এসিআই ও বাকৃবির ‘সয়েল টেস্টিং কিট’র উদ্ধোধন

পৃথিবীর মানুষের প্রতিদিনের আহারের জন্য উৎপাদিত খাদ্য শস্যের সিংহভাগই জমি থেকে উৎপাদন করা হয়। সারাবিশ্বে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে একই আবাদীতে অতিরিক্ত ফসল ফলাতে হচ্ছে। আর এসব ফসল উৎপাদন করতে কৃষকরা অবাধে কৃষি জমিতে রাসায়নিক সার প্রয়োগ করছে। এসব রাসায়নিক সারের পর্যাপ্ত ব্যবহারের ফলে ফসল উৎপাদন বাড়লেও মাটির স্বাস্থ্যের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। মাটির উর্ববরতা শক্তি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, মাটিতে বসবাসারী নানা উপজীবের সংখ্যা মাত্রাতিরিক্তহারের হ্রাস পাচ্ছে। এছাড়াও প্রাকৃতিক পরিবেশ বিনষ্টের সাথে সাথে মানুষের মাঝে নানা ধরনের রোগ ছড়াচ্ছে। ফলে মাটিতে সার প্রয়োগের পূর্বে মাটির গুণাগুণ পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় মাত্রায় সার করতে হবে।

বর্তমান প্রচলিত পদ্ধতিতে ল্যারেটরিতে মাটি পরীক্ষা অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং সময় সাপেক্ষ হওয়ায় কৃষকরা তা করতে পারছেন না। গবেষকদের উদ্ভাবিত এ নতুন সয়েল টেস্টিং কিটের সাহায্যে কৃষক তার নিজের জমিতে বসেই মাত্র ৫০ টাকা ব্যয়ে মাটির গুণাগুন নির্ধারণ করে চাহিদা মাফিক সার প্রয়োগ করতে পারবেন।

৬ মার্চ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৃষি জমিতে সার প্রয়োগের মাত্রা নিরুপনকারী কিটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন কৃষিবিজ্ঞানীরা।

বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে, হেকেপ প্রকল্পের আওতায় এবং বেসকরকারি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এসিআই ফার্টিলাইজার’র কারীগরি সহায়তায় সয়েল টেস্টিং কিটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও সেমিনারের আয়োজন করা হয়।

সকাল সাড়ে ১০ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ নজরুল ইসলাম সম্মেলন কক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ও প্রকল্পের প্রধান গবেষক ড. মো. মজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে আয়োজিত উদ্বোনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য প্রফেসর ড. মো. ইফসুফ আলী মোল্লাহ, প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. আলী আকবর। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন হেকেপ প্রজেক্ট পরিচালক ড. গৌরাঙ্গ চন্দ্র মোহন্ত এনডিসি, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখার পরিচালক প্রফেসর ড. মনোরঞ্জন দাস, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএএসআর কো-অর্ডিনেটর প্রফেসর ড. মো. লুৎফুল হাসান, এসিআই ফার্টিলাইজার’র বিজনেস ডিরেক্টর বশির আহমেদ। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রফেসর ড. মো. জহির উদ্দীন। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, শিক্ষক, পিএইচডি গবেষক, মাস্টার্স শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রকল্পের প্রধান গবেষক ড. মো. মজিবুর রহমান জানান, আমাদের উদ্ভাবিত এ কিট দিয়ে মাটির অম্ল রক্ষার, নাইট্রোজেন, অ্যামোনিয়া, পটাশিয়াম, সালফার, ফসফরাস, অনুজীবের পরিমান প্রভৃতি খুব কম সময়ে নির্ণয় করা জাবে এবং এতে খরচ পরবে মাত্র ৫০ টাকা।

এসিআই ফার্তিলাইজার’র বিজনেস ডিরেক্টর বশির আহমেদ বলেন, মানুষের যেমন ছয়মাস পরপর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা দরকার তেমনি ক্ষুধার অন্নদানকারী মাটিরও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা জরুরি। এ সয়েল টেস্টিং কিট টি বাণিজ্যিকভাবে স্বল্প খরচে দ্রুত কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে গবেষণায় সহযোগী হিসেবে রয়েছে বেসরকারী বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এসিআই।

প্রধান অতিথি ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. মো. ইফসুফ আলী মোল্লাহ বলেন, দেশের কৃষকের উন্নয়নে আপনাদের গবেষণাগুলোকে দ্রুত মাঠ পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে হবে। কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধিও সাথে সাথে মাটির এবং মানুষের স্বাস্থ্যের বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে।

জাকির/আরএম