উজিরপুরে শুটকি তৈরি করে নিজেদের ভাগ্য বদল করছে ২৫টি পরিবার

কোন প্রকার কেমিক্যাল ছাড়াই শুটকি তৈরি করে নিজেদের ভাগ্য বদল করছে জেলার উজিরপুর উপজেলার হারতা ইউনিয়নের প্রায় ২৫ টি পরিবার। হারতা ইউনিয়নের একাধিক সূত্র জানায়, দেশের বিভিন্ন জেলায় ও বিদেশে রপ্তানি করে বিপুল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে হারতা ইউনিয়নের এ নিম্ন আয়ের মানুষ । সারাটি বছর জুড়ে নিজেদের তৈরি এ শুঁটকি বিক্রি হচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। এতে পরিবারগুলো অর্থনৈকিভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে।

সরোজমিনে দেখাগেছে, জেলার উজিরপুর উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা হারতা। এখানকার কালবিলা, জামবাড়ি ও হারতা গ্রামের অন্তত ২৫টি পরিবার শুঁটকি তৈরি করে জীবিকা নির্বাহের পথ বেছে নিয়েছে। ট্যাংরা, পুঁটি, চিংড়ি, ভাটা, ইলিশসহ অন্তত ১০ প্রজাতির মাছের শুঁটকি তৈরি করে থাকেন তারা। বিশেষ করে হারতা গ্রাম থেকে শুঁটকি তৈরি শুরু হয়। এ গ্রামটির ৩টি পয়েন্টে প্রায় চার দশক ধরেই বিভিন্ন প্রজাতির মাছ দিয়ে শুঁটকি তৈরি করছে। পরিবারগুলোর প্রায় ৪০ জন শুঁটকি তৈরির কাছে সরাসরিভাবে যুক্ত রয়েছে। যে কারণে উত্তর হারতা গ্রামটি এখন ‘শুঁটকি পল্লী হিসেবেই বেশ পরিচিত।

হারতার শুঁটকি বিক্রেতা চিত্ত হালদার জানান, প্রায় ৫০ বছর ধরে তিনি হারতা বাজার সংলগ্ন নদীর পাড়ে শুঁটকি মাছ তৈরি করে আসছেন। তার সঙ্গে রয়েছেন সুখরঞ্জন মাঝি, সুভাষ হালদার ও সুখদেব মালাকর। এরা নানা প্রজাতির মাছের শুঁটকি তৈরি করে ফরিদপুর, ফেনী, কিশোরগঞ্জ, ভৈরব, ভাঙ্গা ও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রফতানি করছেন এ শুটকি। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ২০ মেট্রিক টন দেশী নদীর মাছের শুঁটকি দেশের বিভিন্ন স্থানে রফতানি করেছেন তারা।

শুঁটকি তৈরির কারিগর সুভাষ হালদার জানান, দেশি মাছের দুই ধরনের শুঁটকি তৈরি করে থাকেন তারা। কোন প্রকার ক্ষতিকারক কেমিক্যাল প্রয়োগ ছাড়াই এ শুঁটকি তৈরি করেন তারা। যে কারণে উজিরপুরের শুঁটকির চাহিদা বর্তমানে দেশজুড়ে। জামবাড়ি গ্রামের মৎস্য শিকারী কৃষ্ণ পাল বলেন, গত ২০ বছর ধরে আমি জেলের কাজ করে আসছি। তবে মাছ কোন আড়ৎ-এ বিক্রি করছি না। মাছ ধরে শুঁটকি পল্ল­ী নিয়ে বিক্রি করছি। এতে ভালো মুনাফাও পাচ্ছি।

এবিষয়ে শুঁটকি ব্যবসায়ী দিবাকর সাহা বলেন, উজিরপুরের সম্ভাবনাময় শুঁটকি শিল্পের উন্নয়নে আরো বেশি সরকারী সহায়তা প্রয়োজন। এতে শুঁটকি শিল্পের প্রসারের পাশাপাশি জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে। ক্ষুদ্র শুটকি ব্যবসায়ীরা স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি এলাকার যুবসমাজ বেকারত্বের অভিশাপ থেকে রক্ষা পাবে।

এব্যপারে উপজেলার হারতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ডা: হরেন রায় বলেন, দীর্ঘদিন ধরে হারতায় ৩টি খোলায় বিভিন্ন ধরনের শুঁটকি তৈরি হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকার আসছে শুঁটকি ক্রয়ের জন্য। আশপাশের গ্রামগুলোতেও শুঁটকি তৈরিতে আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, উপজেলার হারতা ইউনিয়নের শুটকি ব্যবসার প্রসার ঘটাতে জেলা মৎস্য অধিদপ্তর সকল প্রকার সহযোগিতা করছে এবং তা ভবিষ্যতেও করবে। সব কিছু মিলিয়ে অঞ্চলটি শস্য ও মৎস্য ভান্ডার নামে খ্যাত। এ অঞ্চলের ফসলাদি ও মৎস্য সুষ্ঠু ও সুন্দর ভাবে সংরক্ষণ করতে পারলে দেশের অর্থনৈতিক ব্যাপক উন্নতি লাভ করবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। তথ‌্য-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান