“ওড়না” প্রাথমিক থেকে প্রাক-প্রাথমিকে

রাসেল মাহমুদ: গেলবার সারাদেশে নানা গুঞ্জন ও সমালোচনার ঝড়ের পর, এ বছরও প্রাথমিকের পাঠ্য বই থেকে “ওড়না” শব্দটি বাদ দিতে পারেনি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড,এনসিটিবি। তবে প্রথম শ্রেণির বাংলা বই থেকে “ওড়না” শব্দটি উঠিয়ে এবার প্রাক-প্রাথমিকের ‘আমার বই’তে যুক্ত করা হয়েছে। এতে সমালোচনার পাশাপাশি এনসিটিবির “ওড়না” প্রীতি নিয়েও চলছে নতুন গুঞ্জন।

আসছে জানুয়ারির ১ তারিখে সারাদেশে বই উৎসবের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়া হবে নতুন বই। শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছানোর পূর্বেই শুরু হয়েছে নানা সমালোচনা। বইটি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রাক-প্রাথমিকের ‘আমার বই’তে শিশু শিক্ষার্থীদের ‘ও’ বর্ণ শেখাতে ওড়না শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। বইটির ৩৬ নম্বর পৃষ্ঠায় দেখানো হয়েছে ‘ও-তে ওড়না’। বিষয়টি আরও স্পষ্ট করতে একটি মেয়ে শিশুর গায়ে ওড়না দেয়া একটি ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।

এর আগে ২০১৭ শিক্ষা বর্ষের প্রথম শ্রেণির ‘আমার বাংলা বই’য়ের পাঠ-১২ তে ‘ও’ বর্ণটি শেখাতে ওড়না শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছিলো। তাতে বলা হয়েছিলো ‘ও-তে ওড়না চাই’। তখন বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে। প্রতিবাদে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও সুসীল সমাজসহ সচেতন ব্যক্তিরা।

সমালোচনা ও প্রতিবাদের মুখে প্রথম শ্রেণির বই পরিমার্জন করে ও-তে ওড়নার বদলে ওজন শব্দ দেয়া হয়। ছবি দেয়া হয় ওজন পরিমাপক যন্ত্রের। কিন্তু প্রথম শ্রেণির বই পরিমার্জন করলেও প্রাক-প্রাথমিকের বইয়ে ‘ওড়না’ শব্দ যুক্ত করায় নতুন করে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।

বিশিষ্ট কথা সাহিত্যিক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, আনন্দের মাধ্যমে শিশুদের শিক্ষা দিতে হবে। এমন কিছু শেখানো যাবে না যাতে শিশু মনে বিরূপ চিন্তা তৈরি হয়। ও-তে ওড়না শব্দ না শিখিয়ে আরও অনেক আনন্দদায়ক শব্দ রয়েছে। সেগুলো ব্যবহার করলে শিশুরা অল্পতেই শব্দটি শিখে ফেলতে পারতো।

প্রাথমিকস্তরে একাধিক শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ও-তে ‘ওলকপি’, ‘ওজন’, ‘ওলি’, ‘ওজু’সহ নানা সহজ শব্দ রয়েছে। একটি পরিচিত বা সহজে পরিচয় করানো যায় এমন শব্দ ব্যবহার করলে ভালো হতো। তাহলে এ নিয়ে নতুন করে বিতর্ক উঠত না। শিশুদের কাছে ওড়না পরিচিত নয় বলেও মন্তব্য করেন শিক্ষকরা।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড,এনসিটিবি’র চেয়ারম্যান প্রফেসর নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, বইয়ের পান্ডুলিপি তৈরি করেছে বিশেষজ্ঞরা। এরপর তা এনসিটিবিতে জমা দেয়। এরপর সম্পাদনা শাখার কর্মকর্তারা যাচাই বাছাই করে ছাপার জন্য প্রেসে পাঠায়।

প্রথম শ্রেণির বই থেকে ‘ও-তে ওড়না’ শব্দ তুলে দেয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রাক-প্রাথমিকের বইয়ে একই শব্দ আছে কি না, আমার জানা নেই। এটি খতিয়ে দেখা হবে।

২০১৭ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্য বইয়ে বিতর্কিত শব্দ “ওড়না”র জন্য সতর্ক হয়েছিলো এনসিটিবি। পরবর্তীতে অর্থাৎ ২০১৮ শিক্ষাবর্ষের বইয়ে বিতর্কিত এমন শব্দ যেন না থাকে, সে জন্য কর্মশালার আয়োজনও করেছিলো প্রতিষ্ঠানটি। কর্মশালটি চলতি বছরের মার্চে অনুষ্ঠিত হয়। এরপরও প্রাক-প্রাথমিকের বইয়ে বিতর্কিত শব্দটি দেয়ায় খোদ এনসিটিবিতেই বিরাজ করছে ক্ষোভ। চলতি বছরের পাঠ্যবইয়ে বিতর্কিত বিষয় ছাপার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় এবারও একই ভুল হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে।

আজকের বাজার: আরএম/ ওএফ / এলকে ২১ ডিসেম্বর ২০১৭