এরিকসেনের জীবন বাঁচাতে সাহায্যকারীদের পুরস্কৃত করলো উয়েফা

ইউরো চ্যাম্পিয়নশীপে মাঠের মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়া ড্যানিশ মিডফিল্ডার ক্রিস্টিয়ান এরিকসেনের জীবনরক্ষকারী একদল চিকিৎসকসহ ডেনমার্কের অধিনায়ক সিমন কায়েরকে প্রেসিডেন্ট’স এ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করেছে ইউরোপীয়ান ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা উয়েফা।

গত ১২ জুন কোপেনহেগেনের পারকেন স্টেডিয়ামে ফিনল্যান্ডের বিপক্ষে ইউরো চ্যাম্পিয়নশীপের প্রথম ম্যাচে ৪৩ মিনিটে হঠাৎ করেই মাটিতে লুটিতে পড়েন ২৯ বছর বয়সী এরিকসেন। ঐ সময় প্রথম দৌঁড়ে এসে প্রাথমিক জরুরী চিকিৎসা দেন কায়ের। ততক্ষনে ডেনমার্কের মেডিকেল দলও মাঠে প্রবেশ করে এরিকসেনকে দ্রুত হাসপাতালে নেবার ব্যবস্থা করেন।

উয়েফা সভাপতি আলেক্সান্দার সেফেরিন ড্যানিশ অধিনায়ক কায়েরসহ নয়জনকে এই পুরস্কারে ভূষিত করার সময় তাদেরকে ইউরো ২০২০’র সত্যিকারের নায়ক হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

সেফেরিন বলেন, ‘দুর্দান্ত তৎপরতা ও শান্ত থেকে পুরো পরিস্থিতি সামাল দেবার জন্য পুরো মেডিকেল দলের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তাদের ঐ তাৎক্ষনিক চিকিৎসায় এরিকসেনের জীবন রক্ষা পেয়েছে। এই বছরের প্রেসিডেন্ট’স অ্যাওয়ার্ড ফুটবলকে ছাপিয়ে গেছে। জীবন কতটা মূল্যবান তা আরো একবার এই ঘটনার মাধ্যমে আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছে। সেড়ে ওঠার পথে থাকা ক্রিস্টিয়ান এরিকসেন ও তার পরিবারের জন্য শুভকামনা জানাচ্ছি।’

এরিকসেন অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে মূল কাজটুকু করেছিলেন কায়ের। চিকিৎসক দল মাঠে প্রবেশের পূর্বে মাথা ঠান্ডা রেখে একজন প্রকৃত নেতার মতই তিনিই পুরো ঘটনা সামলেছেন।

এরিকসেনকে দেখার পাশাপাশি পুরো দলকেও শান্ত থাকার আহবান জানিয়েছেন। কায়ের বলেন, ‘এটা এমন একটি ঘটনা ছিল যা সারাজীবন আমাদের সকলের মনের মধ্যে থাকবে। আমরা সকলে একটি ইউনিট হিসেবে কাজ করেছি। সকলে একসাথে থাকার সর্বাত্মক চেস্টা করেছি, ঐ পরিস্থিতে যা খুবই প্রয়োজন ছিল।’

কায়ের বাদে এ্যাওয়ার্ড পাওয়া বাকি আটজনই মেডিকেল দলের সদস্য যারা ঐ মুহূর্তে মাঠে সকল সহযোগিতা করেছেন। বেশ কিছু সময়ের জন্য এরিকসেন জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলেন। বুকে চাপ দিয়ে ও পরবর্তীতে ইলেকট্রিক শক দিয়ে কৃত্রিমভাবে তার শ্বাসপ্রশ্বাস চালু রাখার চেষ্টা করা হয়।

দ্রুত মাঠে প্রবেশ করা ডেনমার্ক দলের চিকিৎসক ম্যাচ শেষে বলেছিলেন, একটা সময় এরিকসেনের হৃৎস্পন্দন প্রায় বন্ধই হয়ে গিয়েছিল। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে চিকিৎসক মার্টিন বোসেন বলেন, ‘আমি প্রথমে ওকে যখন দেখি, তখন সে নিশ্বাস নিতে পারছিল। তাঁর হৃৎস্পন্দন ছিল। কিন্তু হঠাৎ পরিস্থিতি পাল্টে যায়। তখন তাকে সিপিআর দিতে হয়। পুরো বিষয়টাই খুব দ্রুত হয়েছে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা এরিকসেনকে ফিরিয়ে আনতে পেরেছি।’

কোপেনহেগেনে ইউরো চ্যাম্পিয়নশীপের প্রধান মেডিকেল কর্মকর্তা মোগেন্স ক্রজফেল্ড বলেন, ‘আমাদের যা করার প্রয়োজন ছিল আমরা সেটাই করেছি। আমরা যা শিখেছি, যা ট্রেনিং করেছি সেটাই সবাই মিলে করার চেষ্টা করেছি। সবাই জানতো কার কি করতে হবে। ঐ মুহূর্তে আমরা কেউই আবেগপ্রবন হয়ে পড়িনি। কিন্তু অবশ্যই অন্য সকলের মত পুরো ঘটনাটা আমাদেরও বিচলিত করে তুলেছিল।’ নতুন করে জীবন ফিরে পাওয়া এরিকসেন মেডিকেল দলটিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। একইসাথে বন্ধু ও অধিনায়ক কায়েরসহ পুরো ডেনমার্কের সতীর্থ, সমর্থক ও সংশ্লিষ্ঠদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন এরিকসেন। তথ‌্য-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান