ই-টিআইএন করুন সহজে

করযোগ্য আয় থাকলে অবশ্যই আয়কর বা প্রত্যক্ষ কর দিতে হবে। এজন্য জমা দিতে হবে আয়করবিবরণী। এটি জমা দিতে লাগবে ইলেক্ট্রনিক ট্যাক্স আইডেনটিফিকেশন নাম্বার (ই-টিআইএন)। আয়কর মেলায় খুব সহজেই ই-টিআইএন খোলা যায়। এছাড়া অনলাইনে ই-টিআইএন নিতে হলে ইচ্ছুকদেরwww.incometax.gov.bd এই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে। নির্দিষ্ট নির্দেশিকা অনুযায়ী ই-টিআইএনের ফরম পূরণ করতে হবে।

সর্বশেষ অনলাইনে আবেদনপত্রটি জমা দেওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে ই-টিআইএন সনদ স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্ক্রিনে ভেসে উঠবে। পরে তা প্রিন্ট নিতে হবে এবং সংরক্ষণ করতে হবে। এভাবে মাত্র কয়েক মিনিটেই স্বয়ংক্রিয় উপায়ে ঘরে বসেই ই-টিআইএন পাওয়া যাবে।

ই-টিআইএন যেভাবে করবেন : রিটার্ন বা আয়কর বিবরণী জমা দিতে গেলে প্রথম শর্তই হল ই-টিআইএন থাকতে হবে। এতে একটি নম্বর দেওয়া থাকে, যা করদাতার নম্বর হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এনবিআরের ওয়েবসাইটে গিয়ে (www.nbr.gov.bd) অনলাইনে এটি যে কেউ করতে পারেন। এ ছাড়া আয়কর মেলায় গিয়ে কিংবা বাড়িতে বসে অন্যের মাধ্যমেও ই-টিআইএন পাওয়া যায়। এজন্য কাগজপত্র বলতে শুধু জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বরটি লাগবে। এ ছাড়া পেশা ও স্থায়ী ঠিকানা ব্যবহার করতে হবে। মনে রাখবেন, ই-টিআইএন করতে যে ঠিকানা ব্যবহার করবেন সেটিই হবে আপনার কর অঞ্চল। এ ছাড়া রাজধানীতে করলে পেশা অনুসারে কর অঞ্চল ভিন্ন হবে। ই-টিআইএন করতে প্রথমে নির্দেশিকা অনুযায়ী ফরম পূরণ করতে হবে। ফরম পূরণ করতে হয় ইংরেজিতে। সতর্কতার সঙ্গে করলে কোনো জটিলতা নেই।

ই-টিআইএন লাগবে ৩১ কাজে : ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে আরও বেশি মানুষ করজালে আসবেন। ৩১ ধরনের কাজের জন্য বাধ্যতামূলকভাবে ১২ ডিজিটের ই-টিআইএন নিতে হবে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে ই-টিআইএন ব্যবহারে বেশ কিছু নিয়মও করা হয়েছে। যাদের বেতন (সরকারি চাকরি) ১৬ হাজার টাকার বেশি তাদের ক্ষেত্রে ই-টিআইএন নম্বর আবশ্যক। এমপিওভুক্ত শিক্ষক (যারা ১৬ হাজার টাকার বেশি বেতন পান) বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ব্যবস্থাপনা, প্রশাসনিক কার্যক্রম, সুপারভাইজারি অবস্থান ও উৎপাদন পর্যায়ে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের ই-টিআইএন নম্বর থাকতে হবে। কোনো কোম্পানির ডিস্ট্রিবিউটরশিপ নেওয়ার ক্ষেত্রেও ই-টিআইএন নম্বর থাকা বাধ্যতামূলক।

ব্যাংক থেকে ক্রেডিট কার্ড নেওয়া বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে পাঁচ লাখ টাকার বেশি ঋণ নিতে গেলে ই-টিআইএন নম্বর লাগবে। এ ছাড়া আমদানির উদ্দেশ্যে ঋণপত্র খোলা যাবে না ই-টিআইএন ছাড়া। এক্সপোর্ট রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট পেতে হলে ই-টিআইএন নম্বর থাকতে হবে। আমদানি-রফতানির বিল অব এন্ট্রির ক্ষেত্রেও এটি লাগবে। সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভার ভেতরে ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করা যাবে না ই-টিআইএন নম্বর ছাড়া।

