এনআইডির তথ্য চুরি করে সিম বিক্রি করছে জালিয়াতরা

দেশে একটি জালিয়াত চক্র নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) তথ্য চুরি করে সেগুলোর মাধ্যমে মোবাইল সিম বিক্রি করছে। বাংলাদেশে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) তদন্তে এই তথ্য উঠে এসেছে।

সম্প্রতি ঢাকা এবং রংপুরে অভিযান চালিয়ে সিআইডি রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত মোবাইল টেলিফোন কোম্পানি টেলিটকের ১২০০ সিম জব্দ করেছে। সেগুলো বিভিন্ন ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ব্যবহার করে এসব সিম ক্রয়-বিক্রয় করা হয়েছে।

সিআইডি বলেছে, যাদের জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে তারা হয়তো জানতেনই না যে জালিয়াত চক্র এ কাজ করছে।

সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার রাজীব ফারহানের বরাত দিয়ে বিবিসির এক বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যারা এসব তথ্য চুরি করেছে, তাদের কেউ কেউ কোম্পানির ভেতরে কর্মরত আছেন।

রাজীব ফারহান বলেন, যারা এ কাজগুলো করছে, আমি এখন মোটামুটি নিশ্চিত যে তাদের ওই ধরনের একসেস (প্রবেশাধিকার) আছে সিস্টেমে। একারণেই যেখানে যেখানে তারা বাধার সম্মুখীন হয়েছে সেখানেও তারা পার পেয়েছে।

তিনি মনে করেন, এই বিশেষ ঘটনায় দেখা গেছে মোবাইল ফোন গ্রাহকদের তথ্য সংরক্ষণ ব্যবস্থা খুবই দুর্বল।

সিআইডি বলছে, এসব মোবাইল সিম চাঁদাবাজি, মানুষকে ভয়ভীতি দেখানো, অবৈধ অর্থ লেনদেনসহ নানা অপরাধের জন্য ব্যবহার করা হতো। এসব অপরাধের তদন্ত করতে গিয়ে যাদের নামে সিম কেনা হয়েছে, পুলিশ কখনো-কখনো তাদের পাকড়াও করছে। পরবর্তীতে দেখা যায়, তাদের নামে সংযোগ ব্যবহার করে অন্যরা অপরাধ করছে।

এবিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য প্রযুক্তি ইন্সটিটিউটের শিক্ষক মইনুল হোসেন বলেন, নাগরিকদের তথ্য মোবাইল কোম্পানি কিংবা অন্য কর্তৃপক্ষের কাছে কতটা নিরাপদ সে প্রশ্ন উঠেছে।

তিনি বলেন, সারা জীবনে যদি একবারও আপনার ফিঙ্গার প্রিন্ট চুরি হয়ে জালিয়াত চক্রের কাছে চলে যায়, তাহলে কিন্তু সারা জীবনের জন্য আপনার ডেটা (তথ্য) চলে গেল। জনগণ যখন ফিঙ্গার প্রিন্ট দেয়, তখন তারা আশা করে এটা সর্বোচ্চ সতর্কতার সাথে তার প্রাইভেসি রক্ষা হবে।

এই অবস্থায় তিনি প্রতি ছয় মাস পর-পর তথ্য সংরক্ষণ ব্যবস্থার নিরাপত্তা যাচাই করার পরামর্শ দেন।

উল্লেখ, মোবাইল ফোনের গ্রাহকদের আঙুলের ছাপ এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে যখন রেজিস্ট্রেশনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল তখন তথ্যের নিরাপত্তা নিয়ে অনেকেই সন্দেহ পোষণ করেছিলেন। সমালোচকরা এমন আশংকাও প্রকাশ করেছিলেন যে নাগরিকদের তথ্য বেহাত হয়ে যেতে পারে।

তবে এই ঘটনার পরেও বাংলাদেশে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন বা বিটিআরসির চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ মনে করেন, এক্ষেত্রে মোবাইল অপারেটরদের চেয়ে খুচরা পর্যায়ের বিক্রেতারা বেশি দায়ী।

তিনি বলেন, যেহেতু আমরা একজন ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ ১৫টা সিম অ্যালাউ করি, সেজন্য কোনো একটা লোক যখন সিম নিতে যায় তখন সে ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে একটা সিম নিয়ে চলে গেল। তখন বাকি ১৪টা সিম ওর নামে নিয়ে রিটেইলার রেখে দেয়। রেখে দিয়ে তখন আরেকজনের কাছে বিক্রি করে।

বিটিআরসির চেয়ারম্যান বলেন, অনেক খুচরা বিক্রেতা ইচ্ছাকৃতভাবে ক্রেতাদের একাধিক ফিঙ্গার প্রিন্ট বা আঙুলের ছাপ নেয়। এর মাধ্যমে অনেকে খুচরা বিক্রেতা জালিয়াতির আশ্রয় নেয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।

আজকের বাজার:এলকে/এলকে ৮ নভেম্বর ২০১৭