কাঁচামালের দাম বাড়ায় রড-সিমেন্টের দর বৃদ্ধি

মুহম্মদ শহীদউল্লাহ : বাংলাদেশের সিমেন্টের পরিমাণ বর্তমানে বৃদ্ধি পেয়েছে, এটা অনেকে মুখে মুখে বলে। কিন্তু কেন বৃদ্ধি পেয়েছে? একটি সঠিক তথ্য দিলে হয়তো আমরা আপনাদের মাধ্যমে তাদেরকে বুঝাতে পারব। আর আমাদের রাষ্ট্রপ্রধান বা রাষ্ট্র পরিচালনায় যারা নিয়োজিত আছেন তাদের সাথে আমাদের মনে হয় একটি গ্যাপ সৃষ্টি হয়েছে। আমি একদম প্রচ্ছন্নভাবে বলতে পারি, বাংলাদেশে বর্তমানে দেশি ও বিদেশি মিলে প্রায় ৩৩টি সিমেন্ট কারখানা স্থাপিত আছে। যার উৎপাদন ক্ষমতা বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি মেট্রিক টন প্রতি বছর। উৎপাদন ক্ষমতা কেন বিল্ড আপ হলো?

আমাদের দেশের ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলমেন্টের জন্য এবং সরকারের যে মেগা প্রজেক্টগুলো আসছে সেটাকে মীট করার জন্য এই বড় বড় শিল্প কারখানাগুলো স্থাপিত হয়েছে। আমাদের সাড়ে ৪ কোটি মেট্রিক টন সিমেন্ট উৎপাদন ক্ষমতা আছে। আমাদের দেশে প্রতি বছর বর্তমানে সিমেন্ট ব্যবহৃত হচ্ছে মাত্র ৩ কোটি মেট্রিক টন। প্রায় দেড় কোটি মেট্রিক টন উৎপাদন ক্ষমতা এখনো আমাদের হাতে অবিক্রিত অবস্থায় আছে। যদি চাহিদা বৃদ্ধি পায়, সাপ্লাই কম থাকে তাহলে প্রাইজ বেড়ে যাবে। আর যদি সাপ্লাই বেশি থাকে, চাহিদা কম থাকে তাহলে কোনো ক্রমেই প্রাইজকে আপ করানো যায় না। যার জন্য আজকে আমরা বিগত ৭-৮ বছর বাংলাদেশে খুব ভালো প্রাইজে সিমেন্ট পেয়ে আসছি।

হঠাৎ করে কেন সিমেন্টের প্রাইজ বৃদ্ধি পেলো? সেটার মূল কারণ হলো আমরা যে সিমেন্ট উৎপাদন করি এদেশে তার শত ভাগ কাঁচামাল বাহির থেকে নিয়ে আসতে হয়। ৫টি কাঁচামাল দিয়ে সিমেন্ট তৈরী হয়। ক্লিংকার, জিপসাম, লাইম স্টোন, চাল্ক ও ফ্লাই অ্যাশ।

বিশ্বের সবচেয়ে ১ নম্বর ক্লিংকার আমদানিকারক দেশ হলো বাংলাদেশ। সেই ক্ষেত্রে প্রত্যেকটা দেশের যারা ক্লিংকার উৎপাদন করে বাংলাদেশের দিকে দৃষ্টি। আমরা ক্লিংকার আমদানি করেছি ভিয়েতনাম, চায়না, থাইল্যান্ড, মালয়সিয়া, ইন্দোনেশিয়া ইভেন জাপান থেকে। কিন্তু হঠাৎ করে ২০১৭ সালের জুলাই মাসে যে চায়না আমাদের কাছে ক্লিংকার এক্সপোর্ট করে আসছে এতো দিন, সেই চায়না তাদের ক্লিংকার উৎপাদন হ্রাস করে তারা ভিয়েতনাম এবং আশেপাশের এশিয়ান কান্ট্রিগুলো থেকে ক্লিংকার ক্রয় করতে শুরু করে। হঠাৎ করে ভিয়েতনামে সমস্ত ক্লিংকার চায়না বুক করে নেয়। বুক করে নেওয়াতে ওখানে প্রাইজ ওই পর্যায়ে বেড়ে যায়। আমরা ৩৮ ডলারে ক্লিংকার নিয়ে আসছি। ৩৮, ৩৯ সর্বোচ্চ আমরা ৪০ ডলারে ক্লিংকার নিয়ে আসতাম। বর্তমানে আমরা ক্লিংকার নিয়ে আসছি ৫৩ ডলারে। ৪০ ডলার থেকে যদি ৫৩ ডলার হয়, তবে তা কত পারসেন্ট বৃদ্ধি পেল? ১০, ১২ বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১৫ ডলার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই কারণে আমাদের পণ্যের কস্ট অর্থ্যাৎ এই পণ্যটা তৈরি করতে প্রায় ৯৫ থেকে ৯৮ টাকা আমাদের কস্ট বেড়ে গেছে।

আমাদের যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে ব্রিজগুলোর সুরক্ষার জন্য যে নতুন নিয়ম করেছে। এটা অত্যন্ত চমৎকার একটা পদক্ষেপ। তবে হঠাৎ করে এই পলিসিটা করাতে আমাদের ক্যারিং কস্ট বেড়ে গেছে। আমরা যেভাবে সিমেন্ট সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে দেই, সেখানে ট্রাক ফেয়ার বা ডিস্ট্রিবিউশন কস্টটা বৃদ্ধি পেয়েছে। আরেকটা খুব শর্টলি বৃদ্ধি পেয়েছে সেটা হলো ডলার। ডলার যেটা ৭৯ টাকা ছিল সেটা ৮৪ টাকায় বৃদ্ধি পেয়েছে। এখানে একটা গ্যাপ সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে আমাদের একটা কস্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। এগুলো কিন্তু খুব রিসেন্টলি ঘটেছে। এমন না যে এটা ২ বছর আগের কথা। এই খরচগুলো মিলে প্রায় ১ শত টাকার মতো আমাদের প্রতি ব্যাগ সিমেন্টে বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু এখন বাজারে গিয়ে চেক করে দেখা যাবে, আমরা এই কস্টটা কোনো ক্রমেই নিতে পারছি না। উৎপাদন বেশি যেহেতু আমাদের দেশি বিদেশি প্রত্যেকের মধ্যেই তীব্র প্রতিযোগিতা ছিল সিমেন্ট বিক্রী করার জন্য। যার জন্য মাত্র ৫০ টাকা আমরা আমাদের এই কস্টে অ্যাডজাস্ট করতে সক্ষম হয়েছি। এখন আমাদের যা কস্ট সেটা প্রায় ৪০ থেকে ৫০ টাকা পিছনে চলে এসেছে।

এই যে সিমেন্টের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে, এটা শুধুমাত্র ম্যানুফ্যাকচারারদের কারণে নয়। অনেক সম্মানিত ব্যক্তিরা বলে ফেলেন, সিন্ডিকেট করে তারা দাম বৃদ্ধি করে ফেলেছে। আমি ওই সম্মানিত ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে বলব, তারা যেন এই সেক্টর সম্পর্কে ভালোভাবে নলেজ নিয়ে দাম কেন বৃদ্ধি পেল তা ভালোভাবে যাচাই করে দেখেন। আমার ধারণা তারা তখন আর এমন বলবেন না। আর বাংলাদেশে পুরো দেশ বির্নিমাণে যে ভূমিকা রেখে যাচ্ছে সিমেন্ট। এই দেশের সমস্ত অবকাঠামো নির্মাণে সিমেন্ট ব্যবহৃত হচ্ছে। বর্তমান সরকার যে বড় বড় প্রজেক্টের পরিকল্পনা নিয়েছে সেই পরিকল্পনাগুলো যদি না হয় তবে এই সেক্টরটি বসে যাবে। সুতরাং আমাদের চিন্তা ভাবনার ভিতরে সব সময় একটা বিষয় কাজ করে, এই সেক্টরটা যেহেতু বেশ ম্যাচিউর, সিমেন্ট শিল্প এখন আর আমাদেরকে বিদেশ থেকে সিমেন্ট আমদানি করতে হয় না। এই দেশে উৎপাদন করে দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে আমরা বিদেশেও সিমেন্ট রপ্তানি করছি। এতো বড় একটা সেক্টরে সিন্ডিকেট করে কিংবা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে কখনো দাম বৃদ্ধি করার কোনো কারণ নেই। তবে যে প্রাইজ এখন ৫০ টাকা ৬০ টাকা মার্কেটে বৃদ্ধি পেয়েছে, এই প্রাইজ অটোমেটিক্যালি কমে যাবে, যদি চায়না ভিয়েতনাম থেকে ক্লিংকার কিনা স্টপ করে দেয় এবং কাঁচামালের প্রাইজ আগের পর্যায়ে চলে আসে।