অর্থ আইনে (বিল) বলা আছে, ১২ অঙ্কের ই-টিআইএন নম্বর ছাড়া কোনো দরপত্রে কেউ অংশ নিতে পারবে না। কোম্পানি আইনে নিবন্ধিত কোনো ক্লাবের সদস্য হতে গেলেও ই-টিআইএন লাগবে। সাধারণ বীমার জরিপ কর্তারও টিআইএন নম্বর থাকতে হবে। সিটি কর্পোরেশন ও জেলা সদর পৌরসভায় জমি-বিল্ডিং বিক্রি, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি, হস্তান্তর, দলিলসহ এক লাখ টাকার বেশি মূল্যের কোনো চুক্তিনামা করতে গেলেই ই-টিআইএন নম্বর থাকা বাধ্যতামূলক। বাস, প্রাইম মোভার, লরির মালিকানা পরিবর্তন কিংবা ফিটনেস নবায়ন করতেও টিআইএন লাগবে। এছাড়া চিকিৎসক, আইনজীবী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট, আর্কিটেকচার, সার্ভেয়ারসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের সদস্য হতে গেলেও ই-টিআইএন লাগবে। কোনো কোম্পানির পরিচালক ও স্পন্সর পরিচালক, মুসলিম বিবাহ ও ডিভোর্স আইনে নিকাহ রেজিস্ট্রার ও যেকোনো ট্রেড বডির সদস্য হতেও টিআইএন লাগবে।

অর্থ আইন ২০১৭-এ বলা হয়েছে, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ) ও রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ) এলাকার মধ্যে কোনো ভবন নির্মাণের উদ্দেশ্যে অনুমোদন নিতে হলে ১২ অঙ্কের ই-টিআইএন নম্বর থাকতে হবে। এছাড়া ড্রাগ লাইসেন্স, গ্যাসের বাণিজ্যিক সংযোগ, সিটি কর্পোরেশন ও পৌর এলাকায় বিদ্যুতের বাণিজ্যিক সংযোগ নেওয়া, মোটর গাড়ির মালিকানা পরিবর্তন বা ফিটনেস নবায়ন করতেও ই-টিআইএন নম্বর অবশ্যই থাকতে হবে। লঞ্চ, স্টিমার, ফিশিং ট্রলার, কার্গো কোস্টারসহ বিভিন্ন জলযানের জরিপ সনদ নেওয়া, ইনস্যুরেন্স কোম্পানির নিবন্ধন ও নবায়ন, জেলা পরিবেশ কার্যালয় থেকে ইটভাটার অনুমোদন নেওয়ার সময়ও অবশ্যই থাকতে হবে ই-টিআইএন নম্বর। এছাড়া উপজেলা, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে হলে ই-টিআইএন থাকা বাধ্যতামূলক। সিটি কর্পোরেশন, জেলা শহর ও পৌরসভায় কোনো শিক্ষার্থীকে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল বা বিদেশি কারিকুলামে ভর্তি করতে হলেও ই-টিআইএন থাকতে হবে।

মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবসায়ীদেরও ই-টিআইএন থাকতে হবে। কোনো কোম্পানি থেকে অ্যাডভাইজারি, কনসালটেন্সি, ক্যাটারিং, ম্যানেজমেন্ট, জনশক্তি সরবরাহ ও নিরাপত্তা সার্ভিসসহ বিভিন্ন সার্ভিস দিতে গেলেও টিআইএন থাকতে হবে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে এই তালিকায় নতুন করে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে মোবাইল ফোন রিচার্জ ব্যবসা, মোবাইল ব্যাংকিং, পরিবেশক এজেন্সি, বিভিন্ন ধরনের পরামর্শক, ক্যাটারিং, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, জনবল সরবরাহ ও সিকিউরিটি সার্ভিস। এমনকি আমদানি-রফতানির বিল অব এন্ট্রি জমা দিতে হলেও ই-টিআইএন লাগবে। ই-টিআইএন ছাড়া এখন থেকে এসব ব্যবসা করা যাবে না।

আজকের বাজার : এসএস /ডিএস/এলকে ২৭ ডিসেম্বর ২০১৭