হালকা প্রকৌশল খাতের উন্নয়নে প্রয়োজনীয় সকল সহায়তা প্রদানের বিষয়টি সরকারের সক্রিয়-বিবেচনায় রয়েছে। এছাড়াও, দেশের হালকা প্রকৌশল শিল্প খাতের টিকে থাকার স্বার্থে শিল্প-পণ্য আমদানী ও উৎপাদন উভয়ক্ষেত্রে একই রকম মুসক-ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ গ্রহণের প্রচেষ্টাও চলছে।
এ খাতের অপার সম্ভাবনা ও গুরুত্ব অনুধাবন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যেই ২০২০ সালকে ‘হালকা প্রকৌশল পণ্যবর্ষ’ হিসেবে ঘোষণা করেছেন। তাঁর এই ঘোষণার আলোকে শিল্প মন্ত্রণালয় দেশীয় এ শিল্প-খাতের সব-ধরনের সম্ভাবনা দেশের উন্নয়নে ব্যবহার করার লক্ষ্যে আন্তরিকভাবে কাজ করছে। আজ শনিবার অনলাইনে জুম-প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত ‘হালকা প্রকৌশল শিল্প খাতের সমস্যা, সম্ভাবনা ও করণীয়’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব তথ্য তুলে ধরেন।
শিল্পমন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্র (বিটাক) ও দৈনিক যুগান্তর যৌথভাবে এ বৈঠকের আয়োজন করে। শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন।
দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে বিশেষ অতিথি ছিলেন শিল্প সচিব কে এম আলী আজম। বিটাকের মহাপরিচালক ড. মোঃ মফিজুর রহমান অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।
শিল্প প্রতিমন্ত্রী বলেন,গার্মেন্টস খাতের মত হালকা প্রকৌশল খাতকেও সবধরনের সহায়তা প্রদান করার বিষয়টি সরকার সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে। হালকা প্রকৌশল শিল্প পণ্য আমদানী ও উৎপাদন উভয়ক্ষেত্রে একই রকম মুসক-ব্যবস্থা থাকার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে বলেও তিনি জানান।
রূপকল্প-২০৪১’র লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে হালকা প্রকৌশল খাত অত্যন্ত শক্তিশালী ভূমিকা রাখবে, এই আশাবাদ ব্যক্ত করে শিল্প প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ খাতের গুরুত্ব অনুধাবন করে প্রধানমন্ত্রী ২০২০ সালকে ‘হালকা প্রকৌশল পণ্যবর্ষ’ ঘোষণা করেছেন।
তিনি বলেন, কৃষি, মোটর-পরিবহন, নৌযান-চলাচল, মুদ্রণসহ অন্যান্য সকল শিল্প কারখানার জন্য যাবতীয় স্পেয়ার পার্টস বা খুচরা যন্ত্রাংশ তৈরি ও মেরামত করার ক্ষেত্রে দেশের হাজার হাজার ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ গুরুত্বপূর্ন অবদান রেখে চলেছে।
কামাল আহমেদ মজুমদার এসময় উল্লেখ করেন,দেশে হালকা প্রকৌশল শিল্পখাতে ৫০ হাজারেরও বেশী কারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় প্রত্যক্ষভাবে ৮ লাখ এবং পরোক্ষভাবে আরো প্রায় ৬০ লাখ মিলিয়ে মোট ৭০ লাখ মানুষ তাদের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছে।
এই বৈঠকে প্রতিমন্ত্রী জানান,পৃথিবীর দেশগুলোতে হালকা প্রকৌশল খাতের বাজারের পরিমাণ প্রায় ৮ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ বিশাল বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের বাজার সম্প্রসারণে উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদানের ব্যাপারেও তিনি আশ্বাস দেন।
শিল্প সচিব বলেন, দেশে উৎপাদিত হালকা প্রকৌশল শিল্প-পণ্যের বাজার দেশে-বিদেশে সম্প্রসারণের জন্য এ খাতের উদ্যোক্তাদের পলিসি সাপোর্ট প্রদান করা হবে। এ খাতের জন্য পৃথক একটি নীতিমালা প্রণয়নের কাজ চলমান রয়েছে বলেও তিনি জানান। শিল্প সচিব এ খাতে জড়িত জনশক্তির দক্ষতা-উন্নয়ন এবং দক্ষ ও মেধাবী জনশক্তির দেশে অবস্থান নিশ্চিত করার ওপরও জোর গুরুত দেন।
ইঞ্জিনিয়ারিং মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক, বিসিকের চেয়ারম্যান মোশ্তাক হাসান,এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুল ইসলাম, বিটাকের পরিচালক ড. ইহসানুল করিম, বুয়েটের প্রফেসর কামাল উদ্দিন, এমআইএসটির প্রফেসর ড. এ কে এম নূরুল আমিন, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সদস্য শাহ মোঃ আবু রায়হান আল বেরুনী ও ডেপুটি চিফ মোঃ রায়হান উবায়দুল্লাহ প্রমুখ গোল টেবিল বৈঠকে অংশ গ্রহণ করেন।
বক্তারা সম্ভাবনাময় দেশিয় হালকা প্রকৌশল খাতের উন্নয়নে বিদ্যমান কর-কাঠামো পুনর্বিবেচনা করে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে স্থানীয় উৎপাদনকারীদের অবস্থান দৃঢ় করার পরামর্শ দেন। এছাড়াও বিদ্যমান দক্ষ ও অদক্ষ জনবলের যুগোপযোগি দক্ষতা অর্জন ও উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় ঋণ-সুবিধা নিশ্চিতের ওপরও গুরুত্ব আরোপ করেন। খবর-বাসস
আজকের বাজার/আখনূর রহমান