ঈদ জামাতের আগে–পরে ডিএমপির নির্দেশনা

কোরবানির পশুর হাট, বাস ও লঞ্চ টার্মিনাল এবং রেলস্টেশন কেন্দ্রিক নিরাপত্তায় নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। এর অংশ হিসেবে দেওয়া হয়েছে বেশ কিছু নির্দেশনাও। আজ বুধবার ডিএমপি হেডকোয়ার্টার্সে এক সভায় এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়।

নির্দেশনাগুলো নিচে তুলে ধরা হলো:

১। কোরবানির পশুর হাট কেন্দ্রিক নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। থাকছে সাদা পোশাকের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

২। প্রতিটি পশুর হাটে ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করা হবে, থাকবে অস্থায়ী পুলিশ কন্ট্রোল-রুম।

৩। পশুর হাট কেন্দ্রিক মানি এস্কর্ট ব্যবস্থা, কন্ট্রোলরুম এবং প্রতিটি থানায় মানি এস্কর্ট টিম স্ট্যান্ডবাই থাকবে।

৪। কোরবানির পশুর হাটে জাল নোট শনাক্তকরণ মেশিন স্থাপন করা হবে।

৫। পশুর হাটের চৌহদ্দির বাইরে হাট বসতে দেয়া হবে না এবং বলপূর্বক পশুবাহী ট্রাক/নৌকা আটকিয়ে অন্য হাটে নামানো যাবে না।

৬। নির্ধারিত হারে হাসিল আদায় নিশ্চিত করতে হবে, হাসিলের হার বড় ব্যানার বা ফেস্টুনের মাধ্যমে দৃশ্যমান রাখতে হবে।

৭। জাল টাকার বিস্তার রোধ ও পশুর হাটে অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি, পকেটমার ও অন্যান্য অপরাধীদের তৎপরতা বন্ধ করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

৮। পশু বিক্রয়ের টাকা ছিনতাই প্রতিরোধে পুলিশ তৎপর থাকবে এবং অস্থায়ী পুলিশ কন্ট্রোলরুম ও ওয়াচ টাওয়ারে জনসচেতনতামূলক ব্যানার স্থাপন করা হবে।

৯। পশুর হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং প্রবেশ মুখে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখা ও জীবাণুনাশক চেম্বার স্থাপন করা।

১০। করোনা সংক্রমণ ঝুঁকি এড়াতে অনলাইন ভিত্তিক বিক্রয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে সিটি কর্পোরেশনের মাধ্যমে নিবন্ধিত হয়ে পশু বিক্রির জন্য উৎসাহিত করা।

১১। সার্বক্ষণিক মেডিকেল টিম ও ভেটেরিনারি অফিসার (পশুর ডাক্তার) নিয়োজিত রাখতে হবে।

১২। হাট এলাকার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে।

১৩। পশুর হাট কেন্দ্রিক নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা এবং ফায়ার টেন্ডার মোতায়েন রাখতে হবে।

ইজারাদারদের প্রতি কিছু দায়িত্ব
ইজারাদারদের প্রতি কিছু দায়িত্ব পালনে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তার মধ্যে- নির্ধারিত তারিখের পূর্বে হাটে পশু না আনা, চৌহদ্দির বাঁশ দিয়ে ঘিরে রাখা, চৌহদ্দির বাইরে হাট না বসানো, পশু বহনকারী ট্রাকের সামনে হাটের নাম ব্যানারে লিখে রাখা, এক হাটের পশু অন্য হাটে না নামানো, নির্ধারিত হারের অতিরিক্ত হাসিল আদায় না করা, হাট এলাকায় সিসিটিভি স্থাপন ও মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করা, ক্রেতা ও বিক্রেতাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করা, জেনারেটরের ব্যবস্থা রাখা, পর্যাপ্ত সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক দৃশ্যমান আইডি কার্ডসহ নিয়োগ করা, টাকা পরিবহনে পুলিশের মানি এস্কর্ট সেবা গ্রহণ করা, হাটের মধ্যে স্থায়ী খাবারের দোকান স্থাপন করা এবং কোরবানির পশু ব্যবসায়ীকে মলম পার্টি, অজ্ঞান পার্টি সম্পর্কে সচেতন করতে লিফলেট দেয়া ও মাইকিংয়ের ব্যবস্থা করা।

কোরবানির হাটের জন্য স্বাস্থ্য বিধিমালা
১। প্রতিটি হাটের প্রবেশ পথ ও প্রস্থানের পথ পৃথক করতে হবে। হাটে প্রবেশের মুখে প্রয়োজনীয় সংখ্যক হাত ধোয়ার জন্য বেসিন, পানির ট্যাংক ও সাবান এবং পৃথকভাবে হ্যান্ড সেনিটাইজার রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।

২। হাটে প্রবেশের মুখে প্রয়োজনীয় সংখ্যক তাপমাত্রা মাপার যন্ত্রসহ লোক রাখতে হবে। কোনক্রমেই ফেস মাস্ক ছাড়া কোন লোককে হাটে ঢুকতে দেয়া যাবে না।

৩। হাটে সামাজিক দূরত্ব কমপক্ষে ৩ ফুট কঠোরভাবে বজায় রাখতে হবে।

৪। করোনার সন্দেহজনক উপসর্গ যেমন- জ্বর, সর্দি-কাশি, শরীর ব্যথা ইত্যাদি নিয়ে কোন ব্যক্তি কোনক্রমেই হাটে প্রবেশ করতে পারবে না।

৫। যত কম সময়ে সম্ভব কোরবানির পশু কিনে হাট ত্যাগ করতে হবে, একজন বিক্রেতার নিকট বেশী ক্রেতা অযথা ভিড় করা যাবে না।

৬। অসুস্থ পশু কোনক্রমেই হাটে বেচাকেনার জন্য আনা যাবে না।

৭। শিশু ও ষাটোর্ধ ব্যক্তিদের হাটে প্রবেশে নিরুৎসাহিত করতে হবে।

৮। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে স্বাস্থ্যবিধি অমান্যকারীর বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কাঁচা চামড়া পাচার রোধ এবং ক্রয়-বিক্রয়কালে ব্যবস্থা

১। নগদ অর্থ বহনকালে যানবাহন সরবরাহ সাপেক্ষে মানি এস্কর্ট প্রদান করা হবে।

২। চামড়া ব্যবসায়ীদের নগদ অর্থ নিয়ে নিরাপদ স্থানে রাত্রি যাপন করতে হবে।

৩। কাঁচা চামড়া পাচার রোধে ঢাকা থেকে বের হওয়ার পথগুলোতে থাকবে চেকপোস্ট এবং নদী পথে থাকবে নৌ-টহলের ব্যবস্থা।

৪। বাইরে থেকে শুধুমাত্র কাঁচা চামড়াবাহী যানবাহন ঢাকায় প্রবেশ করবে, কোন কাঁচা চামড়াবাহী যানবাহন ঢাকা থেকে বাইরে যেতে পারবে না।

৫। চামড়া ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যাপারে কেউ যাতে সিন্ডিকেট করতে না পারে তার ব্যবস্থা করা হবে।

৬। আমিন বাজার টার্মিনালের পাশে রাস্তার উপর কাঁচা চামড়া রাখা যাবে না।

৭। হাজারী বাগ এলাকায় রাস্তার উপর রাত ১১টার পর কাঁচা চামড়া রাখা যাবে না।

৮। কোরবানির বর্জ্য দ্রুত অপসারণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

বাস ও লঞ্চ টার্মিনাল এবং রেল স্টেশন কেন্দ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা

১। চালক, হেলপার ও যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ এবং সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে মাইকিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।

২। যানবাহনের ফিটনেস, ড্রাইভিং লাইসেন্স, রেজিস্ট্রেশন ইত্যাদি টার্মিনাল ছাড়ার আগে যাচাই করতে হবে।

৩। অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল পরিবহন রোধ, পণ্যবাহী ট্রাকে যাত্রী পরিবহন বন্ধ, বাস ও ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ নিষেধ।

৪। টিকেট কালোবাজারি ও যাত্রী হয়রানি রোধ করা হবে।

৫। প্রতিটি বাস টার্মিনালে ওয়াচ টাওয়ার এবং লঞ্চ টার্মিনাল ও রেল স্টেশনে পুলিশ কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হবে।

ঈদ পরবর্তী ঢাকা মহানগরীর নিরাপত্তা

১। ঢাকা মহানগরীর প্রতিটি আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

২। স্বর্ণের দোকান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাসা-বাড়ি, ভাড়াটিয়াদের নিরাপত্তা সংক্রান্তে সচেতনতামূলক পরামর্শ প্রদান করা হবে।

৩। বাসা ও প্রতিষ্ঠান মালিকদের সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং প্রাইভেট নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ করতে হবে।

৪। ঈদের ছুটিকালীন আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকায় অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধের লক্ষ্যে পুলিশের কর্মকাণ্ড (মোবাইল পেট্রোল, ফুট পেট্রোল, চেকপোস্ট) বৃদ্ধি করা হবে।