্টিকর নয়। মাছ খাচ্ছে কিন্তু স্বাস্থ্য বাড়ছে না।

আবার অনেক পুকুরে যেটা হচ্ছে, মাছের শরীর থেকে যে সমস্ত বর্জ্য বেরিয়ে যাচ্ছে, সেগুলো পানির নিচে গিয়ে জমা হচ্ছে। সেখানে হাইজিন কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ। এই হাইজিন শেখার জন্য আমরা কি কিছু করেছি? আমরা প্রোডাক্ট এনে দিয়েছি এবং শিখিয়েছি, কি করে পুকুরের তলার পানি পরিষ্কার রাখা যায় এবং অক্সিজেন লেভেলটা ঠিক রাখা যায়? আবার মাছের স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য মাছের গায়ে যাতে ব্যাকটেরিয়া বা প্যারাসাইট না জন্মায়, সেখানে ওভারঅল হাইজিন ইমপ্রুভ করার চেষ্টা করেছি। এসব বিবেচনায় আমরা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মাছের খাবারের ফ্যাক্টরি করেছি।

এসিআইয়ের কারখানা
যেখানে আমরা সবচেয়ে বেশি, প্রতিদিন প্রায় চল্লিশ মেট্রিক টন মাছের খাবার উৎপাদন করতে পারি এবং যে ফ্যাক্টরি করেছি, টপ ক্লাস ফ্যাক্টরি ইন দিস কান্ট্রি। তারপর যে সমস্ত মাছ ভেসে থাকা খাবার খায় তার জন্য খাবার বানিয়েছি, পানির মাঝামাঝি স্তরের খাবার খায় তার জন্য খাবার বানিয়েছি, নিচের স্তরের খাবার খায় তার জন্যও খাবার বানিয়েছি। লেটেস্ট টেকনোলজিটা আমরা যেটা করেছি, সেটা হলো ই-ফিশারি। একজন কৃষক, বাড়িতে তার মোবাইল ফোন আছে। যে পুকুরে সে মাছ চাষ করে, ওখানে বড় একটা বাকেটে মাছের খাবার থাকবে। ওখানে রিমোট কন্ট্রোল সেন্সর আছে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমেই সে জানতে পারবে পানির তাপমাত্রা কত, মাছের মুভমেন্ট কেমন, মাছের মুভমেন্ট দেখে বুঝতে পারবে যে মাছের কতটা খাবার দরকার, কমান্ড দিলেই তখন খাবার ঝরঝর করে পড়া শুরু করবে। মাছ আসবে, যেটুকু খাবার দেওয়া হবে তার সবটুকু খেয়ে ফেলবে। ওয়েস্ট হয়ে নিচে গেল না, পানি কনটামিনেটেড হলো না। পাশাপাশি মাছ পর্যাপ্ত খাবার পেল। যখন খাবার দরকার, তখন দিল; যতটুকু খাবার দরকার, ততটুকু দিল। এতে লাভ হলো এই যে, এফসিআর (ফুড কনজাম্পশন রেশিও) ইমপ্রুভ হলো। এই পদ্ধতিতে গেলে ১.২ বা ১.৩ কেজি খাবারে কিন্তু আপনি এক কেজি মাছ চাষ করতে পারবেন। এক কেজি মাছের খাবারের দাম ৪৫ টাকা। ১.৮ কেজি মাছের খাবারের দাম ৫৫-৫৬ টাকা। সেটা যদি ১.২-১.৩ হয়, তাহলে খরচটা কমে আসবে ৪৮-৫০ টাকাতে। লাভ হবে, কৃষক যদি কম দামেও মাছ বিক্রি করে, তাহলে তার লাভ হবে। একদিকে লাভ হলো, আরেকদিকে মাছের গ্রোথটা ভালো হলো, আরেকদিকে পানির কোয়ালিটিও ভালো থাকলো, পঁচা গন্ধ হলো না, ফলে উৎপাদকেরা ভালো কোয়ালিটির মাছ উৎপাদন করতে পারবে।

এই প্রযুক্তি কতদিন থেকে চালু হয়েছে
মাত্রই এটা নিয়ে এসেছি, সম্পূর্ণ নতুন টেকনোলজি এবং পুরো হাই-টেক একটা বিষয়। চলতি বছর এবং এই মাসেই টেকনোলজিটাআমরা শুরু করছি এরইমধ্যে আমাদের ডেমোনেস্ট্রেশন করা হয়ে গেছে ।

এটার দাম কেমন
দাম বেশি না, পুরো সিস্টেমটার দাম ৭০-৮০ হাজার টাকা । এই ৭০-৮০ হাজার টাকা পে করে যদি সিস্টেমটা কেউ কেনে, তাহলে যতটুকু জায়গায় সে সিস্টেমটা ব্যবহার করবে, ১০০ দিনে পুরো দামটা উঠে আসবে। আমরা এভাবেই প্রাইসিং করেছি।

কতটুকু জায়গা দরকার
জায়গা বেশি না, জাস্ট লাইক একটা ড্রাম। একটা ড্রাম, স্ট্যান্ড দিয়ে পুকুরের মাঝখানে বা কোনও এক কোণায় রাখা হবে।

যদি একটা এক বিঘার বড় পুকুর হয়, তাহলে হয়ে যাবে
এক বিঘার পুকুরে হয়তো এরকম ২টা বা ৩টা মেশিন লাগবে, কারণ এটা যদি বিভিন্ন জায়গায় ডিস্ট্রিবিউট করে, তাহলে মাছের মধ্যে লড়াই হবে না। খাবারটা যথাযথভাবে ডিস্ট্রিবিউট করতে পারবে। একটাতেও সার্ভিস হতে পারে, কিন্তু দুই বা তিন জায়গায় দিলে ইজিলি মাছের পক্ষে গ্রহণযোগ্য হবে খাবারটা। এই প্রযুক্তির সুফল এখনও কৃষকেরা পায়নি, তবে পাবে বলে আমরা আশা করছি। এটা গেল একটা দিক। আমরা এতকিছুর পরেও বাংলাদেশ মাছ উৎপাদনে চতুর্থ হওয়ার পরেও আমরা বাজারে দেখতে পাই প্রচুর বিদেশি মাছ। বিদেশি মাছ বলতে আমরা যারা বিক্রেতা তাদের কাছ থেকে শুনি, কোনওটা মিয়ানমারের মাছ, কোনওটা ইন্ডিয়ার মাছ। রুই মাছ বা পাঙাস মাছও আমরা দেখতে পাই। এটার কী কারণ?

আমি আলোচনার শুরুতেই যে কথাটা বলছিলাম, মায়ানমার যদিও একটা রিমোট কান্ট্রি, তারপরও মাছ উৎপাদনে তারা কিন্তু যথেষ্ট টেকনোলজি ব্যবহার করে এবং তাদের মাছের কোয়ালিটি অনেক ভালো এবং তারা অনেক কম খরচে মাছ উৎপাদন করতে পারে। এ কারণে কিন্তু গ্লোবাল মার্কেটে মিয়ানমারের একটা ভালো জায়গা হয়ে গেছে। একইভাবে বাংলাদেশে মিয়ানমার থেকে মাছ আসার কারণ হলো দামে কিন্তু কম্পিটিটিভ হচ্ছে। ঠিক একইভাবে ভারতেও একই অবস্থা তৈরি হয়েছে, যার জন্য তারা কিন্তু মাছ উৎপাদন করা শিখে ফেলেছে এবং অত্যন্ত সুন্দরভাবে তারা মাছ উৎপাদন করে কম খরচে বাংলাদেশেও এক্সপোর্ট করছে। একসময় আমরা এক্সপোর্ট করতাম, এখন ওরা এক্সপোর্ট করা শুরু করেছে। প্রসঙ্গক্রমে বলি, আমাদের তো এই ফিশারিজ ডিপার্টমেন্ট, গভর্নমেন্ট এই জায়গাগুলো তো অনেক উন্নত হয়েছে বলে আমরা মনে করি।

আসলে এই জায়গাগুলো গভর্নমেন্টের এগ্রিকালচার ডিপার্টমেন্ট, ফিশারিজ ডিপার্টমেন্ট, তাদের ইনোভেশন, তাদের প্রচেষ্টা, তাদের উদ্যোগগুলো কিভাবে কাজে লাগানো যায়?
বাংলাদেশে সরকারি উদ্যোগে মাছ চাষের অনেক উন্নতি হয়েছে, এটা সত্যি। কিন্তু এটাও ঠিক যে প্রাইভেট পর্যায়ে ফিশারিজ সেক্টরে যে উদ্যোগটা নেওয়া হয়েছে, মাছ উৎপাদন প্রক্রিয়া প্রায় পুরোটাই কিন্তু প্রাইভেটাইজড। এবং আমাদের দেশের কৃষক নিজেরা চেষ্টা করে, বাইরে গিয়ে বাইরের প্রযুক্তি থেকে শিখে, কোম্পানিগুলো, আমরা যেভাবে শিখিয়েছি, এখান থেকেও কিন্তু ওরা অনেক কিছু শিখেছে। এসব কারণে মাছে ওভারঅল একটা গ্রোথ আসছে। কিন্তু যে হারে আসছে, আমি মনে করি আরও বেশি ও দ্রুত আসা উচিত। সেক্ষেত্রে সরকার কিন্তু অনেক সহায়তা করতে পারে। সরকারের সহায়তার মধ্যে আমি বলছি না, টাকা-পয়সা দিন। সরকারের যেহেতু অনেক এক্সপেরিয়েন্সড ও ব্রিলিয়ান্ট সায়েন্টিস্ট আছেন, সম্প্রসারণ কর্মী আছেন। এদের যদি টেকনিক্যাল সাপোর্ট দেয়া হয়, এদের যদি যন্ত্রপাতি দেওয়া হয়, কমিউনিকেশন ইক্যুইপমেন্ট দেয়া হয়, তাহলে কী হবে? এরা একসঙ্গে অনেক কৃষকের সাথে কন্টাক্ট করতে পারবে। অনেক দ্রুত কাজ এগোবে। এখন যে স্লো মোশনে যাচ্ছে, এর থেকে অনেক ফার্স্ট হবে। আর এই কাজটা করা খুব ইমপর্ট্যান্ট এবং অত্যন্ত জরুরি। এছাড়া সরকারের যারা সম্প্রসারণে আছেন ফিশারিজ ডিপার্টমেন্টে অথবা রিসার্চে তাদেরও প্রাইভেট কোম্পানির সঙ্গে কাজ করা উচিত। কারণ, প্রাইভেট কোম্পানি কি করছে? তারা বাইরে থেকে নতুন নতুন টেকনোলজি নিয়ে আসছে। অনেক ফার্স্ট এ সমস্ত টেকনোলজি আনছে এবং এসব টেকনোলজি কিন্তু আমাদের দেশের কৃষক ব্যবহার করছে। এই ব্যবহার যদি সরকারি বিভাগগুলোর সঙ্গে জয়েন্টলি করা হতো ফল আরও ভালো হতো। যেহেতু সরকারের জনবল আছে আর প্রাইভেট কোম্পানির লোকজন আছে, টেকনোলজি আছে। এক সঙ্গে গেলে হতো কী, অনেক সহজে কিন্তু টেকনোলজিটা পেনিট্রেট করতো।

সে রকম মনোভাব কি আছে?
মনোভাব আছে কিন্তু সেটা হলে এতদিনে বাজেট থাকতো অনেক বড়। এদের মটরসাইকেল লাগবে, এদের ফুয়েল লাগবে, এদের টি.এ- ডি.এ. লাগবে। এদের অনেক কমিউনিকেশন ইক্যুইপমেন্ট দিতে হবে। এদের অনেক প্রোগ্রাম করার মতো যন্ত্রপাতি দিতে হবে। তাহলে তো তারা অ্যাক্টিভেট হতে পারবে। এরা তো আর নিজের স্যালারি, নিজের টাকা-পয়সা খরচ করে এগুলো করবে না। এদের অ্যাপ্রিশিয়েট করতে হবে, এদেরকে প্রোমোট করতে হবে। সবমিলিয়ে এই কাজগুলো কিন্তু করতে হবে। আমাদের যেটা প্রবলেম হয়েছে যে, আমাদের কৃষক পুরোপুরিভাবে আমাদের স্থানীয় ডিলারদের উপর এবং কোম্পানির উপর নির্ভরশীল হয়ে যাচ্ছে। কোম্পানির লোকজন সবাই কিন্তু একইভাবে একই অনুপ্রেরণায় কাজ করে না। অনেকেই মনে করে, যেটা কৃষক চাচ্ছে, তার কাছে যেটা আছে, তাই দিয়ে দিচ্ছে। বাস্তবে যা প্রয়োজন, তা দিচ্ছে না। তবে অনেক কোম্পানি অনেক সুন্দর সামাজিক একটা ম্যান্ডেট নিয়ে কাজ করে। সবক্ষেত্রে তো এটা হয় না। এই কারণে আমি মনে করি, যেহেতু সরকারের ম্যান্ডেট হচ্ছে সমাজ, দেশের মানুষকে সাপোর্ট দেওয়া। সেক্ষেত্রে সরকারি কর্মকর্তাদের এই সাপোর্টগুলো দিলে তারা যদি প্রাইভেট কোম্পানিগুলোর সাথে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করে, ভালো টেকনোলজি অনেক তাড়াতাড়ি পেনিট্রেট করবে এবং আমরা অনেক সস্তায় মাছ উৎপাদন করতে পারবো। আমাদের মাছের কোয়ালিটি অনেক সুন্দর হবে। মানুষ এসে বলবে না চাষের মাছ না নদীর মাছ, এ কথাটা আর বলবে না। কারণ, চাষের মাছের কিন্তু টেস্ট ভালো হওয়া উচিত। চাষের মাছে কিন্তু নিউট্রিশন বেশি থাকার কথা এবং চাষের মাছের স্বাদও ভালো হওয়া উচিত কারণ চাষের মাছকে কিন্তুভালো খাবারটা দেওয়া হয়। আর নদী-নালাতে যে সমস্ত মাছ হয়, অক্সিজেনটা ভালো পায়। আজকাল সেটাও ভালোভাবে পায় না, কারণ নদীর পানি দূষিত হয়ে গেছে, অনেক সময় খাবারও ঠিকমতো পায় না। তাই চাষের মাছেরই কিন্তু কোয়ালিটি ভালো হওয়ার কথা এবং চাষের মাছই মানুষের খাওয়া উচিত। অথচ আমাদের দেশে উল্টোটা হয়ে গেছে এবং এটাও প্রোমোট করা হচ্ছে।

নদীর কথা বলছিলাম, আমরা কি কোনও ভাবে আমাদের দেশের নদীগুলোকে মাছ উৎপাদনের জন্য ব্যবহার উপযোগী বা এই যে চাষের মাছের কথা এসেছে, কোনওভাবে কাজে লাগাতে পারি কি না?
অবশ্যই কাজে লাগানো যাবে। কারণ আমাদের দেশে এত বেশি নদী, এত খাল-বিল, এত পানি, বর্ষার সময় প্রায় চল্লিশ ভাগ জায়গা ডুবে থাকে। এখন আমাদের দেশে তো নিশ্চয়ই লিমিটেশন আছে বাজেটের। আমরা তো আর ফ্লো বাড়াতে পারবো না। কারণ মাছ চাষের প্রস্পেক্টিভ এ যদি আমরা বলি, তাহলে কি করতে পারবো? আমাদের বাড়ির আশেপাশে যে সমস্ত ছোট-ছোট চৌবাচ্চা বা পুকুর আছে যেগুলো শুকিয়ে যায় দেড়-দুই মাসে, সেখানে মাছের পোনা ছেড়ে দিলাম। ছেড়ে দেয়ার পর মাছের পোনাগুলো একটু বড় হলো। এক কেজি তেলাপিয়ার কথাই বলি, এক কেজিতে হয়তো ১৫-১৬ টা হচ্ছে এরকম অবস্থা হলে, ততদিনে কিন্তু পানি কমতে শুরু করলো। এখন এই তেলাপিয়া মাছগুলোকে যদি আমরা নেট-কেইজিং করি, যে সমস্ত জায়গাতে নদী বা খাল আছে, কেজগুলোকে ওই সব জায়গাতে নামিয়ে দিলাম। আর ওখানে কিন্তু প্রোটিন ফিড দিলাম। কি হবে? ওদিকে ফ্লো আছে পানির, অক্সিজেন পেলো আর হাই কোয়ালিটির ফুড পেলো। মাছগুলোর গ্রোথ অনেক বেশি হবে, টেস্ট অনেক ভালো হবে। অনেক হাই কোয়ালিটির মাছ হবে। লাভ হবে এই যে, নদীর সমস্ত মোহনা বা নদীগুলো অনেক ব্যাপকভাবে ব্যবহার হবে এবং আমাদের মাছ উৎপাদনে অনেক বেশি হেল্পফুল হবে এই কেইজ ফিশিং করে। এটা কিন্তু আমরা প্রোমোট করতে পারি।

এই কেইজ ফিশিং কি ইতোমধ্যে আমরা কোথাও করেছি?
করা হয়েছে কিন্তু এভাবে বাণিজ্যিক ওয়েতে অনেক সুন্দরভাবে সিসটেম্যাটিক্যালি এটা করা হয়নি। থাইল্যান্ডে ব্যাপকভাবে করা হয়, যার কারণে থাইল্যান্ডের মাছের কোয়ালিটি অনেক ভালো। কারণ, আপনি একটা জিনিস দেখেন, প্রতিনিয়ত যদি পানিতে অক্সিজেন ফ্লো করে, আর কেজের মধ্যে যদি মাছ থাকে, আর আপনি যদি কনটিনিউয়াসলি প্রোটিন ফিশ ফিড দেন, একদিকে অক্সিজেন পেলো একদিকে খাবার পেলো। মাছটার গ্রোথ তো অনেক সুন্দর, অনেক ভালো হবে। মাছের কোয়ালিটিও অনেক সুন্দর হবে। তখন আর কেউ বলবে না, এটা চাষের মাছ। তখন বলবে, এই মাছটাই দাও, চাষের মাছটাই দাও, কারণ খেয়ে তো টেস্ট পেয়েছে। বাচ্চাকে খাওয়াতে মেধাশক্তি বেড়েছে, নিজে খাওয়াতে তার হেলথ গ্রো করছে, এটা কিন্তু করা উচিত। মাঝখানে একটা বন্যা হয়ে গেল অনেক বড়, হবিগঞ্জ এরিয়াতে। আমরা ধান-ধান করছি, কিন্তু আমরা যদি বলতাম, এখানে বন্যা প্রায়ই হয়, প্রতি বছরই হয়। বন্যা না হলেও কিন্তু পানি থাকে। আমরা যদি কৃষককে শিখাই যে, এখানে কেইজ ফিশিং করবো। বন্যা আসার আগে ছোট জায়গাতে এই পোনাগুলো ছেড়ে দেওয়া হলো, পোনাগুলোর গ্রোথ হলো। বন্যাতে ডুবে গেল, কেইজের মধ্যে মাছগুলো দিয়ে দিলাম। বন্যার পানি দুই-তিন মাস থাকে। ততদিনে খাবার-টাবার দিয়ে মাছগুলোকে যদি বড় করে বিক্রি করি, তাহলে এক একর জমিতে আপনার যে ধান উৎপাদন হয়, তার অন্তত দশগুন কিন্তু মাছ থেকে ইনকাম করা সম্ভব, এই কাজটা কিন্তু আমাদের শেখানো উচিত। তাহলে আজ কিন্তু মানুষের মাথায় হাত দিয়ে বসতে হয় না।

তাহলে কি আমরা ধান উৎপাদন করবো না?
ওই জায়গাতে ধান উৎপাদন করবো না। আমার যেখানে ধান হয়, উঁচু জায়গা আছে, সেখানে ভালো টেকনোলজি দিয়ে, ভালো বীজ দিয়ে, মানে ভালো উৎপাদনশীল ধান দিলাম। তখান কিন্তু অর্ধেক জমিতে ধান করলেই আমাদের জন্য যথেষ্ট। বাকি জায়গাগুলো যেখানে গর্ত, সেখানে আমি মাছ চাষ করলাম। আর উঁচু জায়গা কেটে গর্ত বানিয়ে এখন মাছ চাষ করছি, সেগুলো করলাম না। তখন দেখা গেল যে, খুব বেশি একটা এনভায়র্নমেন্টাল মুভমেন্ট না করিয়েও কিন্তু ভালো ভালো মাছ উৎপাদন করা সম্ভব।

এটা তো পলিসিতে থাকতে হবে। হয়তো বা পলিসি আছে, অথবা পলিসি নাই -সেটা বড় কথা নয়। এটা প্রোমোট করতে হবে। এটা সরকারকেই প্রোমোট করতে হবে। কারণ এই সব জায়গা তো ডেভেলপমেন্ট অ্যাক্টিভিটিস, সামাজিক কাজ। কোম্পানিগুলো তো চেষ্টা করে তার যেটা ফোকাস, তার যেখানে প্রায়োরিটি, সেখানে কাজ করার। তারা কিন্তু সেগমেন্ট আছে। এসব জায়গাতে যখন ডেভেলপমেন্ট আক্টিভিটিসগুলো যখন সরকার করে ফেলে, সরকারের এটা কাজ। তখন কি হয়? এখানে মাছ চাষের মোটামুটি একটা কালচার তৈরি হয়ে গেল। তখন প্রাইভেট কোম্পানিগুলো ওখানে ভালো ব্রিড নিয়ে গেল, মাছের ভাল পোনা নিয়ে গেল, ভালো খামার নিয়ে গেল, ভালো হাইজিন প্রোডাক্ট নিয়ে গেল, ভালো পদ্ধতি নিয়ে গেল। তখন হলো কি, তারও ব্যবসা হলো, মাছেরও গ্রোথ হলো, সরকারের যেটা পারপাস, সেটাই হলো। আল্টিমেটলি বিজনেসের গ্রোথ হলো, আল্টিমেটলি কৃষকের গ্রোথ হলো, মাছেরও উৎপাদন হলো। এই কাজগুলো কিন্তু করা যায় খুব সহজভাবে। খুব ডিফিকাল্ট কিছু না।

আমরা এত সময় যা আলাপ করলাম তার সবই হলো বড় মাছ বিক্রি বা বড় মাছ উৎপাদন করা নিয়ে। বড় মাছ আসতে হলে তো আমার রেণু মাছ দরকার, ব্রিড দরকার। সেটা কিভাবে করবো আমরা? সেটা করবার জন্য আমাদের কি উপায় আছে?

