উত্তর রাখাইনে খাদ্য কর্মসূচির অনুমতি পেল জাতিসংঘ

রাখাইন প্রদেশের উত্তরাঞ্চলে জাতিসংঘের খাদ্য বিতরণ কর্মসূচি পুনরায় চালু করতে সম্মতি জানিয়েছে মায়ানমার। চলমান সংঘাতের কারণে প্রদেশটিতে দুই মাস ধরে এ কর্মসূচি বন্ধ ছিল। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। খবর রয়টার্স।

খাদ্য কর্মসূচি পুনরায় চালুর বিষয়ে মায়ানমার ও জাতিসংঘের মধ্যে একটি চুক্তি সই হতে যাচ্ছে, যার বিস্তারিত এখনো পুরোপুরি চূড়ান্ত হয়নি। মায়ানমারের কাছ থেকে এমন এক সময় এ বিষয়ে সম্মতি আদায়ে সক্ষম হলো জাতিসংঘ, যখন রাখাইন থেকে অপুষ্টিতে আক্রান্ত হাজার হাজার শিশু প্রায় জীবন্মৃত অবস্থায় বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে।

চলমান সংঘাত শুরুর আগে রাখাইনের উত্তরাঞ্চলে খাদ্য বিতরণ কর্মসূচির আওতায় প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার ব্যক্তিকে সহায়তা দিয়ে আসছিল জাতিসংঘ। স্থানীয় রোহিঙ্গা ও রাখাইন উভয় জাতিগোষ্ঠীকেই এ বিতরণ কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছিল।

চলতি বছরের ২৫ আগস্ট কয়েকটি পুলিশ ও সেনা চৌকিতে সন্দেহভাজন রোহিঙ্গা জঙ্গিদের হামলার জের ধরে রাখাইনের উত্তরাঞ্চলে সংঘাত শুরু হয়। ওই সময়ের পর থেকে সেখানে জাতিসংঘ ও অন্য মানবাধিকারকর্মীদের ঢুকতে দেয়নি মায়ানমার সরকার। অন্যদিকে রাখাইনের মধ্যাঞ্চলে জাতিসংঘের এ খাদ্য বিতরণ কর্মসূচির আওতায় ১ লাখ ৪০ হাজার জনকে সহায়তাদান কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ডব্লিউএফপির মুখপাত্র বেটিনা লুয়েশার গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাখাইন প্রদেশের উত্তরাঞ্চলে খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি আবারো চালুর বিষয়ে সবুজসংকেত পেয়েছে ডব্লিউএফপি। বর্তমানে আমরা দেশটির সরকারের সঙ্গে এ বিষয়ক চুক্তির বিস্তারিত নির্ধারণে কাজ করে যাচ্ছি।’

উত্তর রাখাইনে খাদ্য বিতরণ কর্মসূচি আবারো চালু করার সম্ভাব্য সময় বা এ সংক্রান্ত কোনো বিশদ তথ্য জানাননি বেটিনা লুয়েশার। তবে এখন পর্যন্ত এ নিয়ে নেপিদোর সঙ্গে আলোচনা চলছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

বেটিনা লুয়েশার বলেন, ‘আমাদের এখন দেখতে হবে সেখানকার পরিস্থিতি কেমন। সেখানে না গিয়ে এ বিষয়ে কোনো ধরনের তথ্য দেয়া মুশকিল।’
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) হিসাব অনুযায়ী, সংঘাত শুরুর পর গত দুই মাসে প্রায় ৬ লাখ ৪ হাজার রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। চলমান সংঘাতের আগে থেকে অবস্থানরতরাসহ বাংলাদেশে বর্তমানে মোট ৮ লাখ ১৭ হাজার রোহিঙ্গা আগমনের হিসাব পাওয়া গেছে।

রাখাইনের মংডু ও বুথিডং শহর এবং এর পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোয় অপুষ্টির হার মারাত্মকভাবে বেড়েছে। বাংলাদেশে আগত রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের অধিকাংশই এ অঞ্চল থেকে আগত। চলমান সংঘাত শুরুর আগে থেকেই এদের মধ্যে জরুরি সহায়তার প্রয়োজন দেখা দিয়েছিল বলে জানিয়েছে ইউনিসেফ।

ইউনিসেফের মুখপাত্র মারিসি মারকাডো বলেন, ‘উত্তর রাখাইনের প্রায় চার হাজার শিশুকে আমরা মারাত্মক অপুষ্টিজনিত ব্যাধির চিকিত্সা দিচ্ছিলাম। কিন্তু ২৫ আগস্টের পর থেকে আমাদের প্রবেশ করতে না দেয়ায় সেটিও এখন বন্ধ রয়েছে।

বাংলাদেশে আগত ৬০ হাজার উদ্বাস্তু রোহিঙ্গা শিশুকে চিকিত্সা সহায়তা দিয়েছে ইউনিসেফ। এর মধ্যে দুই হাজার তীব্র ও মারাত্মক অপুষ্টিতে (সিভিয়ার অ্যাকিউট ম্যালনিউট্রেশন) ভুগছে। অন্যদিকে একটু কম তীব্র ও মারাত্মক অপুষ্টিতে (মডারেটলি অ্যাকিউট ম্যালনিউট্রিশন) ভুগছে আরো সাত হাজার। গত দু-একদিনের মধ্যে বাংলাদেশে প্রবেশ করা ৩৪০ শিশুর মধ্যে ১০ শতাংশই তীব্র ও মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে বলে জানিয়েছে ইউনিসেফ।

এ বিষয়ে মারিসি মারকাডো বলেন, ‘তীব্র অপুষ্টিতে ভোগা এসব শিশু বাংলাদেশের সীমান্ত পেরুতে পেরুতেই মৃত্যুর কাছাকাছি অবস্থানে চলে যায়।’

আজকের বাজার:এলকে/এলকে ২৮ অক্টোবর ২০১৭