এশিয়ান গেমসের নতুন তারিখ নিয়ে শঙ্কা

চায়নায় নতুন করে করোনা পরিস্থিতির অবনতিতে ইতোমধ্যেই সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য হাংজু এশিয়ান গেমস স্থগিত হয়ে গেছে। আগামী বছর সুবিধাজনক সময়ে এশিয়ার বৃহত্তম এই ক্রীড়া আসর আয়োজনের ব্যপারে আশাবাদী অলিম্পিক কাউন্সিল অব এশিয়া (ওসিএ)। কিন্তু যেকোন গেমসের ‘মাদার গেম’ হিসেবে পরিচিত এ্যাথলেটিক্স এর ২০২৩ সালের আন্তর্জাতিক ব্যস্ত সূচীতে আদৌ এশিয়ান গেমস আয়োজন করা সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা তৈরী হয়েছে।
এক বা দুই মাসের জন্য যে এত বড় আসর স্থগিত করা হয়নি তা অনেকটাই নিশ্চিত। তবে আগামী বছরের প্রথম ভাগে যে তা আয়োজন সম্ভব নয় তা মোটামুটি জানা হয়ে গেছে। ইঙ্গিত রয়েছে আগামী বছরের সেপ্টেম্বরে নতুন আয়োজনের।
ওসিএ, চাইনিজ অলিম্পিক কমিটি ও আয়োজক কমিটিকে এখন এ্যাথলেটিক্সের আন্তর্জাতিক সূচীকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় আনতে হবে। কারন গেমসের অন্যতম আকষর্নীয় এই ইভেন্টেই সবচেয়ে বেশী খেলোয়াড় অংশ নিয়ে থাকে, যে কারনে পদকের সংখ্যাও এই ইভেন্টে সর্বোচ্চ।
২০২৩ সালের ওয়ার্ল্ড এ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশীপ ১৮ থেকে ২৭ আগস্ট হাঙ্গেরিতে অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে এপ্রিল-মে থেকে আগস্ট সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঐতিহ্যবাহী ডায়মন্ড লিগ মিটিং। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশীপে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে মূল প্রস্তুতিতে থাকবে এ্যাথলেটরা। যে কারনে বছরের শুরুতে এশিয়াডের আসর শুরু হলে তাতে এ্যাথলেটদের প্রস্তুতিতে সমস্যা তৈরী হবে। এর ফলে এশিয়ান গেমসে শীর্ষ সারির এ্যাথলেটরা হয়তো অংশ নাও নিতে পারে।
এছাড়াও আগামী বছরের বেশীরভাগ ক্রীড়ার আন্তর্জাতিক ক্যালেন্ডার ইতোমধ্যেই চূড়ান্ত হয়ে গেছে। এশিয়ান গেমসের জন্য তা পরিবর্তন করাটা খুবই কঠিন। বেশীরভাগ অলিম্পিক ইভেন্টের আন্তর্জাতিক সূচী সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ হয়ে যাবার কথা রয়েছে। সে কারনেই হাংজু গেমসের জন্য সেপ্টেম্বরই হতে পারে সেরা সময়।
এশিয়ান গেমসের ১৮টি আসরের মধ্যে ১২টিই সেপ্টেম্বর কিংবা তারপরে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৯৬২ ও ২০১৮ সালের ইন্দোনেশিয়ায় আয়োজিত দুটি এশিয়ান গেমস আগস্টের শেষে শুরু হয়ে সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকে শেষ হয়েছে। এ পর্যন্ত মাত্র তিনটি এশিয়ান গেমস বছরের প্রথমভাগে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯৫১ সালের মার্চে নয়া দিল্লীতে, ১৯৫৪ সালের মে’তে ম্যানিলায় ও ১৯৬০ সালের মে-জুনে টোকিওতে এশিয়ান গেমসের ঐ তিনটি আসর অনুষ্ঠিত হয়।
২০১০ দিল্লী কমনওয়েলথ গেমসের সেক্রেটারী জেনারেল ও ভারতীয় এ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের সাধারন সম্পাদক ললিত ভানট বার্তা সংস্থা পিটিআই’কে এ সম্পর্কে বলেছেন, ‘মার্চ-এপ্রিলে হাংজুর আবহওয়া বেশ ঠান্ডা থাকে, সে কারনে এশিয়ান গেমস আয়োজনের জন্য ঐ সময়টি মোটেই উপযুক্ত নয়। এ কারনে ওয়ার্ল্ড এ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশীপের পরেই এশিয়ান গেমস আয়োজন করা উচিত।’
আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ অলিম্পিক স্পোর্টস হকিও আগামী বছরের জুন পর্যন্ত এফআইএইচ প্রো-লিগ মৌসুম নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। এছাড়া ফোর-স্টেজ আর্চারী ওয়ার্ল্ড কাপ সিটি জুলাইয়ে ও ওয়ার্ল্ড কাপ ফাইনাল অক্টোবরে অনুষ্ঠিত হবে।
আগামী বছর চায়না আরো দুটি বড় ক্রীড়া আসর আয়োজিত হতে যাচ্ছে। মার্চে নানজিংয়ে এ্যাথলেটিক্সের বিশ্ব ইনডোর চ্যাম্পিয়নশীপ ও জুন-জুলাইয়ে এএফসি এশিয়ান কাপ ফুটবল বেইজিং ও সাংহাইসহ চায়নার ১০টি শহরে অনুষ্ঠিত হবে।
এশিয়ান গেমসের মত ইউরোপের দেশগুলোর জন্য আয়োজিত ইউরোপীয়ান গেমস ২১ জুন থেকে ২ জুলাই পোল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হবে। দুই মহাদেশের দুই বৃহৎ ক্রীড়াযজ্ঞ যেন আলাদা আলাদা সময় অনুষ্ঠিত হয় এ বিষয়েও হাংজু গেমস আয়োজক কমিটিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
২০২৩ সালে চাইনিজ শহর সানিয়াতে এশিয়ান বিচ গেমস আয়োজিত হবার কথা রয়েছে। করোনা মহামারীর কারনে ২০২০ সালের এই আসর স্থগিত করে আগামী বছর আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়। ওসিএ অবশ্য বিচ গেমসের চূড়ান্ত তারিখ এখনো ঘোষনা করেনি।
২০১৮ সালের ইন্দোনেশিয়ান এশিয়ান গেমসে ৪০টি ক্রীড়ায় ৪৫টি দেশের প্রায় ১১,৩০০ ক্রীড়াবীদ অংশগ্রহণ করেছিল।