আমাদের তো যথেষ্ট রেণু উৎপাদন করার জন্য যথেষ্ট হ্যাচারি হয়ে গেছে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গাতে। কিন্তু একটা জিনিস খেয়াল করতে হবে যে, মাছ এমন একটি স্পিসিস, যদি কাছাকাছি প্যারেন্টসের ক্রস হয়, তাহলে কিন্তু মাছের গ্রোথ খারাপ হবে। এই কারণে ডিসটেন্স প্যারেন্ট থাকতে হবে। এই কারণে ব্রুড যেটা, যেটা স্টক, যেখান থেকে প্যারেন্ট তৈরি হয়, সেগুলো একটু খুব কেয়ারফুললি সিলেক্ট করা উচিত। এবং সেক্ষেত্রে আমার মনে হয় যে, অনেক ট্রেনিং দরকার আছে সেখানে, অনেক কালচারের দরকার আছে। এই কাজগুলো করলে হবে কি সুবিধা, আমরা হাই কোয়ালিটির মাছের বাচ্চা পাবো। হাই কোয়ালিটির মাছের বাচ্চা পেলে সুবিধা হবে কি, মাছের গ্রোথটা খুব ভালো হবে। এই টেকনোলজি কিন্তু খুব কঠিন কিছু না। অনেকে করছে, অনেকে করছে না। যারা করছে না, তাদেরকে শেখাতে হবে এবং তাদেরকে প্রোমোট করতে হবে। বলতে হবে যে, মাছ খুব কাছাকাছি প্যারেন্টের সাথে ক্রস করালে ভালো মাছ পাওয়া যায় না।

এখনো কি আমরা মাছ উৎপাদন মানে তেলাপিয়া, পাঙাশ,রুই-কাতলা -এটুকুর মধ্যেই থাকবো নাকি আরও অন্য মাছ নিয়ে আমাদের গবেষণা হচ্ছে?
আমাদের তো অনেক জাতের মাছ আছে দেশে, যেসব মাছের মধ্যে কিন্তু অনেকগুলোই খাল-বিলে হচ্ছে, এগুলো আমরা হারভেস্ট করি। অনেক মাছ যেগুলো খাল-বিলে হয়, সেগুলোর চাষ পদ্ধতি মানুষ শিখে ফেলেছে। আমি রিসেন্টলি ময়মনসিংহ গিয়েছিলাম, সেখানে ক্ষুদ্র কুটির সংস্থার একটা অঞ্চল আছে, ওই অঞ্চলে একটা শেডের নিচে চারটা দশ কিউবিক মিটার ভেসেলের ভেতরে চাষ করছে। ট্যাংরা মাছ এবং ছোট ছোট কিছু মাছ চাষ করছে। এবং এখানে তাদের ধারণা একটা দশ কিউবিক মিটারের একটা চেম্বার থেকে মাছ পাওয়া সম্ভব হবে প্রায় চারশো থেকে পাঁচশো কেজি। হেক্টরে হিসাব করলে এটা প্রায় দেড়শো টন হয়ে যায়। তার মানে আমি যে গল্পটা বলছিলাম, ইজরাইল বা অন্য দেশের কথা, প্রায় সেইম প্রসেস এটা। টেকনোলজিটা কানাডা থেকে আনা হয়েছে। এ কাজগুলো কিন্তু শুরু হয়েছে। তো এই কাজগুলো আস্তে আস্তে আরো বাড়াতে হবে। ব্যাপকভাবে প্রচার করতে হবে। পুকুর কেটে মাছ চাষ না করে, বাড়ির ভেতরে সুন্দর করে ইনটেনসিভ ফিশ কালচার করলে কিন্তু প্রোডাকশন অনেক বেশি পাওয়া যায়। এই কাজ এখনই শুরু করা যেতে পারে। পুকুর না করে বাড়িতে দশ কিউবিক মিটার ভেসেলের ভেতরে পানিগুলোকে সাইকেল এবং ফিল্টার করে যদি সার্বক্ষণিক পানি দেওয়া হয়; খাবার দেওয়া হয়, তাহলে কিন্তু মাছের উৎপাদন অনেক বাড়বে। এবং ভালো মানের মাছও পাওয়া যায়।

