সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে গত ১০ এপ্রিল রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হল ছাত্রলীগ সভাপতি ইফফাত জাহান এশার বিরুদ্ধে রগকাটার সংবাদ ফেসবুকে ছড়ানোর অভিযোগে বেশ কয়েকজন ছাত্রীকে কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ দিয়েছে ঢাবি প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানীর স্বাক্ষরিত ওই নোটিশ গত ১৬ মে থেকে ছাত্রীদের দেওয়া হচ্ছে। যার জবার আগামী ২ সপ্তাহের মধ্যে দিতে বলা হয়েছে।
ওই নোটিশে বলা হয়, ‘গত ১০ এপ্রিল মধ্যরাতে আপনি কবি সুফিয়া কামাল হলের আবাসিক ছাত্রীদের মধ্যে পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা, অসত্য রটনা ও গুজব ছড়িয়েছেন যে, উক্ত হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ইফফাত জাহান এশা, মুর্শিদা আক্তার নামক একজন আবাসিক ছাত্রীর রগ কেটে দিয়েছে এবং তাকে মারধর করেছে। আপনি অন্যান্য আবাসিক ছাত্রীদের মধ্যে বিভ্রান্তিকর তথ্য পরিবেশন করেছেন ও তার আলোকচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছেন। আপনার এ ধরণের পূর্বপরিকল্পনা, ষড়যন্ত্র ও প্রচারণা হলের ছাত্রীদের ভীষণভাবে উত্তেজিত ও আতঙ্কিত করে। তাছাড়া, আপনি পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে সংঘবদ্ধ হয়ে ইফফাত জাহান এশাকে মারধর ও লাঞ্ছিত করেন এবং জোরপূর্বক ইফফাত জাহান এশার গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেন এবং তার বস্ত্রহরণ করেন।’
নোটিশে আরও বলা হয়, ‘উক্ত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত তদন্ত কমিটি ঘটনার সঙ্গে আপনার জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে। একজন শিক্ষার্থী কর্তৃক এ ধরণের অনাকাঙ্ক্ষিত কার্যকলাপ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ও মর্যাদাকে ভীষণভাবে ক্ষুণ্ন করেছে যা বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ও আইনের সুস্পষ্ট পরিপন্থী।’
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় শৃঙ্খলা পরিষদ ও সিন্ডিকেটের সুপারিশ মোতাবেক কেন অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে না- নোটিশে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।
নোটিশে আরও বলা হয়, নোটিস পাওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে যদি কেউ জবাব না দেয় তাহলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার শাস্তি হয়ে যাবে।
এদিকে এভাবে ছাত্রীদের ডেকে নিয়ে শোকজ নোটিস দেওয়ায় ছাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সাধারণ ছাত্রীরা বলছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এসব কর্মকাণ্ড তাদের আতঙ্কিত করে তুলছে।
শোকজ নোটিশ পেয়েছেন এমন এক ছাত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এ ঘটনায়আমার কোন সম্পৃক্ততা ছিলোনা। তবুও আমাকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। বার বার এ ধরণের শোকজ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের হয়রানি করতে চাচ্ছে।’
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের বলেন, ‘কারও আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। যাদের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি রিপোর্ট দিয়েছে কেবল তাদের শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়েছে।’
উল্লেখ্য, কোটা সংস্কার আন্দোলনে সম্পৃক্ত থাকায় গত ১০ এপ্রিল মধ্যরাতে সুফিয়া কামাল হল ছাত্রলীগের সভাপতি ইফফাত জাহান এশা শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মোর্শেদা খানমকে তার কক্ষে ডেকে নিয়ে রগ কেটে দেয় বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর উত্তেজিত ছাত্রীরা ইফফাত জাহান এশাকে লাঞ্ছিত করে।
অপরাধ স্বীকার করায় ও বেশ কয়েক দিক থেকে রগ কাটার অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে দাবি করে তাৎক্ষণিকভাবে এশাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ও প্রক্টর অধ্যপক ড. গোলাম রব্বানী। এছাড়া ছাত্রলীগও তাকে বহিষ্কার করে। কিন্তু পরবর্তীতে উল্টো এশাকে লাঞ্ছনার অভিযোগ এনে ছাত্রলীগ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে।
রাসেল/