শেষ পর্যন্ত বন্ধই হয়ে গেল বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসবের এবারের আসর। সব আয়োজন তৈরি ছিল, বিদেশি শিল্পীদের শিডিউল নেয়া ছিল শুধু ভেন্যু বরাদ্দ না পাওয়ায় এবছর এই উৎসব আয়োজন বন্ধ ঘোষণা করলো বেঙ্গল ফাউন্ডেশন।
রোববার ২২ অক্টোবর হোটেল ওয়েস্টিনে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের লিটু উৎসব আয়োজন বন্ধের এই ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, বড় পরিকল্পনা ছিল সম্পূর্ণ আয়োজন শেষ করে আনার পর আর্মি স্টেডিয়াম বরাদ্দ না পাওয়ায় এবারের উৎসব আয়োজন বন্ধ করতে বাধ্য হলাম। উৎসব করতে না পারার জন্য আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। বক্তব্য দিতে গিয়ে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়েন আবুল খায়ের লিটু। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, অনেকে আমাকে পছন্দ নাও করতে পারেন কিন্তু এ উৎসব জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়েছিল। এ উৎসব রাষ্ট্রের উৎসব। এরসঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তির প্রশ্ন।
সাংবাদিক সম্মেলনে ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান, বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী এবং কালি ও কলম সম্পাদক কবি আবুল হাসনাত উপস্থিত ছিলেন। এসময় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আগামি বছর উৎসব আয়োজনের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
আয়োজকরা জানান, নিরাপত্তা সংক্রান্ত কারণ দেখিয়ে এবার বরাদ্দ দেয়া হয়নি উৎসবের প্রতিবারের ভেন্যু আর্মি স্টেডিয়াম। বেঙ্গল ফাউন্ডেশনকে দেয়া চিঠিতে ভেন্যু কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, আগামি ৩০ নভেম্বর ক্যাথলিক ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস তিন দিনের সফরে ঢাকা আসছেন। তার নিরাপত্তার কারণে এবার আর্মি স্টেডিয়াম বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসবের আয়োজনের জন্য বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে না। বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ২৩ থেকে ২৭ নভেম্বর এই পাঁচদিন উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত উৎসব আয়োজনের জন্য আবেদন করা হয়েছিল।
বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান বলেন, ‘বিগত পাঁচ বছর আয়োজন করতে পারায় সরকারের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। এবছর সরকার করতে দিচ্ছে না বা জায়গা দিতে পারছে না নিশ্চয়ই তার কোন কারণ আছে। সরকারের কাছে অনুরোধ যে কারণই থাকুক না কেন এই উৎসব যেন বন্ধ না হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অনুরোধ আমরা করতে না পারলেও সরকার যেন এ উদ্যোগ চালু রাখে। বেঙ্গল ফাউন্ডেশন নাইবা করলো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অন্য কেউ যেন এটা চলমান রাখে।
তিনি আরো বলেন, আমার কথা কেন যেন ফলে যায়। গতবছর উৎসব শেষের দিন বলেছিলাম যদি সরকার অনুমতি দেয় তবে পরের বছর ভালভাবে করবো। মনের মধ্যে শঙ্কা ছিল। সেই শঙ্কা ফলে গেল।
আবুল খায়ের বলেন, সরকার অন্য কোন ভেন্যুতে আয়োজন করার কথা জানিয়েছিল তবে আমরা সাহস পাইনি। বিদেশি শিল্পীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে আয়োজন অন্য ভেন্যুতে করবার ঝুঁকি নেইনি। বিদেশি শিল্পীদের নিরাপত্তার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মানের এ উৎসবের পুঙ্খানুপুঙ্খ পরিকল্পনা সারতেই আট মাস সময় লাগে। নিবিড়ভাবে সব দিক সমন্বয়ের পর পরিকল্পনা পরিবর্তন বা সংকোচন সম্ভব হয় না। উৎসবের পাঁচ বছরে যে চরিত্র দাঁড়িয়েছে, পরিবর্তন করলে তা বিপন্ন হবে। এ কারণে স্থান পরিবর্তন, তারিখ বা সময় পরিবর্তন কিংবা অনুষ্ঠান সংকোচন অথবা শিল্পী পরিবর্তন- এর কোনটাই এ পর্যায়ে সমীচীন হবে না।
সাংবাদিক সম্মেলনে জানানো হয়, এ বছরের মার্চে বেঙ্গলের পক্ষ থেকে ভেন্যু বরাদ্দের আবেদন করা হয়। পরে ৩১ আগস্ট প্রেরিত এক চিঠিতে আমরা জানতে পারি ভেন্যু দেয়া হচ্ছে না। কারণ হিসেবে পোপ ফ্রান্সিসের নিরাপত্তার কথা বলা হয়েছে। তিনি জানান, নিরাপত্তার বিষয়টিকে আমরাও গুরুত্ব দেই। সেক্ষেত্রে আলোচনার মাধ্যমে পোপ ফ্রান্সিসের সফরের আগে পরে কোন একটা সময় আমরা নির্ধারন করতে পারতাম। এই বিষয়গুলো পুনর্বিবেচানর জন্য ৯ সেপ্টেম্বর আমরা ভেন্যু কর্তৃপক্ষকে একটি চিঠি দিয়েছি। কিন্তু তার উত্তর আর পাওয়া যায়নি।
আজকের বাজার: আরআর/ ২২ অক্টোবর ২০১৭