এসিআই এগ্রিবিজনেসের পক্ষ থেকে এ ধরনের কোনও প্রকল্প কি নেয়া হয়েছে?
আমরা এখনও প্রকল্প আনি নাই, কিন্তু এ সমস্ত প্রকল্পতে যে সমস্ত সাপোর্ট লাগে, যেমন খাবার, হাইজেনিক প্রোডাক্ট, যদি কোনও ওষুধ-পত্র লাগে সেগুলো কিন্তু আমরা সাপ্লাই করছি। এ নিয়ে অনেকের সঙ্গে আলাপ করেছি, অনেকেই আগ্রহ দেখিয়েছে, ইনটেনসিভ ফিশ কালচারের ব্যাপারে তারা উৎসাহী ।

সব মিলিয়ে যদি আমরা একটা সামগ্রিক দেশের জন্য মাছের উৎপাদন থেকে শুরু করে প্রসারের জন্য যদি একটা ইনটেনসিভ উদ্যোগ নিতে চাই সরকারি এবং বেসরকারি বা প্রাইভেটলি, তাহলে কিভাবে করা যেতে পারে, একটা মডিউল আপনি যদি বুলেট পয়েন্টে বলেন।

আমি বলেছি একটু আগে যে, আমাদের দেশে একটা সময় চল্লিশ ভাগ জায়গায় পানি থাকে। আবার একসময় জায়গাগুলো শুকিয়ে যায়, একেবারেই পানি থাকে না। যখন পানি থাকে না, তখন তো আমরা ইনল্যান্ডে পুকুর কেটে পানি আটকে মাছ চাষ করছি। তাহলে চল্লিশ ভাগ সারফেসে যতটুকু সময় পানি থাকে, এই পুরো সময়টাকে ব্যবহার করা উচিত কেইজ ফিশিং করে। তাতে হবে কি যে, একটা ভালো সারফেসে আমরা অনেক বেশি মাছ পেয়ে গেলাম। ইন্টারনাললি যেসব জায়গায় পুকুর কেটে মাছের চাষ করা হচ্ছে, সেসব জায়গায় পুকুরের হাইজিন মেনটেইন করা, ভালো ব্রিড এবং ভালো খাবার দিতে হবে। এসব আজ ভালোভাবে ট্রেনিং করে করা উচিত। পাশাপাশি আবার এটাও দেখা উচিত যে, মাটি না কেটে, যদি শেড বানিয়ে তার ভেতরে মাছ চাষ করা যায়, তাহলে এখন যে উৎপাদন, তার দশ গুণ বেশি পরিমাণ মাছ উৎপাদন করা সম্ভব ওই একই সারফেসে। সেটাও আমাদের করা উচিত। তাহলে হবে কী, অল টুগেদার, আমরা আজ যে পরিমাণ মাছ পাই, তার চেয়ে অনেক বেশি মাছ পাবো অথচ জায়গা লাগবে অনেক কম। অনেক হাই কোয়ালিটির মাছ পাবো, অনেক কম পয়সায় মাছ উৎপাদন করতে পারব। এ দেশের মানুষ অনেক কম পয়সায় মাছ কিনে খেতে পারবে, প্রোটিন পাবে। আর বেশি বেশি মাছ খাওয়া মানেই কিন্তু ব্রেন বাড়বে, ফিউচার জেনারেশনের জন্য একটা ব্রিলিয়ান্ট বাংলাদেশ তৈরি হবে।

ড. এফ এইচ আনসারী

ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এসিআই এগ্রি বিজনেস,

নির্বাহী পরিচালক, এসিআই লিমিটেড