রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের কারণ খোঁজার তাগিদ

উপমহাদেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ কেন বারবার হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের এর কারণ খুঁজে বের করার অনুরোধ জানিয়েছেন ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। মঙ্গলবার ১৬ জানুয়ারি দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ আবদুর রব হলের মাঠে আয়োজিত বিশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান। এসময় তাকে ডি. লিট উপাধিতে ভূষিত করা হয়।

বাংলা ভাষায় প্রায় ৩৯ মিনিটের দীর্ঘ বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘১৯৪৮ সালে ৩ জানুয়ারি মহাত্মা গান্ধী, ১৯৫৯ সালে শ্রীলঙ্কার সলোমান বন্দরনায়েক, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ৩ ডিসেম্বর জাতীয় চার নেতা, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হক, জুলফিকার আলী ভুট্টোর ফাঁসি, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রানাসিঙ্গে প্রেমাদাসা নিহত হয়েছেন। এই উপমহাদেশে বারবার স্বাধীনতায় নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক নেতাদের ওপর আক্রমন এসেছে।’

প্রণব মুখার্জি বলেন, ‘সর্বযুগের অন্যতম বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণের পর সাড়ে সাত মাস অসহ্য নির্যাতিন, লাঞ্ছনা, প্রাণত্যাগের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করেছে। একটি নতুন দেশ স্বাধীনের পর দারিদ্র্যতা, বেকারত্বসহ অসংখ্য সমস্যার মধ্যে ছিল, ঠিক তখন বড় আঘাত আসে। জন্মলগ্নে অর্থাৎ সাড়ে তিন বছরের মাথায় শেখ মুজিবকে স্ব পরিবারে হত্যা করা হয়েছিল।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও সমাজতত্ত্বের অধ্যাপক ও গবেষকদের এসব আক্রমণের কারণ খুঁজে বের করার অনুরোধ জানিয়েছেন ভারতের প্রথম এই বাঙালি রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, ‘উপমহাদেশে বিপুল সংখ্যক রাজনৈতিক নেতৃত্বকে নিশ্চিহ্ন করার পেছনে অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক কোন পরিপ্রেক্ষিতগুলো কাজ করেছে তা জানতে হবে আমাদের।’

বাংলাদেশের ‘ভাষা আন্দোলন’ বিরল ইতিহাস আখ্যা দিয়ে এর প্রশংসা করেন প্রণব মুখার্জি। তিনি বলেন, ‘আজ বাংলা আন্তর্জাতিক ভাষা। জাতিসংঘ এটিকে অন্যতম ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। বাংলা ভাষাকে প্রতিষ্ঠার জন্য অগণিত মানুষ আন্দোলন, ত্যাগ, রক্ত বিসর্জন দিয়েছেন। পৃথিবীর খুব বেশি দেশে এমন নজির নেই। ভাষা-সংস্কৃতির জন্য শহীদ হয়েছেন- এমন উদাহরণ বিভিন্ন দেশের ইতিহাস খুঁজে খুব বেশি পাওয়া যায় না।’

গণতন্ত্রের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে প্রণব মুখার্জি বলেন, ‘স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সংসদীয় গণতন্ত্র গ্রহণ করেছিল। মানুষের হাতে ক্ষমতা তুলে দিয়েছিল। ব্রহ্ম দেশসহ অনেক দেশ গণতন্ত্র গ্রহণ করেছে। কিন্তু বাংলাদেশ, ভারতসহ দুয়েকটি ছাড়া উপমহাদেশের অন্যান্য দেশে গণতন্ত্র তেমন মজবুত নয়। দীর্ঘদিন সামরিক শাসন চলেছে। কোন আর্থিক, সামাজিক পরিপ্রেক্ষিতে সৈন্যরা ব্যারাক থেকে রেরিয়ে ক্ষমতা দখল করেছে- তা দেখতে হবে। এর ফলেই সংসদীয় গণতন্ত্রের ভিত্তি মজবুত হতে পারেনি।’

বাংলাদেশের অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে প্রণব বলেন, ‘আইবিআরডির প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অগ্রগতির বিষয়টি স্বীকৃতি পেয়েছে। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের জাতীয় আয় ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু ল্যাটিন আমেরিকা, চীন, রাশিয়া, ভারতের উন্নয়নের স্রোতের গতি এই সময়ে অনেক কমেছে। বাংলাদেশ সামাজিক উন্নয়নে এগিয়েছে। অপুষ্টি দূরীকরণ, নারী শিক্ষার প্রসার, শিক্ষা ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ঘটেছে। আমি এই মাটিতে দাঁড়িয়ে উপলব্ধি করছি, গণতন্ত্রের মাধ্যমে দেশের উন্নয়নকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব।’

এর আগে দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিটে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) পৌঁছান প্রণব মুখার্জি। প্রথমে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে আয়োজিত সংবর্ধনা ও বিশেষ সমাবর্তনে যোগ দেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার তাকে ডি. লিট উপাধিতে ভূষিত করায় তিনি কৃতজ্ঞতা জানান।

আজকের বাজার:এলকে/১৭ জানুয়ারি ২০১৮