ইসলামের নামে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সংসদ নেতা আজ সংসদে বলেছেন, তাঁর সরকার ইসলামের নামে অগ্নিসংযোগ হামলা ও ভাঙচুরের মতো অনৈসলামিক কার্যক্রমকে সহ্য করবে না। অপকর্মের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমি কেবল এটুকুই বলতে পারি এই ধরনের অপকর্মের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কিছু লোকের জন্য ইসলাম ধর্মের বদনাম হবে এটা কখনই মেনে নেওয়া যায় না। এই ধরণের অপকর্মে যারা জড়িত আইনানুগ ব্যবস্থা তাদের বিরুদ্ধে নেওয়া হবে। যারা মুখে ধর্মের কথা বলে, ইসলামের নাম বলে চলবেন আর অধর্মীয় কাজ করবেন এটা কখনো গ্রহণযোগ্য নয়।’
প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নেতা শেখ হাসিনা আজ অপরাহ্নে একাদশ জাতীয় সংসদের দ্বাদশ অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে একথা বলেন।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে একাদশ জাতীয় সংসদের দ্বাদশ অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে সংসদ নেতা এ কথা বলেন।
জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে সার্কভূক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে হেফাজতে ইসলামের দেশব্যাপী সৃষ্ট অরাজকতা এবং হরতাল আহ্বান প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী এর নেতৃবৃন্দকে দায়ী করেন।
তিনি বলেন, ‘২৬ মার্চ অনেক মানুষের জীবন গেছে এর জন্য দায়ী তো তারা। কাজেই, আমি শুধু এইটুক বলব দেশবাসী যেন একটু ধৈর্য্য ধরেন। আমার কাছে বিস্তারিত দেওয়া আছে। আমাদের সবাইকে ধৈর্য্য ধরেই এগোতে হবে। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা দুঃখজনক বিষয় হলো, যখন আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছি। সেই সময় যে ঘটনাগুলি ঘটানো হলো এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। সবথেকে আশ্চয্যের বিষয় যেখানে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছি সেই সময় হ্যাঁ আমাদের অনেক বিদেশী অতিথি আসছে। অনেকে বার্তা দিচ্ছেন। ব্রিটেনের রানী থেকে শুরু করে সৌদি বাদশা সকলের বার্তা আমরা পাচ্ছি। এতো বড় একটা সম্মান বাংলাদেশ পাচ্ছে। সেখানে কারা খুশি হতে পারে নাই?
তিনি বলেন, ২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী আসার কথা। তাকে আসতে দেওয়া যাবে না, বাধা দেওয়া হলো কেন? হেফাজতে ইসলাম কর্মসূচি দেয়। তারা কি শিক্ষা গ্রহণ করতে দেওবন্দে যায় না। তারা যদি এসমস্ত ঘটনা ঘটায়, তবে, উচ্চশিক্ষা গ্রহণে দেওবন্দে যাবে কিভাবে, সেটা কি তারা একবারও চিন্তা করেছে?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা তো কওমি মাদরাসায় সনদ দিচ্ছি। তাদের শিক্ষার ব্যবস্থা করেছি তাদের কারিকুলাম ঠিক করে দিচ্ছি। যাতে তারা দেশে বিদেশে চাকরির পায় তার ব্যবস্থাও করে দিচ্ছি তারপরেও কেন তারা এই তান্ডব ঘটালো?
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি তাদেরকে সমর্থন দিচ্ছে। বিএনপি জামায়াত জোট কিভাবে সমর্থন দিচ্ছে সেটাই আমার প্রশ্ন। প্রধানমন্ত্রী মোদী আসবে সেখানে তাদের আপত্তি।
তিনি বলেন, আমার খুব অবাগ লাগে বিএনপির কর্মকান্ড দেখে। প্রথমে খুব আপত্তি হেফাজতের সাথে যতরকমের মদদ দেওয়া এবং জ্বালাও পোড়াও করার যে পরামর্শ সেটাও তারা দিয়েছে। এদের রাজনৈতিক কোন আদর্শ নেই। কোন আদর্শ নিয়ে তারা চলে না।
হেফাজত কান্ড নিয়ে সবিস্তারে সংসদে সচিত্র প্রতিবেদন উপস্থাপন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে কেউ কেউ বলছেন পুলিশ কেন ধৈর্য্য দেখিয়েছে? আমরা ধৈর্য্য দেখিয়েছি এগুলো বিরত করার চেষ্টা করেছি, কারণ, সংঘাতে সংঘাত বাড়ে, আমরা তা চাইনি। আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ভালোভাবে উদযাপন করতে চেয়েছি।
তিনি বলেন, যারা এটা করছে, দেশবাসী এটার বিচার করবে। দেশবাসী দেখবে এবং এদের চরিত্রটা কি? গতকালকে দেখেছেন এরা একদিকে ইসলামের নামে, ধর্মের নামে, পবিত্রতার নামে এতো কিছু বলে আবার গিয়ে একটা অপবিত্র কাজ করে আসে, ধরা পড়ে সোনারগাঁও’র রিসোর্টে।
প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব এবং হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মুহম্মদ মামুনুল হকের অনৈতিক কার্যকলাপে যুক্ত থাকার মিডিয়াতে প্রকাশিত সংবাদের তীব্র সমালোচনা করেন।
তিনি বলেন, একটা রিসোর্টে ধরা পড়েছেন হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব। তিনি ধরা পড়লেন এবং সেটা ঢাকার জন্য নানা রকম চেষ্টা। পার্লারে কাজ করে এক মহিলা তাকে বৌ হিসাবে পরিচয় দেন, আবার নিজের বৌ এর কাছে বলে যে অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আমি বলে ফেলেছি।
প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন যারা ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করে এরকম অসত্য কথা বলতে পারে? তারা তো বলতে পারে না। এরা কি ধর্ম পালন করে? মানুষকে কি ধর্ম শেখাবে?
শেখ হাসিনা বলেন, হেফাজতের যারা সদস্য তাদেরকেও অনুরোধ করব-একটু বুঝে নিন কেমন নেতৃত্ব আপনাদের। আগুন লাগিয়ে জ্বালাও পোড়ায় করে বিনোদন করতে গেলেন একটা রিসোর্টে তাও একজন সুন্দরী মহিলা নিয়ে। এটাই তো বাস্তবতা। অর্থাৎ এরা ইসলাম ধর্মের নামে কলঙ্ক। ইসলাম ধর্মকে তারা ছোট করে দিচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন, কিছু লোকের জন্য এই ধর্মে জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের নাম জুড়ে যাচ্ছে। আর এখন তো যে চরিত্র দেখালো দুশ্চিরত্রের নামও জুড়ে দিচ্ছে।
সংসদ নেতা বলেন, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধর্ম ইসলাম। যে ইসলাম ধর্ম সব থেকে সহনশীলতার কথা শিখিয়েছে, শান্তির কথা বলেছে, সাধারণ মানুষের কথা বলেছে, মানুষের উন্নয়নের কথা বলেছে, সেই পবিত্র ধর্মকে এরা কলুষিত করে দিচ্ছে। এরা ধর্মের নামে ব্যবসা শুরু করেছে।
প্রধানমন্ত্রী এদের অর্থের উৎস নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করে বলেন, এদের এতো অর্থ কোথা থেকে আসে এই বিনোদনের জন্য সেটাও একটা প্রশ্ন। কাজেই এটা দেশবাসী বিচার করবে, আর আইন তার আপন গতিতে চলবে।
তিনি বলেন, একজন মুসলমানের আরেকজন মুসলমানের জান মাল হেফাজত করা, রক্ষা করা দায়িত্ব। আর হেফাজতের নামে তারা জ্বালাও পোড়াও করে যাচ্ছে। আর বিএনপি জামায়াত হচ্ছে তাদের মদদদাতা। এই লজ্জা শুধু বাংলাদেশের জনগণের না, এই লজ্জা বিশ্বব্যাপী, সমস্ত পৃথিবীতে মুসলমানদের জন্য। পবিত্র ধর্মটাকে সম্পূর্ণভাবে নষ্ট করে দিচ্ছে। তাদের এই সমস্ত কর্মকা-ের ফলে বহু মানুষের জীবন গেছে।