করোনাভাইরাস আতঙ্কে ঢাকার রাস্তা অনেকটাই ফাঁকা

দেশে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্তের পর বৈশ্বিক মহামারির প্রাদুর্ভাব রোধে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে রাজধানীসহ সারাদেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। করোনা আতঙ্কে ঢাকার সাধারণ বাসিন্দারা প্রয়োজন ছাড়া রাস্তায় বের হচ্ছেন না। এতে দুই কোটি মানুষের বসবাসের জনবহুল এই নগরী ক্রমশ ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং এমনকি কোচিং সেন্টারসহ সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রাজধানী ছাড়তে শুরু করেছেন অনেকেই। যা ঢাকা ফাঁকা হওয়ার অন্যতম কারণ। অন্যান্য স্বাভাবিক দিনগুলোর মতো রাস্তায় তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না গণপরিবহন বা ব্যক্তিগত যানবাহনগুলো। তাই চিরচেনা রাজধানীর যানজটও তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না। ফটো সাংবাদিক জাবেদ হাসনাইন চৌধুরী বলেন, রাস্তায় কোথাও কোনো যানজট নেই। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মালিবাগে আসতে আমার মাত্র ১৫ মিনিট সময় লেগেছে। সাধারণ সময়ে এই দূরত্ব যেতে প্রায় ঘণ্টা খানেক লেগে যায়। ক্রমবর্ধমান ভাইরাসের উদ্বেগের মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকেও প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হওয়া এবং জনসমাগম স্থানগুলো এড়িয়ে চলার নির্দেশনা দেয়ার কারণেও রাস্তাগুলো ফাঁকা হচ্ছে।

সাধারণ সময়ে রাজধানীবাসীরা ছুটি পেলেই শপিং মল, মার্কেট, ফুডকোর্ট, রেস্টুরেন্ট বা বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ভিড় জমায়। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন দেখা গেছে। মঙ্গলবার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে সরকারি ছুটির দিন হলেও বাইরে তেমন কোনো ভিড় ছিল না। রাজধানীর শপিংমলগুলো যেমন বসন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স, যমুনা ফিউচার পার্ক, মৌচাক মার্কেট, গাউছিয়া মার্কেট, নিউ মার্কেট, উত্তরার মাস্কট প্লাজা, টুইন টাওয়ার কনকর্ড শপিং কমপ্লেক্স ও কর্ণফুলি গার্ডেন সিটি শপিং কমপ্লেক্সগুলো ছিল অনেকটা ফাঁকা। উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরে একটি ফুডকোর্টের মালিক নুরুল আমিন চৌধুরী জানান, গত ৮ মার্চ দেশে প্রথমবারের মতো তিনজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলে শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই লোকজন কম আসতে শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর সরকার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়ার পর অভিভাবকরা, যারা বিশেষত সাধারণ ছুটির দিনে মধ্যাহ্নভোজ বা রাতের খাবারের জন্য আমাদের ফুড কোর্টে আসতেন, তারা আর আসছেন না। সাধারণ সময়ের চেয়ে লোকসমাগম ৮০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে বলে জানান তিনি।

রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা মাসউদুল হক জানান, ‘আগে সময় কাটানোর জন্য এবং মধ্যাহ্নভোজ বা রাতের খাবার খাওয়ার জন্য স্ত্রী এবং তিন মেয়েকে নিয়ে বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে বা রেস্তোঁরায় যেতাম। তবে, আমরা আজ (মঙ্গলবার) ঘরের বাইরে যাইনি, কারণ সরকার ইতিমধ্যে করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে জনসমাগম এড়িয়ে চলার নির্দেশনা দিয়েছে।’শান্তিনগর এলাকায় যানজট নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বরত আসাদ নামের এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, অন্যান্য সরকারি ছুটির দিনের তুলনায় এবার রাস্তা অনেকটা খালি। করোনা আতঙ্কে রাজধানীবাসী রাস্তায় বের না হওয়ায় রাস্তাঘাটগুলো অনেকটা ফাঁকা। মঙ্গলবার দেশে আরও দুজন করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)। আইইডিসিআর পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ‘আক্রান্তদের মধ্যে দুজনই পুরুষ। নতুন করে দুজন আক্রান্ত হওয়ায় বাংলাদেশে এ নিয়ে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ জনে। গত ১৬ মার্চ দেশে তিনজনের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কথা জানায় আইইডিসিআর। যাদের মধ্যে দুজন শিশু এবং একজন নারী। গত ১৪ মার্চ দেশে আরও দুজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কথা জানানো হয়েছিল, যাদের মধ্যে একজন ইতালি থেকে এবং অন্যজন জার্মানি থেকে সম্প্রতি দেশে এসেছেন। গত ৮ মার্চ প্রথমবারের মতো দেশে তিনজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কথা জানিয়েছিল আইইডিসিআর। তিনজনের মধ্যে দুজন পুরুষ ও একজন নারী ছিলেন। তবে প্রথম আক্রান্ত হওয়া তিনজনই সুস্থ হয়ে উঠেছেন বলে জানিয়েছে আইইডিসিআর। প্রথম আক্রান্ত হওয়া ওই তিনজনের মধ্যে দুজন ইতালি থেকে সম্প্রতি দেশে ফিরেছিলেন এবং অপরজন তাদের একজনের সংস্পর্শে এসে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। প্রসঙ্গত, চীনে উৎপত্তি হওয়া প্রাণঘাতি করোনাভাইরাস এখন সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্বের ১৬২টি দেশেরও বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়া এ ভাইরাসে প্রায় দুই লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন এবং প্রায় আট হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সূত্র-ইউএনবি

আজকের বাজার/আখনূর রহমান