ঋন খেলাপীদের শেয়ার বিক্রির চাপেই কি সূচকের বড় পতন?

আজও বড় পতনে শেষ হয়েছে শেয়ারবাজারের লেনদেন। সোমবার (২২ অক্টোবর) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ৭৯ পয়েন্ট কমেছে। এর মাধ্যমে ডিএসইর প্রধান সূচক ৫ হাজার ২শত ৫১পয়েন্টে নেমে এসেছে। এই সূচক প্রায় ২১ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম। এর আগে সর্বনিম্ন নেমেছিল ২০১৭ সালের ৯ জানুয়ারি- ৫হাজার ২১৪পয়েন্ট।

বাজার সংশ্লিষ্ঠ কেউ কেউ ধারণা করছেন হয়তো ঋন খেলাপীদের বিরুদ্বে টাকা আদায়ে সরকার কঠোর হওয়াতে তাদের বিনিয়োগকৃত শেয়ারের টাকা তুলে নিচ্ছে। কারো ধারনা সামনের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শৃষ্ট অনিশ্চয়তা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের আতংক কাজ করছে।

একাধিক বিনিয়োগকারীর সাথে আলোচনা করে জানা যায়, সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বুঝতেই পারছেন না বাজারে কি ঘটতে যাচ্ছে। নিতে পারছেন না কোন সিদ্বান্ত। চরম হতাশ সাধারন বিনিয়োগকারীরা।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ আজকের বাজারকে বলেন, বর্তমান পুঁজিবাজারের অবস্থা নিয়ে মন্তব্য করা খুবই কঠিন। যেভাবে টানা পতন শুরু হয়েছে সেটা খুবই দুঃখ জনক। তিনি ধারনা করে বলেন হয়তো ঋন খেলাপিদের ব্যপারে সরকার কঠোর হয়েছে তাই তাদের বিনিয়োগ তুলে নিচ্ছে তার কারনেও বাজারে বিক্রির চাপ হতে পারে, যেটা ডিএসই হয়তো বলতে পারবে। এছাড়া নির্বাচনের কারনে কিছুটা আতংকিত হতে পারে।

একাধিক মার্চেন্ট ব্যংক ও ব্রোকারেজ হাউজের উর্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করে জানা যায়, বাজারে টানা পতনের কোন কারন নেই তারপরও সূচক এবং লেনদেন দুইটাই চরম হতাশা তৈরী করছে। কেউ বলছেন বর্তমানে জুন ক্লোজিংয়ে যারা ভালো করেনি তাদের শেয়ারের দর তো পড়ছেই, পাশাপাশি যারা ভালো করেছে তাদের শেয়ারের দরও হারাচ্ছে। যেটা খুবই খারাপ লক্ষন।আগে বাজারে কারেকশন হলেও খাত ভিত্তিক হতো কিন্তু বর্তমানে তাও মানছে না। তবে কারো ধারনা যখন বাজার খারাপ যায় তখন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে সবাই পর্যবেক্ষন করে। যার কারনে বাজারে আত্ববিশ্বাস নেই। কেউ বলছেন আসন্ন নির্বাচনে কি ঘটতে যাচ্ছে? সে কারনেও অনেক প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা পর্যবেক্ষনের ভুমিকায় রয়েছেন।

সোমবার ডিএসইতে ৪৩৫ কোটি ৩২ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। যা আগের দিন থেকে ৪ কোটি টাকা কম। আগের দিন ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিল ৪৩৯ কোটি টাকার।

এদিকে ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৪০টি কোম্পানির মধ্যে ৬৪টি বা ১৮.৮২ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। অন্যদিকে দাম কমেছে ২৩৬টি বা ৬৯.৪১ শতাংশ কোম্পানির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৪০টি বা ১১.৭৬ শতাংশ কোম্পানির।
টাকার অঙ্কে ডিএসইতে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে খুলনা পাওয়ারের। এ দিন কোম্পানির ২৪ কোটি ৬২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। লেনদেনে দ্বিতীয় স্থানে থাকা ড্রাগন সোয়েটারের ২৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে এবং ২১ কোটি ২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনে তৃতীয় স্থানে রয়েছে সামিট পাওয়ার।

লেনদেনে এরপর রয়েছে- স্কয়ার ফার্মা, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস, ইফাদ অটোস, ভিএফএস থ্রেড ডাইং, বিবিএস কেবলস এবং ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন।

এদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই এদিন ২০৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ২০৬ পয়েন্টে। এদিন সিএসইতে হাত বদল হওয়া ২৩২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ৪১টির, কমেছে ১৬৫টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৬টির দর। সিএসইতে আজ মোট ১৮ কোটি ১৮ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।

জাকির/আজকের বাজার