করোনাভাইরাস সংক্রমণের জেরে আমেরিকায় বন্ধ ব্যবসা–বাণিজ্য, কলকারখানা, অফিসকাছারি। কর্মহীন হচ্ছেন বহু নাগরিক। তঁাদের জন্য যাতে যথেষ্ট চাকরি বঁাচিয়ে রাখা যায়, তাই আপাতত আমেরিকায় অভিবাসন বন্ধ রাখছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সোমবার টুইট করে জানিয়েছেন, ‘অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের এই আবহে, মহান মার্কিন নাগরিকদের চাকরির সুরক্ষায়, আমেরিকায় আপাতত অভিবাসন বন্ধ রাখার এক নির্দেশে সই করতে চলেছি।’
বিরোধী ডেমোক্র্যাটরা মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই সিদ্ধান্তকে ‘জাতিবিদ্বেষী’ এবং আমেরিকার অর্থনৈতিক সঙ্কটের জন্য দায়ী করতে ‘বলির পঁাঠা’ খেঁাজার চেষ্টা বলে চিহ্নিত করেছেন। ওঁরা বলছেন, আমেরিকায় করোনার বিরুদ্ধে এখন যে–লড়াই চলছে, তার সামনের সারিতে দঁাড়িয়ে যে চিকিৎসক, সেবিকা, স্বাস্থ্যকর্মীরা, তঁারা অনেকেই সে–দেশে অভিবাসী। যঁারা খেতেখামারে কাজ করে খাদ্যশস্য, শাকসবজির ফলন চালু রেখেছেন, এমনকী যঁারা রেস্তোরঁায় কাজ করে চলেছেন এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতেও, তঁাদেরও এক বড় অংশ অভিবাসী। আর সমালোচকদের বক্তব্য, প্রেসিডেন্ট নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, ট্রাম্প ততই দেশে বিদেশি–বিরোধী মানসিকতা খুঁচিয়ে তুলতে চাইছেন। তার জন্য করোনা–সংক্রমণের এই বিশ্বজোড়া মানবিক সঙ্কটেরও সুযোগ নিচ্ছেন তিনি। অভিবাসন বন্ধ করা, আমেরিকার চাকরি মার্কিনিদের জন্যই সুরক্ষিত রাখার জিগির নতুন করে তোলা, এমনকী আবার হয়ত মেক্সিকো সীমান্তে দেওয়াল তোলার মতো বিতর্কিত কর্মসূচি নিয়েও বাজার গরম করতে শুরু করবেন।
আমেরিকায় সাত লক্ষের ওপর করোনা–আক্রান্ত, মারা গেছেন ৪২ হাজারেরও বেশি। তা সত্ত্বেও মার্কিন অর্থনীতি ফের সচল করতে উঠেপড়ে লেগেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ওই একটিই কারণে। গত এক মাসে ২.২ কোটি মার্কিনি বেকার–ভাতার খাতায় নাম লিখিয়েছেন। এঁরা যখন চাকরির দাবিতে রাস্তায় নামবেন, ট্রাম্পের প্রমাণ করতে সুবিধে হবে যে, অভিবাসন বন্ধ করার সিদ্ধান্ত ঠিকই ছিল। ওই কারণেই আমেরিকার বিভিন্ন রাজ্যে লকডাউন তুলে নিয়ে, সামাজিক দূরত্বের বিধিনিষেধ উঠিয়ে দিয়ে স্বাভাবিক কাজকর্ম চালু করার দাবিতে যখন ‘নাগরিক বিক্ষোভ’ হচ্ছে, ট্রাম্প টুইট করে তার প্রতি সমর্থন জানাচ্ছেন। বিরোধীদের কটাক্ষ, টুইট না করে প্রেসিডেন্ট বরং আরও বেশি করে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করুন। সংক্রমণমুক্তি নিশ্চিত করা গেলে স্বাভাবিক নিয়মেই অর্থনীতি আবার সচল হবে।
মার্কিন কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট সদস্য জেরি ন্যাডলার টুইট করেছেন, এটা একজোটে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সময়। নিজেদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করে দেশকে ভাগ করার সময় নয়। যে অভিবাসীরা সামনে দঁাড়িয়ে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করছেন, তঁাদের ‘খারাপ’ হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করে প্রেসিডেন্ট আমেরিকার অসম্মান করলেন। তিনি নিজে যেখানে সঙ্কটের মুহূর্তে নেহাতই ক্ষুদ্র এবং অপদার্থ হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। আরেক সাংসদ ডন বায়ার টুইট করেছেন: ট্রাম্প শুরু থেকেই নিজের ব্যর্থতার জন্য অন্যকে দায়ী করতে তৎপর। বারাক ওবামা, বিরোধী গভর্নররা, চীন, স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি, এশীয় বংশোদ্ভূতরা— ট্রাম্পের অজুহাতের শেষ নেই!