স্টিল মিল আমাদের দেশে এটা নিয়ে সর্বোচ্চ আলোচিত হচ্ছে এখন। সিমেন্টের থেকেও বেশি আলোচিত হচ্ছে স্টিল নিয়ে। একটা দেশের স্টিল কনজামশান রেট দিয়ে সিমেন্ট পার কেজিতে কতটুকু ব্যবহৃত হয়, সেটা দিয়ে একটা দেশের অগ্রগতি, সেই দেশের অর্থনৈতিক মাপকাঠি ঠিক করা হয়। আমাদের এই দেশে স্টিল যে ব্যবহৃত হচ্ছে, এই দেশে কোনো আকরিক লোহা নাই। আমরা শত ভাগ স্টিলের কাঁচামাল দেশের বাহির থেকে ইমপোর্ট করে নিয়ে আসি। অনেকেরই এই স্টিল সেক্টর সম্পর্কে একটা ভ্রান্ত ধারণা আছে। উনারা জানেন না, স্টিল কত প্রকার বা রডই কী মানের এই বাংলাদেশে উৎপাদিত হয়।

আমি তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, বাংলাদেশে প্রায় অত্যাধুনিক গ্রেড যা দিয়ে বিশ্ব মানের রড, যে রড দিয়ে রূপপুর পাওয়ার প্লান্ট, পদ্মা ব্রিজ ও বড় বড় মেগা প্রজেক্ট তৈরি হয় সেই রড তৈরি হয় বর্তমান ৭০ পারসেন্ট টু ৭৫ পারসেন্ট। আর বাকি একটা স্টিল আছে যেগুলো শীপ ব্রেকিং থেকে কিছু প্লেট কালেক্ট করে রড তৈরি করা হয় তাও প্রায় ২০-২৫ পারসেন্ট। এই যে রডের এক দুইটা প্রকারভেদ, সেগুলো জানতে হবে। কোন মানের রডের প্রাইজ কী?

আমাদের দেশে তিন ক্যাটাগরির রড আছে বর্তমানে। যেটা আমরা বলি যে ৫০০ডব্লিউ, যেটাকে নম্বর ওয়ান কোয়ালিটির। যেটা দিয়ে বড় বড় মেগা প্রজেক্ট হয়। তার পরে একটা গ্রেড আছে। ফাইভ একটা গ্রেড আছে। যেগুলো দিয়ে ছোট ছোট স্থাপনা তৈরি হয়। বাংলাদেশে বর্তমান স্টিল মিলের সংখ্যা প্রায় ২৫০টি। এই ২৫০টি মিলের মধ্যে এই যে ৭০ পারসেন্ট রড যেটা উন্নত মানের বা ভালো গ্রেডের রড তৈরি হয়, সেখানে প্রায় ৪০টি ফ্যাক্টরি তারা উৎপাদনে নিয়োজিত। বাংলাদেশে আগে মাত্র ৩০ লাখ টন রড উৎপাদন হতো আজ থেকে ৮-১০ বছর পূর্বে। বর্তমানে উৎপাদন হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ লাখ টন প্রতিবছর। এমন উৎপাদনে সক্ষম ফ্যাক্টরিগুলো বর্তমানে আমাদের দেশে আছে। কিন্তু ডিমা›ড কত? রড নিয়ে আমরা মন্তব্য করছি, রডের বাজার এতো হাই হয়ে গেছে। আসলে আমাদের এই দেশে মাত্র ৫০ লাখ টন রড ব্যবহৃত হয়। সমস্ত মেগা প্রজেক্টগুলো ধরে রডের উৎপাদন এবং ব্যবহারের মধ্যে বিশাল গ্যাপ আছে। এই গ্যাপের মধ্যে ২৫০টি ফ্যাক্টরি মিলে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা বা সিন্ডিকেশন করা কি úসিবল? কতোটা ম্যানুফ্যাকচারার মিলে এই কাজটা করতে পারে? অনেকেই এই শব্দটা করেছেন।

