ইসলামী ব্যাংকের ৮০% ঋণই জামায়াতে

ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের ৮০ ভাগ ঋণই ভাগিয়ে নিয়েছে জামায়াতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। আর এ অর্থের একটি অংশ জঙ্গিবাদ- সন্ত্রাসী কাজে ব্যয় করা হয়েছে মনে করছে সরকার। উজ্জীবিত করা হচ্ছে জামায়াতের ধর্মভিত্তিক রাজনীতি। এমন তথ্যই বেরিয়ে এসেছে জঙ্গি অর্থায়নের উৎস অনুসন্ধানে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের গঠিত টাস্কফোর্সের নজরদারিতে। এ অবস্থায় বেসরকারি খাতের বড় এ ব্যাংকটির বিষয়ে কঠোর নজরদারিসহ করণীয় ঠিক করতে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি টাস্কফোর্সের তৃতীয় সভায় ইসলামী ব্যাংকের জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। আলোচনায় ইসলামী ব্যাংক এবং জামায়াতের রাজনীতি নিয়ে নানা তথ্য উঠে আসে।

সভায় অংশ নেন- শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. ফজলে কবির, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু সালেহ মো. জহরুল হক, বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজাল, আইজিপি একেএম শহীদুল হক, র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতিনিধি। বৈঠকে গোয়েন্দা সংস্থাসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংক, ইসলামী ফাউন্ডেশনের পক্ষ হতে প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজাল বলেন, ইসলামী ব্যাংকে বর্তমানে ৬৭ হাজার ৯২৫ কোটি টাকার আমানত আছে। গ্রাহক সংখ্যা ১ কোটি ২০ লাখ; যার ৮০ শতাংশ সাধারণ ধর্মভীরু মানুষ। এর মধ্যে ২০ শতাংশ আমানতকারী জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের। ওই ২০ শতাংশ আমানতকারীই জঙ্গিবাদের অর্থের উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

তিনি বলেন, ইসলামী ব্যাংকে মোট ঋণের পরিমাণ ৬১ হাজার ৬৪১ কোটি টাকা। বর্তমানে ৭ লাখ ৫১ হাজারের মতো ঋণগ্রহীতা আছে, যার ৮০ শতাংশ জামায়াত ও ছাত্রশিবির নেতাদের দখলে। বাকি ২০ শতাংশ সাধারণ ঋণগ্রহীতা ও ব্যবসায়ী।

তবে গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য বলছে, ৮০ ভাগ না; ঋণের ৯০ ভাগই জামায়াতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দখলে।

পুলিশের মহাপরিদর্শক শহীদুল হক বলেন, যারা ধর্মকে ব্যবহার করে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাচ্ছে, তাদের কঠোর নজরদারিতে আনা দরকার। একইসঙ্গে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন।

বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেন, ইসলামী ব্যাংক পরিচালনায় ৭ জন নিরপেক্ষ পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদ ইসলামী ব্যাংকের জঙ্গি অর্থায়নসহ বিভিন্ন অনিয়ম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবেন।

তিনি বলেন, শরিয়া ব্যাংকের দুটি নীতি ওয়াদিয়া ও মুদারাবা অনুযায়ী আমানতকারীর কাছ থেকে আমানত গ্রহণ করা হয়। মুদারাবা আমানতকারীদের চুক্তি অনুযায়ী লভ্যাংশ দেয়; যা ওই আমানতকারীদের হিসাবে প্রদান করা হয়। কিন্তু আল ওয়াদিয়া আমানতের ক্ষেত্রে কোনো লভ্যাংশ দেওয়া হয় না। এক্ষেত্রে লভ্যাংশের হিসাবও করা হয় না। ফলে আমানতকারীদের উদ্বৃত্ত লভ্যাংশের বিষয়ে ইসলামী ব্যাংক থেকে কোনো তথ্য পাওয়া যায় না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক গর্ভনরের বক্তব্যের পর শরিয়াভিত্তিক ব্যাংক পরিচালনায় আলাদা আইন না থাকায়, সাধারণ ব্যাংকিং আইনের কোনো বিধি সংযোজন করে বিদ্যমান আইন সংশোধন করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

আইন ও বিচার বিভাগের সচিব আবু সালেহ মো. জহরুল হক বলেন, ইসলামী ব্যাংকের কিছু আমানতকারী সুদমুক্ত আমানত রাখেন। প্রচলিত ব্যাংকিং নীতিমালা অনুযায়ী, ওই আমানতের সুদ বা লভ্যাংশের টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার বিধান আছে। কিন্তু ইসলামী ব্যাংক তা করে না। এ বিষয়ে ইসলামী ব্যাংকের কাছ থেকে ব্যাখ্যা চাওয়া উচিত।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক প্রণীত সিএসআর নীতিমালার নির্দেশনা মোতাবেক বর্তমানে ইসলামী ব্যাংকে সিএসআরের অর্থ ব্যবহৃত হচ্ছে কি-না তা আরও নজরে রাখা প্রয়োজন।

ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান আরাস্তু খান দেশের বাইরে থাকায় এসব অভিযোগের বিষয়ে কথা বলার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি।

সূত্র: অর্থসূচক

আজকের বাজার:এলকে/ এলকে/ ১১ জুলাই ২০১৭