এসিআই’র ‘লোকসান’ তদন্তে কমিটির প্রথম বৈঠক রোববার

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি এসিআই এর লোকসানের রহস্য খতিয়ে দেখতে ৬ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। আগামীকাল রোববার, ১৭ ফেব্রুয়ারি এ বিষয়ে আলোচনা করতে প্রথম বৈঠকে বসবে কমিটি।

এ প্রসঙ্গে তদন্ত কমিটির সদস্য ডিএসইর পরিচালক ও সাবেক প্রেসিডেন্ট মো. রকিবুর রহমান একটি জনপ্রিয় অনলাইনকে বলেন, তদন্ত কমিটি প্রথম বৈঠকে বসবে রোববার। আমাদের ১৫ দিন সময় সময় দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে পারবো।

জানা যায়, কোম্পানিটির একজন বিনিয়োগকারীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ১২ ফেব্রুয়ারি, মঙ্গলবার ডিএসইর পর্ষদ সভায় ডিএসইর পরিচালক ও সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি ছিদ্দিকুর রহমান মিয়াকে প্রধান করে এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

ছয় সদস্য বিশিষ্ট কমিটির অন্য সদস্যরা হচ্ছেন- ডিএসইর পরিচালক ও সাবেক প্রেসিডেন্ট মো. রকিবুর রহমান, পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন, স্বতন্ত্র পরিচালক মনোয়ারা হাকিম আলী, প্রফেসর ড. মো. মাসুদুর রহমান এবং ডিএসইর প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) আব্দুল মতিন পাটোয়ারি এফসিএমএ।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, একজন বিনিয়োগকারীর অভিযোগ করেন যে- এসিআই এর পরিশোধিত মূলধনের তুলনায় সহযোগী প্রতিষ্ঠান স্বপ্নে বড় ধরণের লোকসান রয়েছে। আর এই লোকসান টানতে গিয়ে তাদের মুনাফা ভাল আসছে না।

বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ ক্ষুন্ন করে এমন উচ্চাভিলাসী বিনিয়োগ এবং লোকসানের নৈতিক ভিত্তি আছে কী না তা খতিয়ে দেখতে অনুরোধ করেছেন বিনিয়োগকারীরা। এর প্রেক্ষিতে বিচারপতি সিদ্দিকুর রহমান মিঞাকে প্রধান করে ৬ সদস্যের তদন্ত কমিটি হয়েছে।

প্রসঙ্গত, কোম্পানিটি তার সহযোগী প্রতিষ্ঠান এসিআই লজিস্টিক লিমিটেডকে (স্বপ্ন) গত ১০ বছর ধরে তার রিজার্ভ থেকে লোকসানের বিপরীতে ভর্তুকি দিচ্ছে এসিআই। এ কারণে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীসহ বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের মধ্যে নানা ধরনের সন্দেহ ও কোম্পানির মালিকপক্ষের প্রতি আস্থায় ঘাটতি দেখা দিচ্ছে।

কোম্পানিটি ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৮ তারিখে সমাপ্ত চলতি হিসাববছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের (অক্টোবর-ডিসেম্বর’ ১৮) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে কোম্পানিটি ৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকা লোকসান দেখায়। আর শেয়ার প্রতি লোকসান দেখানো হয় ৭৮ পয়সা। অথচ আগের বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটি ৩০ কোটি ১৩ লাখ টাকা মুনাফা করেছিল। সে বছর ইপিএস দেখানো হয়েছিল ৫ টাকা ৪৪ পয়সা। এসিআই-এর মতো ব্লুচিপ কোম্পানির এই লোকসানের বিষয়টি পুঁজিবাজার অঙ্গনে বির্তক সৃষ্টি করে। বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে আবেদন জানানো হয়।

এসিআই লিমিটেডের আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে জানা যায়, পাঁচটি কারণে কোম্পানিকে লোকসান গুনতে হচ্ছে। কারণগুলো হচ্ছে- ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়া, ব্যাংক ঋণের সুদ হার বৃদ্ধি, সহযোগী কোম্পানিগুলো থেকে লভ্যাংশ প্রাপ্তি কমে যাওয়া, আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি এবং আয়কর খাতে ব্যয় বেড়ে যাওয়া।

টাকার অবমূল্যায়নের কারণে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কাঁচামাল, মোড়কজাত করার উপকরণ এবং সম্পূর্ণ তৈরি পণ্য আমদানিতে কোম্পানিটিকে আগের চেয়ে বেশি টাকা ব্যয় করতে হয়েছে। এসব পণ্যের জন্য কোম্পানিটিকে ব্যাপকভাবে বিদেশি বাজারের ওপর নির্ভর করতে হয়।

গত প্রান্তিকের শুরু থেকে ব্যাংক ঋণের সুদ হার বেশ ঊর্ধ্বমুখী। এটি কোম্পানির মুনাফার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আলোচিত প্রান্তিকে অর্থায়ন তথা ঋণের সুদ বাবদ এসিআই লিমিটেড আগের বছরের একই প্রান্তিকের চেয়ে ২৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা বেশি ব্যয় করেছে বা করতে হয়েছে। উল্লিখিত প্রান্তিকে অর্থায়ন ব্যয় বাবদ কোম্পানিটির ৭৬ কোটি ৭১ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। আগের বছর একই প্রান্তিকে এই খাতে ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ৫০ কোটি ২১ লাখ টাকা।

বেশ কয়েকটি বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগের কোম্পানি রয়েছে এসিআই লিমিটেডের। এছাড়াও এর রয়েছে কয়েকটি অ্যাসোসিয়েট কোম্পানি। এসিআইয়ের মুনাফার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ আসে এসব কোম্পানি থেকে। কিন্তু আলোচিত প্রান্তিকে এসব কোম্পানি থেকে ২০ শতাংশ কম আয় এসেছে এসিআইয়ের ঘরে।

আজকের বাজার/এমএইচ