যারা মন্তব্য করেছেন তাদেরকে বলছি, স্পেসিফিক ফিগার নিয়ে কথা বলা ও মন্তব্য করা উচিত। যেমন, আমাদের রড নিয়ে অনেকে বলেন যে, ৪০ হাজার টাকা থেকে ৭৫ হাজার টাকা বেড়েছে। আমাদের এই সেক্টরের একজন বিজিএমইএ’র সম্মানিত প্রেসিডেন্ট এবিএম সিদ্দিকুর রহমান ভাই আমাদের অত্যান্ত সম্মনীত ব্যক্তি উনাকে আমরা রেসপেক্ট করি যেহেতু ভালো একটি সেক্টরকে উনি লীড দিচ্ছেন। আমি সেদিন পত্রিকায় দেখলাম উনি মন্তব্য করেছেন, অনৈতিক কিছু শিল্প কারখানার মালিকগণের ইফেক্টে আমরা হঠাৎ করে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকার রড ৭৫ হাজার টাকা করে ফেলছে। কোনো কারণ নেই। কিন্তু আমি যদি বলি, আপনি কি জিনিসটাকে যাচাই বাছাই করে দেখেছেন? আপনি যদি এটার ভেতরে ভালোভাবে যাচাই বাছাই করে দেখতেন তাহলে এই ধরণের মন্তব্য থেকে আপনি বিরত থাকতেন।

আমি শুধু আপনার উদ্দেশ্যে এবং আপনার মতো যারা মন্তব্য করেছেন তাদের উদ্দেশ্যে সামান্য দুটি কথা বলি, স্টিলে এই দেশে কোনো আকরিক লোহা নেই এবং ৮৫ পারসেন্ট ‘র’ মেটারিয়াল ইমপোর্ট করে নিয়ে আসতে হয়। এই দেশে শুধু গৃহস্থালীয় কাজকর্ম থেকে সামান্য কিছু ওয়াস্ট বা রিসাইক্লিনিং প্রোডাক্ট আসে সেটি আমাদের একমাত্র সোর্স। আর ৮৫ পারসেন্ট মেটারিয়াল বাইরে থেকে নিয়ে আসতে হয়। যা আজ থেকে ২ মাস পূর্বে বা ৩ মাস পূর্বে ৩০০ বা ৩২০ ডলার ছিল সেটা হঠাৎ করে ৪২৮ থেকে ৪৩০ ডলারে চলে আসছে। শুধু এই মেইনটেনেজ ট্র্যাপের কারণে প্রায় ৯৫০০ থেকে ৯৬০০ টাকায় বৃদ্ধি পেয়েছে। এটা হলো ইন্টারন্যাশনাল কারণে।

