করোনা আতঙ্কের মধ্যেই মশায় অতিষ্ঠ নগরবাসী

ঢাকা শহরের বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরে কিউলেক্স মশার কারণে দুর্ভোগে থাকার অভিযোগ জানিয়ে আসলেও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দাবি যে, তাদের কর্মীরা নিজেদের সর্বোচ্চ সক্ষমতা দিয়ে মশা মারার কাজ করে যাচ্ছেন। রাত-দিন সবসময়ই এখন মশার উপদ্রব অসহনীয় হয়ে উঠেছে এবং গত ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত সবশেষ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর দুই সিটি করপোরেশনের মশা নিধন কার্যক্রমে ধীর গতি চলে এসেছে বলে অভিযোগ নগরবাসীর।

মিরপুর-১১ নম্বরের আদর্শনগরে বসবাসরত মো. নিজাম উদ্দিন (৪০) নামে এক দোকান মালিক বলেন, ‘দরজা-জানালা সব বন্ধ করে রাখা সত্ত্বেও অসংখ্য মশার উপদ্রবে বাড়িতে থাকতে পারি না। প্রতিদিন সন্ধ্যায় আমাদের দুটি মশার কয়েল ব্যবহার করতে হয়। এমনকি দুপুর বেলাতেও আমাদের মশার কয়েল ব্যবহার করতে হয়।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘গত সিটি নির্বাচনের আগে ডিএনসিসি কর্মীদের খুব সক্রিয় দেখা গেছে। কিন্তু গত দুসপ্তাহের মধ্যে আমি কাউকে মশা নাশক ওষুধ স্প্রে করতে দেখিনি।’

সিটি করপোরেশন দ্রুত উদ্যোগ না নিলে গত বছরের মতো এবছরও ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার বিস্তার ঘটবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন নিজাম উদ্দিন। ডিএসসিসির আওতাধীন মধ্য বাসাবোর বাসিন্দা মোশতাক আহমেদ বলেন, গত কয়েক সপ্তাহের তুলনায় মশার উপদ্রব অনেক বেড়েছে। সারাদিন-রাত মশা নিরোধক স্প্রে ব্যবহার করে দরজা জানালা বন্ধ করে দিয়ে থাকতে হয় আমাদের। তিনিও এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, গত এক মাসে তাদের এলাকায় সিটি করপোরেশনের কাউকে তিনি মশা নিরোধক স্প্রে করতে দেখেননি।

মোশতাক আহমেদ আরও বলেন, ‘আমার আশংকা, এ বছর আবারও ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়বে যা নগরবাসীর জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক হবে, কারণ করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবও বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।’ পতঙ্গবিজ্ঞানী এবং বাংলাদেশে জিওলজিকাল সোসাইটির সাবেক সভাপতি ড. মঞ্জুর চৌধুরী জানান, শহরের বেশিরভাগ ড্রেনগুলো অনাবৃত হওয়ায় এগুলোর ময়লা পানি আটকে থাকে। এছাড়া যেসব ড্রেন ও খাল জৈবিকভাবেই দূষিত সেগুলো কিউলেক্স মশার বড় প্রজনন ক্ষেত্র। যেহেতু এই ড্রেন এবং খালগুলো সঠিকভাবে পরিস্কার করা হয় না, তাই এখানে মশার তীব্রতাও বেশি।

‘যেখানে দূষিত পানি বেশি বা যেসব অঞ্চলের ড্রেন বা খালে পানি আটকে থাকে সেসব অঞ্চলে কিউলেক্স মশার প্রজনন অনেক বেশি,’ যোগ করেন তিনি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত প্রায় ৩০০ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা হয়েছে, গত বছরের একই সময়ে এ সংখ্যা ছিল মাত্র ৭৩ জন। এর থেকেই বোঝা যায় যে, এবছর আবারও ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে।

মঞ্জুর চৌধুরী বলেন, ‘এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্রগুলো ধ্বংস করার জন্য তাৎক্ষণিক উদ্যোগ নিতে হবে। অন্যথায় এটি অসহনীয় হয়ে উঠবে।’ ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. শরীফ আহমেদ বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাব্য আশংকা থাকা সত্ত্বেও করপোরেশনের কর্মীরা কিউলেক্স এবং এডিস মশার প্রজনন স্থানে কীটনাশকের পাশাপাশি করোনার প্রাদুর্ভাব রোধে রাস্তায় জীবাণুনাশক পানি স্প্রে করছেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা এরইমধ্যে গত ফেব্রুয়ারিতে এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্রগুলো শনাক্ত করেছি এবং এগুলো ধ্বংস করতে দুটি ক্রাশ প্রোগ্রাম সম্পন্ন করেছি। এছাড়া ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে নগরীর ৫, ৬, ১১, ১৭, ৩৭ এবং ৪২ নম্বর ওয়ার্ডকে ঝঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করেছি।’ ‘আমরা আমাদের সর্বোচ্চ সক্ষমতা দিয়ে কিউলেক্স এবং এডিস মশার প্রাদুর্ভাব থেকে নগরবাসীকে রক্ষার চেষ্টা করছি,’ যোগ করেন তিনি। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে এডিস এবং কিউলেক্স মশা নিধনে করপোরেশনের কাজের ধীরগতির কথা অস্বীকার করেন ডিএনসিসির প্যানেল মেয়র মো. জামাল মোস্তফা।

তিনি বলেন, ‘আমরা এডিস ও কিউলেক্স মশার বিরুদ্ধে লড়াই করছি। এরমধ্যেই অভিশাপ হয়ে দেখা দিয়েছে করোনাভাইরাস। এজন্য আমরা করোনার প্রাদুর্ভাব রোধে শহরের রাস্তাগুলোতে জীবাণুনাশক পানি এবং একইসাথে মশার প্রজনন স্থানগুলোতে কীটনাশক স্প্রে করছি। এক প্রশ্নের জবাবে ডিএনসিসির প্যানেল মেয়র জানান, মশা এবং মশার প্রজনন ক্ষেত্রগুলো ধ্বংস করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ কীটনাশক তাদের কাছে রয়েছে। মো. জামাল মোস্তফা বলেন, ‘এডিস মশা নিধনের পূর্ব অভিজ্ঞতা আমাদের আছে এবং এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ রোধ করতে ইতিমধ্যে আমরা কাজ শুরু করেছি।’ সূত্র-ইউএনবি

আজকের বাজার/শারমিন আক্তার