এখনও রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন ও গণহত্যা চালাচ্ছে মিয়ানমার

FILE - In this Sunday, Oct. 22, 2017, file photo, a Rohingya Muslim woman, Rukaya Begum, who crossed over from Myanmar into Bangladesh, holds her son Mahbubur Rehman, left and her daughter Rehana Bibi, after the government moved them to newly allocated refugee camp areas, near Kutupalong, Bangladesh. A team of independent investigators examining alleged violence and killings in Myanmar that caused hundreds of thousands of Rohingya Muslims to flee their homes have issued a searing critique of the United Nations' own operations in the country just as bloodshed erupted in August 2017. (AP Photo/Dar Yasin, File)

জাতিসংঘের তদন্তকারীরা জানিয়েছে, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নির্যাতন ও গণহত্যা এখনো অব্যাহত আছে। মিয়ানমার সরকারের সম্পূর্ণরূপে কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় কোনো আগ্রহ নেই।

বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘ ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের প্রধান মারজুকি দারুসমান জানান, গত বছরের আগস্ট থেকে বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ট মিয়ানমারে নৃশংস দমন-নিপীড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা। জীবন বাঁচাতে এখনো বাংলাদেশে ঢুকছে হাজার হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী।

তিনি বলেন, মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলের রাখাইন রাজ্যে এখনো রোহিঙ্গা নিধন করা হচ্ছে। শারীরিক নির্যাতন ও গণহত্যা অব্যাহত থাকায় বাংলাদেশে রোহিঙ্গা প্রবেশ এখনো চলছে।

এদিকে জাতিসংঘে নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত হাউ দো সুয়ান ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনকে ‘ত্রুটিপূর্ণ, পক্ষপাতদুষ্ট এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক’ অভিহিত করে বলেন, মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে ‘গণহত্যার উদ্দেশ্য’ স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে’।

সংবাদ সম্মেলনে মিয়ানমারের মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ তদন্তকারী ইয়াংহি লি বলেন, তিনি এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অনেকেই আশা করেছিলেন মিয়ানমার নেত্রী অং সান সু চি’র নেতৃত্বে দেশটির পরিস্থিতি ‘অতীতের চেয়ে অনেক আলাদা হবে – কিন্তু বাস্তবে এটি অতীতের চেয়ে বেশি আলাদা হয়নি’।

লি বলেন, শান্তিতে নোবেলজয়ী, সাবেক রাজনৈতিক বন্দী এবং বর্তমানে মিয়ানমারের বেসামরিক সরকারের নেতৃত্ব দেয়া সু চি, তিনি মনে করেন যে বৌদ্ধ-সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারের সেনাবাহিনী কর্তৃক রোহিঙ্গাদের ওপর ধর্ষণ, হত্যা, নির্যাতন এবং তাদের গ্রাম পুড়িয়ে মারার অভিযোগে ‘পুরোপুরি অস্বীকার’ করেছে। ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে সাত লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাধ্য হয়ে নিজ দেশ ছেড়ে বাংলাদেশ পালিয়েছে।

‘মিয়ানমার সরকার ক্রমশ দেখিয়েছে যে তাদের সম্পূর্ণরূপে কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় কোনো আগ্রহ নেই যেখানে সকল মানুষ সমভাবে তাদের সকল অধিকার ও স্বাধীনতা ভোগ করতে পারবে। দেশটির সরকার ন্যায়বিচার ও আইনের শাসনকে সমর্থন করে না’, বলেন লি।

‘এরকম চলতে থাকলে মানুষ নিরপেক্ষভাবে ন্যায্য বিচার পাবে না, দোষী সাব্যস্ত করা হবে না এবং আইন নিপীড়নের অস্ত্র হিসেবে গণ্য করা হবে না’, যোগ করেন তিনি।

সু চি’র সরকার রোহিঙ্গা নির্যাতনের অভিযোগের বিষয়ে স্বাধীন আন্তর্জাতিক তদন্ত প্রত্যাখ্যান করেছে এবং নিজস্ব তদন্ত পরিচালনা করেছে। এছাড়া মিয়ানমার সরকার ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের প্রতিবেদনও প্রত্যাখ্যান করেছে, যাতে বলা হয়, যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং রোহিঙ্গাদের গণহত্যার জন্য দেশটির শীর্ষ সামরিক নেতাদের বিচার করা উচিৎ।

দারুসমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘মিয়ানমার সরকারের কঠোর অবস্থান এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় বাধা। তাদের অব্যাহত অস্বীকার, জাতীয় সার্বভৌমত্বের আচ্ছাদনে নিজেদের রক্ষা করার প্রচেষ্টা এবং আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে সাম্প্রতিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ও পরিস্থিতি সম্পর্কে ৪৪৪ পৃষ্ঠার বিবরণী প্রত্যাখ্যানের কারণে মিয়ানমারের কাছ থেকে জবাবদিহিতা কোনোভাবেই আশা করা যায় না।’

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের আগে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন দারুসমান এবং লি।

মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে বুধবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এক বিশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, সুইডেন, আইভরি কোস্ট, কুয়েত, পেরু এবং পোল্যান্ড রোহিঙ্গা নির্যাতনের দায়বদ্ধতা নিশ্চিতের বিষয়ে ‘হ্যা’ ভোট দেয়। চীন, রাশিয়া ও বলিভিয়া ‘না’ ভোট দিয়েছে এবং গিনি, ইথিওপিয়া ও কাজাখস্তান ভোট দেয়নি।

তথ্যসূত্র-ইউএনবি

আজকের বাজার/এমএইচ