অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান এনবিআরের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন,মুখে হাসি আর কম ব্যথা দিয়ে কিভাবে রাজস্ব আহরণ করা যায় সে চেষ্টা করতে হবে। সেক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের পেশাদারিত্ব আর মুন্সিয়ানা দেখাতে হবে।
১০ অক্টোবর মঙ্গলবার সেগুনবাগিচায় এনবিআর সম্মেলন কক্ষে এনবিআর আয়োজিত ‘জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নিরাপত্তা বিষয়ক অংশীদারিত্বমূলক সংলাপে’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, এনবিআরের কাছে আমাদের আশা থাকবে রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে লিস্ট পেইনফুল ওয়েতে আমরা রাজস্ব আহরণ করবো। সবচেয়ে কম ব্যথায় কিভাবে রাজস্ব আহরণ করা যায় সে চেষ্টা করতে হবে। সেক্ষেত্রে এনবিআর ঐতিহ্য আর পেশাদায়িত্বে মুন্সিয়ানা দেখাবে।
উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, আইনে একটি কথা বলা হয়, একশ অপরাধী বের হয়ে যাক তবুও যেন একজন নিরাপরাধী ব্যক্তি শাস্তি না পায়। রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রেও তার প্রতিফলন করা যেতে পারে। ১০০ জন করদাতা করজাল থেকে বের হয়ে যাক কিন্তু নিরাপরাধ কোনো ব্যক্তি যেন এ জালে পড়ে ব্যথা না পায়।
তিনি বলেন, যদি লক্ষ্যমাত্রা থেকে এক টাকা কমও পাই কিন্তু যদি হাসির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, জনগণের সাথে সম্প্রীতি, বন্ধুত্বের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় তবে তা হবে এনবিআরের অনেক অনেকগুণ বেশি অর্জন। আইন প্রয়োগ করবেন, কিন্তু আইন যাতে হাসির মধ্য দিয়ে প্রয়োগ করা হয়, সেটা খেয়াল রাখবেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, এনবিআর রাজস্ব আহরণে চাপে আছে। কিন্তু রাজস্ব আহরণে সৌজন্যতাবোধ, দয়া, ভ্রাতৃত্ববোধ যেন দেখায়, তাতে যেন কোনো ঘাটতি না থাকে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
“যেকোনো যুক্তি বা বাস্তব সম্মত প্রস্তাব শেখ হাসিনার সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা ও গ্রহণ করবে। সকল আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী রাষ্ট্রের কল্যাণে যে প্রস্তাব করবে তা প্রতিপালন করা আমাদের দায়িত্ব।”
তিনি বলেন, জাতি হিসেবে আমাদের যে স্থবিরতা ছিল তাতে গ্রামগঞ্জ থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রে একটি মুভমেন্ট লক্ষ্যণীয়। আমাদের বোধহয় একটি উল্লম্ফনের সময় এসেছে। সে উল্লম্ফনে সব কিছুর সঙ্গে অর্থেরও প্রয়োজন হবে। এ অর্থের যোগান দেবে এনবিআর।
রাজস্ব আহরণে এনবিআরের অগ্রগতির প্রশংসা করে তিনি বলেন, এনবিআরের ওপর সরকারের আস্থা আছে। চলতি অর্থবছর যখন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করতে পারলাম না তখন বিভিন্ন মহল থেকে বলা হয়েছে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি হওয়ার কথা। কিন্তু এনবিআর ভ্যাট ধরেই যে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা প্রথম কোয়ার্টারে আমরা পেরিয়ে গেছি। অত্যন্ত আনন্দের বিষয়- যদিও আমরা নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করতে পারিনি তবুও পুরনো ভ্যাট আইনে আমরা ভ্যাটের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পেরেছি। আশা করি বাকি ৩ কোয়ার্টারেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবো।
এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরাপত্তার বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে দুষ্ট লোক আছে, তাদের সংখ্যা অনেক বেশি। দুষ্ট লোককে মোকাবেলা করতে হয়। এনবিআর তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরাপত্তায় অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ চায়। এ বিষয়ে সব আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর সাথে আলোচনা করে একটি প্রস্তাব নিয়ে আসেন। মৌখিক নয়, সব আইনের আওতায় হবে।
তিনি বলেন, সব জায়গায় গেলে শুনি আমাদের আয়করের জাল প্রসার করার অনেক সুযোগ আছে। আমাদের জাতীয় প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয় বেড়েছে। গ্রামাঞ্চলে জীবনযাত্রার মান পরিবর্তন হয়েছে। কৃষিতে উৎপাদন ও আয় বেড়েছে। কৃষি ট্যাক্স নেটের বাইরে। কৃষিকে ট্যাক্সের আওতায় আনতে চিন্তা করার সময়ে এসেছে। এ ধরনের ট্যাক্সাবল খাত খুঁজে বের করা এবং গবেষণার সুযোগ আছে। করের নতুন খাত খুঁজে বের করে সরকারের কাছে প্রস্তাব নিয়ে আসলে তা বিবেচনা করা হবে।
সংলাপে সভাপতির বক্তব্যে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান বলেন, আমরা পরপর ৩ বার রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা শুধু অর্জনই করিনি, অতিক্রমও করেছি। আমাদের সামনে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে আমাদের দক্ষতা ও জনবল বাড়াতে হবে।
তিনি বলেন, এ মূহূর্তে নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জটা আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সহকর্মীরা যখন মাঠ পর্যায়ে কাজ করে বিশেষ করে কাস্টমস বিভাগের কর্মকর্তারা সীমান্ত এলাকায় দিবারাত্রি কাজ করতে হয়, যারা দীর্ঘদিন আয়কর ফাঁকি দিয়ে আসছে তাদের করের আওতায় আনতে ঝুঁকি নিতে হয়। এক্ষেত্রে বেশ কিছু অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে। এনবিআরের একজন সদস্য দুষ্কৃতিকারীদের গুলিতে আহত হয়েছেন। এছাড়া কয়েকটি অপারেশনে কিছু সহকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন। এসব ক্ষেত্রে এখন সময়ের দাবি এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারিদের নিরাপত্তা বিধান। রাজস্ব আহরণ কার্যক্রম সুষ্ঠভাবে করা এবং রাজস্ব আহরণের পরিবেশ তৈরি করতে নিরাপত্তা প্রয়োজন। আমরা অস্থায়ীভাবে পার্টনারশীপের মাধ্যমে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর সহায়তা নিয়ে এ নিরাপত্তা বিধান করছি। আমাদেরকে পুলিশ, র্যাব, গোয়েন্দা সংস্থা, বিজিবি সহায়তা করছে। এখন সময়ের দাবি হচ্ছে একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া।
সংলাপে আরও ছিলেন বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি মো. মোখলেসুর রহমান, বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ খান, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর উপ মহাপরিচালক দিলীপ কুমার বিশ্বাস, বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের উপ মহাপরিচালক কমল অরিন্দা, বিজিবির অতিরিক্ত মহাপরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল হাসনাত, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার বজলুর করীম চৌধুরী, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জামাল উদ্দিন আহমেদ।
মুলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান।
আজকের বাজার:এলকে/এলকে ১০ অক্টোবর ২০১৭