এমসি কলেজে গৃহবধূ গণধর্ষণ মামলা, সাক্ষী-বাদী-আইনজীবীকে নিরাপত্তা দিতে হাইকোর্টের নির্দেশ

সিলেট এমসি কলেজ ছাত্রাবাস এলাকায় গৃহবধূর গণধর্ষণের ঘটনায় করা মামলার বাদী, সাক্ষী, আইনজীবীকে নিরাপত্তা দিতে সিলেটের পুলিশ কমিশনারের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি এম, ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ আজ আদেশ দেন।
গণধর্ষণের ঘটনার পর করা মামলায় দুটি আদালতে হওয়া ভিন্ন অভিযোগের বিচার সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালকে করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী।
আবেদনকারী পক্ষে আইনজীবী ব্যারিস্টার এম আব্দুল কাইয়ুম লিটন বলেন, গনধর্ষণের ঘটনায় আনা মামলার দুই ধারায় চার্জশিট দেয় পুলিশ।ধর্ষণের অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে এবং ভয়ভীতি, চাঁদাবাজির অভিযোগে দায়রা জজ আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। পরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচার শুরু হয়। তখন আমরা বলেছি, দু’টি অভিযোগের বিচার একসঙ্গে হোক, কিন্তু ২৪ জানুয়ারি আমাদের সে আবেদন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক নাকচ করে দেন। এরপর আমরা হাইকোর্টে আবেদন করি।
তিনি বলেন, আজ শুনানি শেষে হাইকোর্ট দুই অভিযোগের বিচার একই আদালতে করতে নির্দেশ দিয়েছেন। একইসঙ্গে মামলার বাদী, সাক্ষী ও বাদীপক্ষের আইনজীবীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সিলেট পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া, কোনো আসামির আইনজীবী না থাকলে তাকে আইনজীবী দিতে বলা হয়েছে।
গত ১৭ জানুয়ারি এ মামলায় অভিযোগ গঠনের আদেশ দেন সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। মামলাটি বতর্মানে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে।
গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীকে বেঁধে গৃহবধূকে গণধর্ষণ করে কয়েক যুবক। এ ঘটনায় ভিকটিমের স্বামী বাদী হয়ে শাহপরান থানায় মামলা দায়ের করেন।
এ মামলায় আটজনকে অভিযুক্ত করে নারী শিশু নির্যাতন দমন আইনে গত ৩ ডিসেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। তারা হলেন-সাইফুর রহমান, শাহ মাহবুবুর রহমান ওরফে রনি, তারেকুল ইসলাম ওরফে তারেক, অর্জুন লস্কর, আইনুদ্দিন ওরফে আইনুল ও মিসবাউল ইসলাম ওরফে রাজন, রবিউল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমান ওরফে মাসুম। আট আসামিই বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
ওই ঘটনায় চাঁদা দাবী, ছিনতাই ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ একটি এবং গণধর্ষণের অভিযোগে অপর মামলার বিচার একসাথে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে না হওয়ার প্রেক্ষাপটে আদালত পরিবর্তন চেয়ে ৩ ফেব্রুয়ারী হাইকোর্টে আবেদন করেন মামলার বাদী।
আবেদনের পক্ষে আইনজীবী আরো ছিলেন ব্যারিস্টার সাবরিনা জেরিন।
মহামারি করোনা পরিস্থিতির মধ্যে বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রাবাস এলাকায় জঘন্য এ ঘটনায় প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। পরে একে একে সব আসামিকে গ্রেফতার করে আইন শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী।
গণধর্ষণের ওই ঘটনার পর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর গত সেপ্টেম্বরে আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ মিসবাহ উদ্দিন। এরপর এ বিষয়ে শুনানি নিয়ে গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর একটি হাইকোর্ট দ্বৈত বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত রুলসহ আদেশ দেন। এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে ওই গনধর্ষণের ঘটনায় কলেজ কর্তৃপক্ষের অবহেলা নিরূপণে চার সদস্যের কমিটি গঠন করে দিয়ে তা অনুসন্ধান করতে নির্দেশ দেয়া হয়। কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে অনুসন্ধান প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। সিলেটের জেলা ও দায়রা জজ মো. বজলুর রহমান, অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মমিনুন নেসা, চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবুল কাশেম ও সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শারমিন সুলতানার সমন্বয়ে গঠিত কমিটি গত ২০ অক্টোবর হাইকোর্টে প্রতিবেদন জমা দেয়।