এমপিও’র দরজা বন্ধ ৮ বছর

মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার তথা এমপিও ভুক্তির দাবিতে বিভিন্ন সময় ননএমপিও শিক্ষকরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট অফিসে ধরণা দিয়েছেন অনেকবার। শেষ পর্যন্ত আমরণ অনশন কর্মসূচির পথ বেছে নিয়েছেন তারা।

গত ২৬ ডিসেম্বর থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এমপিও ভুক্তির দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন সারা দেশ থেকে আসা ননএমপিও শিক্ষকরা। এরপর দাবি আদায়ে গত রোববার থেকে আমরণ অনশণ কর্মসূচি শুরু করেছেন তারা। আজও চলছে সে কর্মসূচি।

এদিকে দীর্ঘ সময় নতুন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হয়নি বলে জানা যায়। ফলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক এবং ননএমপিও অন্য শিক্ষকদের মধ্যেও অসন্তোষ চলে আসছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ ২০০৯ সালের ১৬ জুন নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়। এরপর আর কোনো প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। অর্থাৎ সাড়ে ৮ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে এমপিওভুক্তির দরজা। বর্তমানে সারা দেশের প্রায় সাড়ে ৭ হাজার নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান বলছে, সর্বশেষ ২৬ হাজার ১৮০টি প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে স্কুল ১৬ হাজার ১৯৭টি, কলেজ ২ হাজার ৩৬৫টি, মাদ্রাসা ৭ হাজার ৬১৮টি। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন বাবদ সরকার প্রতি মাসে ৯৪১ কোটি ৫০ লাখ ২৪ হাজার ৭১১ টাকা ব্যয় করছে।

এ দিকে এমপিওভুক্তির অপেক্ষায় থাকা সাড়ে ৭ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
গত মঙ্গলবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে দেখা করে নতুন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির জন্য অর্থ বরাদ্দ চেয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। দুই মন্ত্রীর আলোচনা শেষে এ বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও জানা যায়।

অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে নিজ মন্ত্রণালয়ে ফিরেই শিক্ষামন্ত্রী নতুন প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির সঠিক ব্যয় নির্ধারণ করে মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরকে (মাউশি) নির্দেশ দেন। গতকাল বিকেলেই মাউশি সম্ভাব্য ব্যয় নির্ধারণ করে তা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। এ নিয়ে বিচার-বিশ্নেষণ করে আজ বুধবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব দিতে পারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গতকাল শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলাপকালে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এমপিওভুক্তির অর্থ যেন অপচয় না হয় সে জন্য সঠিক একটি নীতিমালা প্রণয়নের ওপর জোর দেন। শিক্ষামন্ত্রী একটি প্রস্তাবিত নীতিমালা তৈরি করেই নিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি তা অর্থমন্ত্রীর হাতে তুলে দিয়ে বলেন, ‘আপনারা এটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখুন। প্রয়োজনে সংযোজন-বিয়োজনও করতে পারেন। চূড়ান্ত করা নীতিমালা অনুসারেই এমপিওভুক্ত করা হবে।’ আবুল মাল আবদুল মুহিত গতকালই দেশের বাইরে গেছেন। তিনি ফিরলে এ বিষয়ে অর্থ ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মধ্যে যৌথ সভা হতে পারে।

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, অর্থমন্ত্রীর এমপিওভুক্তির বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন। তার আশ্বাসের ওপর ভর করে আমরা প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।

আজকের বাজার : আরএম/ এলকে ৩ জানুয়ারি ২০১৮