এখনো অর্থ সঙ্কট কাটেনি দেশের আলোচিত বেসরকারি ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ বাংলাদেশ লিমিটেডের। চলতি বছরের প্রথম ৬ মাস অতিবাহিত হলেও সঙ্কট এখনো প্রকট। গত বছর পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনায় বড় পরিবর্তনের পর নগদ অর্থের সঙ্কটে পড়ে ব্যাংকটি।
একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির মুনাফায় বড় ধরনের ধাক্কা লাগে। তবে চলতি বছরের প্রথমার্ধে ব্যাংকটির মুনাফা আগের বছরের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। চলতি হিসাব বছরের প্রথমার্ধের (জানুয়ারি-জুন) প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে শেয়ার কিনে ব্যাংকটিতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে চট্টগ্রামভিত্তিক দেশের শীর্ষ পর্যায়ের একটি শিল্প গ্রুপ। নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পর গ্রুপটি নিজেদের পছন্দের লোক ব্যাংকটির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে বসায়। এরপর ব্যাংকটির মুনাফায় ধস নামে। সেই সঙ্গে দেখা দেয় নগদ অর্থের সঙ্কট।
২০১৭ সালের জানুয়ারি-জুন সময়ে কোম্পানিটির সমন্বিত শেয়ার প্রতি পরিচালন নগদ প্রবাহ বা শেয়ার প্রতি ক্যাশ ফ্লো দাঁড়ায় ঋণাত্মক ১৪ টাকা ৬ পয়সা। প্রতিষ্ঠানটির এ অর্থ সঙ্কট পরের প্রান্তিকেও অব্যহত থাকে। ফলে বছরের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর সময়ে সমন্বিত শেয়ার প্রতি পরিচালন নগদ প্রবাহ দাঁড়ায় ঋণাত্মক ১১ টাকা ৬০ পয়সা।
পরিচালনা পর্ষদের বড় পরিবর্তন এনে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান করা হয় আরাস্তু খানকে। তিন বছরের জন্য তাকে ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়া হয়। তবে মাত্র এক বছরের মাথায় চলতি বছরের ১৭ এপ্রিল তিনি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। অভিযোগ রয়েছে, ব্যাংকটির ২১ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করতে অস্বীকৃতি ও বড় কয়েকটি ঋণ অনুমোদন না দেয়ায় তাকে পদ ছাড়তে হয়।
নিয়ম অনুযায়ী, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে প্রতি তিন মাস পর পর আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হয়, যা পর্ষদ সভার দিনই অনলাইনে প্রকাশ করতে হয়। যে কারণে ইসলামী ব্যাংকও তিন মাস পর পর আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। চলতি বছরের প্রথমার্ধের আর্থিক প্রতিবেদন নিয়ে সোমবার পর্ষদ সভা করে ইসলামী ব্যাংক। সভা শেষে চলতি বছরের জানুয়ারি-জুন সময়ের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
তবে এ প্রতিবেদনে কোম্পানির সার্বিক আর্থিক অবস্থার চিত্র তুলে ধরা হয়নি। শুধু শেয়ার প্রতি মুনাফা, সম্পদ মূল্য এবং পরিচালন নগদ প্রবাহ বা ক্যাশ ফ্লো’র তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি-জুন সময়ে ব্যাংকটির সমন্বিত শেয়ার প্রতি পরিচালন নগদ প্রভাব দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক ১০ টাকা ৬২ পয়সা। পরিচালন নগদ প্রবাহ বা ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক হয়ে পড়ার অর্থ হলো নগদ অর্থের সঙ্কট তৈরি হওয়া। শেয়ার প্রতি ক্যাশ ফ্লো যত বেশি ঋণাত্মক হবে নগদ অর্থের সঙ্কটও তত বাড়বে। এ অবস্থা তৈরি হলে চাহিদা মেটাতে ব্যাংককে চড়া সুদে টাকা ধার করতে হতে পারে। তাতে খরচ বাড়বে এবং আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
২০১০ সাল থেকে প্রকাশিত কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০১৭ সালের আগে কখনও এমন আর্থিক সঙ্কটে পড়েনি ইসলামী ব্যাংক। ২০১৬ সালের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর সময়ে ইসলামী ব্যাংকের সমন্বিত শেয়ার প্রতি পরিচালন নগদ প্রবাহ ছিল ২৩ পয়সা। তার আগে জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর সময়ে ২০১৫ সালে ১৪ টাকা ৪৭ পয়সা, ২০১৪ সালে ২৯ টাকা ৮২ পয়সা, ২০১৩ সালে ১২ টাকা ৬০ পয়সা, ২০১২ সালে ৯ টাকা ৭৬ পয়সা, ২০১১ সালে ১২ টাকা ৯৫ পয়সা শেয়ার প্রতি পরিচালন নগদ প্রবাহ ছিল ব্যাংকটির।
এদিকে চলতি বছরের প্রথমার্ধের অর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের দুই প্রান্তিকের মধ্যে সর্বশেষ প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) শেয়ার প্রতি মুনাফা (সমন্বিত) হয়েছে এক টাকা ৫২ পয়সা। যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল এক টাকা ১৪ পয়সা। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় সমন্বিত শেয়ার প্রতি মুনাফা বেড়েছে ৩৮ পয়সা।
শেষ প্রান্তিকের মতো চলতি বছরের প্রথমার্ধেও কোম্পানিটির মুনাফা আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি-জুন সময়ে ব্যাংকটির সমন্বিত শেয়ার প্রতি মুনাফা হয়েছে এক টাকা ৮৮ পয়সা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল এক টাকা ৭৯ পয়সা।
মুনাফার পাশাপাশি কোম্পানিটির সম্পদ মূল্যও কিছুটা বেড়েছে। চলতি বছরের ৩০ জুন শেষে ব্যাংকটির সমন্বিত শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য দাঁড়িয়েছে ৩২ টাকা ৪২ পয়স, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৩০ টাকা ১৯ পয়সা।
আরএম/