কর্মকর্তাদের ‘অদক্ষতা’য় দুদক চেয়ারম্যানের ক্ষোভ

দুর্নীতি মামলার আসামিদের সাজা নিশ্চিত করতে না পারার জন্য তদন্ত কর্মকর্তাদের দায়ী করছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদ, অনুসন্ধান, তদন্ত ও প্রসিকিউশনে কর্মকর্তাদের নৈপুণ্য, দক্ষতা এবং একাগ্রতার অভাবে আসামিরা মুক্তভাবে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ পায়।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর দুদক কার্যালয়ে এক মতবিনিময়ে এ কথা বলেন দুদক চেয়ারম্যান। জার্মান উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা (জিআইজেড) ও দুদকের যৌথ উদ্যোগে কমিশনের পাঁচ বছর মেয়াদি কৌশলগত কর্মপরিকল্পনার প্রথম বছরে (২০১৭) বাস্তবায়িত কার্যক্রম এবং দ্বিতীয় বছরের (২০১৮) কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণে এই মত বিনিময় হয়।
সভায় কমিশনের ছয়টি অনুবিভাগের মহাপরিচালকরা ২০১৭ সালের কর্মকৌশল অনুসারে বাস্তবায়িত কার্যক্রম এবং ২০১৮ সালের সম্ভাব্য কর্মকৌশল তুলে ধরেন।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘২০১৭ সালে কিছু ইতিবাচক কার্যক্রম বাস্তবায়িত হয়েছে যেমন সশস্ত্র পুলিশ ইউনিট, হাজতখানা, হটলাইন ১০৬, গোয়েন্দা ইউনিট গঠন। কিন্ত অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ, অভিযোগের অনুসন্ধান, তদন্ত ও প্রসিকিউশনে কর্মকর্তাদের নৈপুন্য দক্ষতা এবং একাগ্রতার তীব্র অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে এবং সার্বিকভাবে আমাদের হতাশ করেছে।’
‘কমিশনের কর্মকর্তাদের কর্মতৎপরতা কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় থাকলে কীভাবে দুদকের মামলার আসামিরা আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে, মুক্তভাবে ঘুরে বেড়ায়? কেন তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে না?’
কর্মকর্তাদের দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘অভিযান পরিচালনার জন্য গাড়ি, সশস্ত্র পুলিশ সবই রয়েছে। কেবল উদ্যোগের অভাবেই আসামিরা ঘুরে বেড়ায়। এর দায়িত্ব কারা নেবে? অবশ্যই কর্মকর্তাদের নিতে হবে।’
‘আগামী বছর আরও উদ্দীপনা নিয়ে কার্যক্রম শুরু করেন- সবাই মনে রাখবেন আগামী বছর হয়তো কমিশন এ জাতীয় শৈথিল্য প্রশ্রয় দেবে না।’
দুদকসহ সরকারি-বেসরকারি সংস্থায় যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির ক্যুখ্যাতি রয়েছে তাদেরকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান দুদক প্রধান। বলেন, কমিশনের ভেতরে ও বাইরের সরকারি এবং বেসরকারি সকল সংস্থায় নিবিড় গোয়েন্দা কার্যক্রম চালাতে একটি বিশেষ ‘সার্ভিলেন্স টিম’ গঠন করা হবে।
এই দলের সদস্য কারা থাকবেন তা কমিশনের প্রধান নির্বাহী হিসেবে কেবল চেয়ারম্যান জানবেন এবং এই সার্ভিলেন্স টিম কমিশনের প্রধান নির্বাহীর কাছে প্রতিবেদন দেবে। এসকল প্রতিবেদনে যেসব দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তার নাম থাকবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান দুদক চেয়ারম্যান।
২০১৮ সালে কোচিং বাণিজ্য, প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ শিক্ষা ক্ষেত্রে দুর্নীতি প্রতিরোধে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়ার কথাও জানান দুদক চেয়ারম্যান। এক্ষেত্রে দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি, সততা সংঘ, সিভিল সোসাইটি, গণমাধ্যমসহ ছাত্র-শিক্ষকদের নিয়ে সমন্বিত সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করা হবে বলেও জানান তিনি।
অর্থপাচার মামলায় দীর্ঘসূত্রতায় উদ্বেগ প্রকাশ করে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘এটা এখন বৈশ্বিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে।’ এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে দুদকের নিয়মিত যোগযোগ রক্ষার জন্য মানিলন্ডারিং অনুবিভাগের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন দুদক চেয়ারম্যান।
আজকের বাজার: সালি / ০৬ ডিসেম্বর ২০১৭