একই সূত্রে গাঁথা ১৫ ও ২১ আগস্টের হত্যাকান্ড

পনের ও একুশ আগস্টের হত্যাকান্ড একই সূত্রে গাঁথা। এই দুই হত্যাকান্ডে পেছনে থেকে যারা ষড়যন্ত্র করেছে এবং এখনো করে যাচ্ছে, তাদের চিহ্নিত করতে দক্ষিণ আফ্রিকার ট্রুথ কমিশনের আদলে একটি কমিশন গঠন করা জরুরি।

বিএনপি জামাতের হত্যা ষড়যন্ত্র, ২১ আগস্টের মদদদাতা ও খুনীদের বিচারের দাবিতে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক অনলাইন আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথা বলেন।

যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজেদুর রহমান ফারুকের পরিচালনায় শুক্রবার রাতে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রখ্যাত সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও অমর একুশের গানের রচয়িতা আবদুল গাফফার চৌধুরী।

সভায় প্রধান আলোচক ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু এমপি, প্রধান বক্তা ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি, বিশেষ অতিথি ছিলেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এমপি, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ. ফ. ম. বাহাউদ্দীন নাসিম এমপি, দলের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন এবং দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া।

আবদুল গাফফার চৌধুরী বলেন, ‘পনের আগস্ট এবং একুশ আগস্টের হত্যাকান্ড একই সূত্রে গাঁথা। এই দুই ঘটনায় সামনে থেকে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের বিচার হয়েছে। এই দুই হত্যাকান্ডের পেছনে থেকে যারা ষড়যন্ত্র করেছে এবং এখনো করে যাচ্ছে তাদের চিহ্নিত করতে দক্ষিণ আফ্রিকার ট্রুথ কমিশনের আদলে একটি কমিশন গঠন করা জরুরি। না হলে ষড়যন্ত্রকারীরা আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার ষড়যন্ত্র অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাবে।’

তিনি বলেন, একুশ আগস্ট আমাদের জাতীয় জীবনে বিরাট কলঙ্কের ছাপ রেখে গেছে। ২১ আগস্ট নতুন কোন ষড়যন্ত্র নয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এবং ৩ নভেম্বর হত্যাকান্ডের ধারাবাহিকতায় ঘটেছে ২১ আগস্ট হামলা। ১৫ আগস্ট যে কারণে নিষ্ঠুর হত্যাকান্ড হয়েছিল, সেই একই কারণে ২১ আগস্টের ঘটনা ঘটানো হয়েছিল।

আবদুল গাফফার চৌধুরী বলেন, সেদিনেরও উদ্দেশ্য ছিল বঙ্গবন্ধু, তাঁর পরিবারের সদস্যরাসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগের নেতৃবৃন্দকে হত্যা করে বাংলার স্বাধীনতার লক্ষ্য ও ভিত্তিকে নস্যাৎ করা এবং এটি ছিল বাংলাদেশকে পাকিস্তানের একটি স্যাডো রাষ্ট্রে পরিণত করার ষড়যন্ত্র। ওই ষড়যন্ত্রের পেছনে পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা, আমেরিকার সিআইএ এবং বিএনপি-জামাতের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান এবং খন্দকার মোস্তাকের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের একটি অংশ জড়িত ছিল।

তিনি আরো বলেন, সেই ষড়যন্ত্রের কারণে ২১ বছর আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার বাইরে ছিল। ওই সময়টতে বঙ্গবন্ধুর নাম পর্যন্ত উচ্চারণ করা যায়নি। নানাভাবে আওয়ামী লীগকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিন্তু শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দল আবারো শক্তভিত্তির উপর দাঁড়াতে সক্ষম হয়, এতে ঘাতকেরা ভয় পায়। শেখ হাসিনাকে কিভাবে সরিয়ে দেয়া যায় এজন্য আবারো শুরু হয় নানা ষড়যন্ত্র। তারা বিএনপি জামাতের নেতৃত্বে প্রকাশ্য দিবালোকে আওয়ামী লীগের জনসভায় হামলা চালায়। এর পেছনে বেগম খালেদা জিয়া, তার পুত্র তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরী, জামাতের মোস্তাফিজুর রহমান জড়িত ছিল।

আবদুল গাফফার চৌধুরী বলেন, তারেক রহমান যে দেশে যেতে ভয় পায়, এর একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টার অপরাধে তাকে সাজা যে পেতে হবে এবং তা থেকে সে রেহাই পাবে না এটা সে বুঝতে পেরেছে।

তিনি বলেন, ‘১/১১ ষড়যন্ত্রের পেছনে যারা ছিল, তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন ড. কামাল হোসেন। আওয়ামী লীগে খন্দকার মোস্তাক যে ষড়যন্ত্র করেছে, তার চেয়েও ভয়াবহ ষড়যন্ত্র করেছে ড. কামাল হোসেন। মোস্তাকের ষড়যন্ত্র ধরা পড়েছে, কিন্তু ড. কামালের ষড়যন্ত্র দীর্ঘদিন ধরা পরেনি। তিনি বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকে বঙ্গবন্ধুর পেছনে ষড়যন্ত্র করেছেন। শেখ হাসিনাকেও নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দিতে অনেক ষড়যন্ত্র করেছেন।’

আমির হোসেন আমু বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্যদিয়ে মোস্তাক-জিয়া চক্র বাংলাদেশকে একটি নব্য পাকিস্তানে পরিণত করার যে ষড়যন্ত্র হয়েছে, ঠিক তেমনিভাবে ওই একই সূত্র সেদিন সরকারি মদদে শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে একুশ আগস্টের হামলা চালায়। ওই সময় সংসদে তৎকালীন বিরোধী দলের নেতার উপর এই হামলার ঘটনা নিয়ে আলোচনার কোন সুযোগ দেয়া হয়নি, কারণ তাহলে তাদের মুখোশ উন্মোচিত হয়ে যেতো। এসব কিছুই প্রমান করে ওইদিনের হত্যাকান্ডের সাথে তাদের সরাসরি সম্পৃক্ততা ছিল।

তিনি বলেন, সেদিন আল্লাহর অশেষ রহমতে শেখ হাসিনা বেঁচে গিয়েছিলেন বাংলার ১৬ কোটি মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য। আজকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বের বিষ্ময়, উন্নয়নের রোল মডেল। এদেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে এ পর্যন্ত যা কিছু হয়েছে, তার সবকিছুই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে হয়েছে। সেদিন ২১ আগস্টে শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টার মধ্যদিয়ে একাত্তরের পরাজিত শক্তি এদেশের উন্নয়ন অগ্রগতিকে পিছিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র করেছিল।

তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ২১ আগস্টের হত্যাকান্ডটি ছিল একটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। সেদিন তৎকালীন বিরোধী দলের নেতা শেখ হাসিনাসহ দলের নেতৃবৃন্দকে হত্যা করে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলা করা হয়েছিল। সেদিনের ঘটনাটি ঘটেছিল প্রকাশ্য দিবালোকে। আর, তখন শেখ হাসিনা ছিলেন সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা এবং বাংলাদেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দলের সভাপতি।

তিনি বলেন, একাত্তরের পরাজিত শক্তি যারা এদেশের স্বাধীনতা চায়নি, তারা ৭৫’এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যা করেছে। ২১ আগস্টেও হাওয়া ভবনের প্রত্যক্ষ মদদে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলা করা হয়েছিল। যার সবকিছুই পরবর্তীতে তদন্তে বেরিয়ে এসেছে।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, সেদিন খালেদা-নিজামীর নেতৃত্বাধীন সরকার প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করে খালেদা জিয়ার জ্ঞাতসারে তারেক রহমানের পরিচালনায় এ গ্রেনেড হামলা করা হয়েছিল। সেদিন শুধু গ্রেনেড হামলা করেই তারা থেমে থাকেনি। হাসপাতালে আহত নেতাকর্মীদের চিকিৎসা দেয়া হয়নি। আশেপাশের ওষুধের দোকানগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। নেতাকর্মীদের উপর লাঠিচার্জ করা হয়েছিল। তৎকালীন ঢাকার মেয়র সাদেক হোসেন খোকা পানি দিয়ে ঘটনার আলামতসহ রক্তের দাগ মুছে দিয়েছিলেন। ঘটনার আলামত হিসেবে একটি অবিস্ফোরিত গ্রেনেড রেখে দেয়ার অপরাধে তখন একজন সামরিক কর্মকর্তা মেজর সামসকে চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে। জজ মিয়া নাটক সাজানো হয়েছে। সেদিন সংসদে একটি নিন্দা প্রস্তাব আনতে দেয়া হয়নি।

তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান শতশত মুক্তিযোদ্ধা সেনা অফিসারকে হত্যা করেছে। এই হত্যা, ক্যু এর রাজনীতি থেকে পরবর্তীতে খালেদা জিয়াও বেরিয়ে আসতে পারেনি। এরই ধারাবাহিকতায় ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। শুধু সেদিনই শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা হয়েছে তা নয়, ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামে পাখি শিকার করার মতো মানুষ শিকার করে তাঁকে হত্যার অপচেষ্টা করা হয়েছে।

দেশের ভেতরে তিনি যখন সফরে যেতেন তখনও তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র হয়েছে। ৩২ নম্বরে ফ্রিডম পার্টিকে দিয়ে হামলা পরিচালনা করা হয়েছে। এভাবে ১৯ বার তাঁকে হত্যা চেষ্টা করা হয়েছে। খবর-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান