বর্তমানে বাংলাদেশের সামষ্টিক ব্যাংক ঋণের প্রায় ১১ শতাংশই খেলাপি ঋণ। ব্যাংক ঋণবিষয়ক স্বাক্ষরিত চুক্তিগুলো বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি এবং মধ্যস্থতা প্রক্রিয়াকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। বিদ্যমান অর্থ ঋণ আদালত আইন ২০০৩-কে যুগোপযোগী ও সংষ্কার করা একান্ত আবশ্যক বলে মনে করেন দি সিটি ব্যাংকের ইভিপি ও হেড অব লিগ্যাল ব্যারিস্টার শাফায়াত উল্ল্যাহ।
‘খেলাপি ঋণ আদায়ে এডিআরের ভূমিকা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় তিনি এ কথা বলেন। শনিবার (২১ জুলাই) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) অডিটোরিয়ামে এই বৈঠক হয়।
এ সময় বক্তারা বলেন, ‘বর্তমানে ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রতিনিয়ত বাড়ছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এ থেকে উত্তরণে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তিকে (এডিআর) বিকল্প পন্থা হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।’
বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল আরবিট্রেশন সেন্টার (বিয়াক) ও ডিসিসিআই যৌথভাবে এ বৈঠকের আয়োজন করে। আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ এবং সংসদবিষয়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ শহীদুল হক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন।
বিশেষ অতিথি ছিলেন মিডল্যান্ড ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আহসান-উজ জামান এবং ইউএ্যাবের বোর্ড অব ট্রাস্ট্রির বিশেষ উপদেষ্টা অধ্যাপক ইমরান রহমান। বিয়াক-এর চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান গোলটেবিল বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দি সিটি ব্যাংকের ইভিপি ও হেড অব লিগ্যাল ব্যারিস্টার শাফায়াত উল্ল্যাহ।
সচিব মোহাম্মদ শহীদুল হক বলেন, বর্তমানে আদালতে অর্থ ঋণবিষয়ক মামলার সংখ্যা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং সেক্ষেত্রে মামলা জট কমানো ও বিরোধ নিষ্পত্তিতে বিয়াক (বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল আরবিট্রেশন সেন্টার) অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে।
‘গত ৭ বছর ধরে বিয়াক খেলাপি ঋণ, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি, মধ্যস্থতা, প্রশিক্ষণ প্রভৃতি কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। আমাদের অবশ্যই সকলের জন্য সমান আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হবে এবং মামলা-মোকাদ্দমায় জড়ানোর আগে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি প্রক্রিয়ার আশ্রয় নেয়া গেলে অনেক ক্ষেত্রেই অহেতুক হয়রানি কমানো সম্ভব হবে”- বলেন তিনি।
সচিব জানান, উন্নত দেশগুলোতে যেখানে ২ শতাংশ খেলাপি ঋণ রয়েছে, সেখানে বাংলাদেশে ১০ শতাংশের অধিক খেলাপি ঋণ বিদ্যমান, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। খেলাপিঋণ কমাতে আইনের সংস্কারের প্রয়োজন হলে, সরকার তা করতে অত্যন্ত আগ্রহী।
মোহাম্মদ শহীদুল হক বলেন, খেলাপি ঋণ কমাতে প্রধান বিচারপতির কার্যালয়, আইন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন, অর্থ মন্ত্রণালয় এবং সব ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা একযোগে এগিয়ে আসতে হবে।
বিয়াক চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান বলেন, সাম্প্রতি সময়ে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির বিষয়টি আমাদের দেশে একটি উদ্বেগের বিষয়। খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমানো সম্ভব হলে আমাদের দেশের আর্থিক খাতকে আরও শক্তিশালী করা সম্ভব হবে।
তিনি আরও বলেন, এডিআর কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করার জন্য একটি গাইডলাইন তৈরির খসড়া প্রণয়নের জন্য বিয়াক, বাংলাদেশ ব্যাংক ও অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, ২০১৮ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৮৫ বিলিয়ন টাকা। বর্তমানে আমাদের মোট ঋণের ১০ দশমিক ৭৮ শতাংশ খেলাপি এবং ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে এর পরিমাণ ছিল ৯ শতাংশ।
আরএম/