এছাড়া যে কেমিক্যাল দিতে হয় সেই কেমিক্যাল ১১০০ ডলার ছিল সেটা ১৪০০ ডলারে চলে গেছে। এক্সপোর্ট-ইমপোর্টের জন্য আমাদের যে কনটেইনার বিদেশ থেকে আসে সেই কনটেইনারগুলো বহন করার জন্য আমাদের ওজনের বাইরে যদি ১ টন বেশি বহন করতে হয় আমাদের ৫০০০ টাকা তাকে পেনাল্টি দিতে হয়। এই ওজনে আমাদের কেরিং কস্ট অলমোস্ট ডাবল হয়ে গেছে। কাঁচামালটা প্রথমে জাহাজে করে চিটাগং থেকে আমাদের ফ্যাক্টরিতে নিয়ে আসি ঢাকা আবার উৎপাদন করে সারা বাংলাদেশে সরকারি বড় বড় প্রজেক্টগুলোতে আমরা রড পৌঁছিয়ে দিচ্ছি। এই যে আসা ও যাওয়া এই দুই কেরিংয়ের ক্ষেত্রে একটা বিপুল পরিমাণ অঙ্ক যুক্ত হয়েছে। বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা বিদ্যুৎ পাচ্ছি বলেই বড় বড় প্রজেক্টগুলো করতে সক্ষম হচ্ছি। এটা সত্য। এটার প্রাইজ যখন বাড়ে ঠিক পণ্যের ওপরই এর ইমপেক্ট হয়। এখন প্রাইজ বৃদ্ধি পেল সবাই আমরা মেনে নিলাম।

আমাদের যখন মূল্যটা বৃদ্ধি পায় তখন যদি সোচ্চার হয়ে এর প্রতিবাদ করি তাহলে কিভাবে ম্যানুফ্যাকচারাররা বিশ্বমানের রড তৈরি করবে। তারা এই পণ্য করে আবাসন শিল্প বলেন, দেশ বিনির্মাণ বলেন, বড় বড় প্রজেক্ট বলেন সব আমাদেরই। আমরা একেবারে এ টু জেড কস্টিং করে মাননীয় শিল্পমন্ত্রী মহোদয়ের নিকট শিল্প মন্ত্রণালয়ের শিল্প সচিবের মাধ্যমে শিল্প মন্ত্রণালয় এবং সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে আমাদের রডের প্রাইজ যে ১৮০০০ প্লাস বৃদ্ধি পেয়েছে সেটা কস্টশীটসহ পাওয়ার পয়েন্টে আমরা সম্পূর্ণ জিনিস দেখিয়েছি এবং এটা তাদেরকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছি। তারা অবশ্যই এটা উপলব্ধি করেছেন। কিন্তু কিছু সংখ্যক লোক আছেন যারা নাকি এটা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল না তারা মন্তব্য করছেন। তাদের প্রতি রেসপেক্ট রেখে বলি, আপনাদের যদি কোনো কিছু জানতে ইচ্ছা করে বা বুঝতে ইচ্ছা করে সংশ্লিষ্ট ম্যানুফেকচারার বা উৎপাদনকারীদের সাথে বা এদের সাথে যদি একটু নলেজ শেয়ার করেন তাহলে আপনারা জানতে পারবেন।

বাজেট যদি আসে সেক্ষেত্রে আমাদের পণ্য মূল্য কমার ক্ষেত্রে বিশেষ করে যদি প্রথমে বলি সিমেন্ট। সিমেন্টের প্রাইজ যদি ইন্টান্যাশনাল মার্কেটে কমে তাহলে আমাদের এখানে কমবে। কিন্তু আরেকটা দিক আছে, গভর্মেন্ট ইচ্ছে করে ইনিশিটিভ নিতে পারে। যেহেতু এই সিমেন্ট দিয়ে বাংলাদেশের অবকাঠামো নির্মাণ, রাস্তাঘাট নির্মাণ, আবাসন শিল্প নির্মাণ, মেগা প্রজেক্টগুলো তৈরি সেক্ষেত্রে এটার ইন্টারমিডিয়েট ‘র’ মেটারিয়াল হলো ক্লিংকার। সেই ক্লিংকারের ডিউটি আছে প্রায় ১২.৫ বা ১৩ এর একটু বেশি। এটা যদি সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা যায় অর্থ্যাৎ ৫০০ টাকা প্রতি টনে যে ডিউটি বা কাস্টম ডিউটি আছে তা এই বাজেটে যদি ২০০ টাকায় করে দেন, তাহলে এখানে সিমেন্টে প্রাইজ একটু কমে আসবে। কেননা এই ২০০ টাকা আজ থেকে ৪ বছর আগেও ২০০ টাকা ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে এখানে ২০০ টাকার পরিবর্তে ৫০০ টাকায় বৃদ্ধি করা হলো। যার জন্য আমাদের প্রাইজ কমার একটা স্কোপ আছে।

এখানে ক্ষেত্র বিশেষে আমাদের একটা বাধা নিষেধ আছে যে এতো টনের বেশি নিতে পারবে না। কিন্তু আমাদের সেই ট্রাকগুলোর সক্ষমতা অর্জন হয় নাই যে আমরা ওভার লাইট সেই এক্সেল বৃদ্ধি করে ট্রাকগুলোকে বড় করে ওজন বৃদ্ধি করার প্রক্রিয়ায় যাব। কারণ আমাদের এই মুহুর্তে প্রায় ৩ লাখ ট্রাক এই বাংলাদেশে চলাচল করছে পণ্য সামগ্রী নিয়ে। এই ট্রাক যদি আমরা এই পলিসি করি তাহলে মোর দেন আরো ৩ লাখ ট্রাকের প্রয়োজন হবে। কিন্তু এটা তো বললেই কমপ্লিট করা যাবে না। এটার জন্য একটা সময় লাগবে এবং এই সক্ষমতা অর্জনের জন্য আমাদেরকে সময় দিতে হবে। অবশ্যই আমরা রাস্তাঘাট সুরক্ষার জন্য একমত পোষণ করি। ব্রিজগুলো নিরাপদ থাক। এটাও আমরা চায়। কারণ সেই ব্রিজগুলো দিয়ে আমরা চলাচল করব। আমাদের পণ্য যাতায়াত করবে। কিন্তু সেটার জন্য আমাদেরকে সময় দেওয়া উচিত। সেক্ষেত্রে ক্লিংকারের প্রাইজ যদি ডিউটিটা কমানো হয় এবং এক্সেল রডটা যদি স্থগিত করা হয় তাহলে সিমেন্টের প্রাইজ আশা করি একটু কমে আসবে।

প্লাস ইন্টারন্যাশনাল মার্কেট কমে গেলে এটা অটোমেটিক্যালি সহনশীল পর্যায়ে চলে আসবে। একচুয়ালি দুইটা জিনিস। একটা হলো গভর্মেন্ট পার্ট এবং আরেকটা হলো ইন্টারন্যাশনাল পার্ট। ইন্টারন্যাশনাল পার্ট যেটা আমরা কাঁচামাল বাইরে থেকে কিনি সেটা কখনো কোনো দিন আমাদের এবং আমাদের উচ্চ মান গভমেন্টের কোনো হাত নেই যে সেই কাঁচামালের প্রাইজের সেই রিডিউজ বা ইনক্রিজ করার হাত নেই। এটা ইন্টারন্যাশনাল যখন কমে যাবে বা চায়না যখন কেনা বন্ধ করবে বা আদারস আমেরিকার স্টিলের ওপর একটি ইমপেক্ট আছে ডোনাল্ট ট্রাম্প তারা ২৫ পারসেন্ট ডিউটি বসিয়েছে। এই ইমপোজের কারণে তার দেশে যে মেটারিয়ালটা ছিল তার মোস্ট পারচেজ করতাম বাংলাদেশ আমরা। প্রায় ৫২ টু ৬০ পারসেন্ট মেটারিয়াল বাংলাদেশে এমেরিকা থেকে আসতো।

এখন এমেরিকা নিজেরা মেটারিয়াল শপ করে তারা তাদের স্টিল প্রোডিউস করবে চায়না থেকে প্রোডাক্ট ইমপোর্ট না করে বা আদারস কান্ট্রি থেকে না এনে। তাতে করে কী হলো ওই পরিমাণ মেটারিয়ালটা যদি আমরা ফুলফিল করতে না পারি তাহলে আমাদের এখানে ‘র’ মেটারিয়ালের প্রাইজ সতেজ দেখা দিবে। আর এই সতেজ যদি অব্যাহত থাকবে এবং প্রাইজ যদি ইন্টারন্যাশনালি বাড়ে তাহলে এখানে আমাদের কোনো হাত থাকবে না এই রডের প্রাইজ বৃদ্ধির জন্য। ঠিক তার যদি বিপরীত হয় আগের পর্যায়ে প্রাইজ চলে আসে তাহলে অটোমেটিক্যালি রডের যে আগের প্রাইজ ছিল সেখানে চলে আসবে। সেক্ষেত্রে আমাদের দেশীয় যে সমস্ত রডের প্রাইজগুলো বৃদ্ধি পেয়েছে সেগুলো যদি গভমেন্ট একদম ক্লোজলি মনিটরিং করে সে বিষয়ে ইনিশিটিভ নেয়। তাহলে প্রাইজ অনেকটা সহনশীল পর্যায়ে চলে আসবে।

মাননীয় বাণিজ্যমন্ত্রী এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের শিল্প সচিব উনারা আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন, যে সমস্ত বেরিয়ারগুলো বাংলাদেশে ইমিডিয়েট উইথড্র করা সম্ভব তারা এটা খুব ক্লোজলি ১ পারসেন্টে আশা করি আমরা সেগুলো যদি উইথড্র করেন তাহলে সেটাতেও আমাদের স্টিলের প্রাইজ কমে আসবে। সাউথ-ইস্ট এশিয়ার প্রত্যেকটি কান্ট্রিতেই সিমেন্ট এবং স্টিলের ওপর কোনো টেক্স বারডেন রাখে না। কেননা এই স্টিল দিয়ে দেশ বিনির্মাণের সমস্ত কাজ হয়। সেই স্টিলকে যদি আমরা বিভিন্ন বেরিয়ারের বিভিন্ন ইস্যুতে আমরা এটাকে বিভিন্নভাবে প্রেসার দিয়ে রাখি তাহলে এটা বিকশিত হবে না।

আমরা বর্তমান সরকারকে অত্যন্ত সাধুবাদ জানায়, এই দেশে কোনো কস্মিন কালেও ৯০ লক্ষ টন বা ৮৫ লক্ষ টন স্টিল উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জিত হতো না যদি বিদ্যুতের এই সক্ষমতা আমাদের অর্জন না হতো। ঠিক সিমেন্টের ক্ষেত্রেও বলব, সাড়ে ৪ কোটি মেট্রিক টন উৎপাদন করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে ইক্সপোর্ট করার সক্ষমতা অর্জন হতো না যদি বর্তমান সরকার এই বিদ্যুতের এই যুগান্তকারী পদক্ষেপ না নিত। এই দিক থেকে আমরা অনেক সাধুবাদ জানায়। এটাও আমরা এপ্রিসিয়েট করি আমাদের সেক্টর থেকে বর্তমান গভমেন্ট এবং সমস্ত স্টক হোল্ডারকে আমরা এসুরেন্স দিতে পারি, আমরা এমন সক্ষমতা অর্জন করেছি, এই দেশের যে কোনো ডিমান্ড ফুলফিল করে বিদেশে এক্সপোর্ট করার মতন একটা পণ্য কখনো কোনো সিন্ডিকেশন অথবা যোগসাজোস অথবা অনৈতিকভাবে এটাকে কন্ট্রোল করা যায় না।

কারণ সেই পর্যায়ে সেক্টর নাই। এই সেক্টর এখন অনেক বড় হয়েছে এবং এখানে হাজার হাজার কোটি টাকা ইনভেস্টমেন্ট হয়েছে। কোনো কোম্পানি তার প্রোডাকশন কেটল করে ব্যাংকে ইন্টারেস্ট দিয়ে সে লসের দিকে যাবে না। সবার তাড়না থাকে কতোটুকু পণ্য আমরা বেশি করে বিক্রি করতে পারি এবং আমাদের ওভার রেট লস রিডিউজ করতে পারি। সুতরাং এখানে কৃত্রিমভাবে প্রাইজ বৃদ্ধি করা, সংকট সৃষ্টি করা, সিন্ডিকেশন করা একেবারেই অসম্ভব। এটা আমি জোড়ালোভাবে দেশবাসীকে জানাতে চাই।

মুহম্মদ শহীদউল্লাহ
ব্যবস্থাপনা পরিচালক
মেট্রোসেম গ্রুপ
ভাইস প্রেসিডেন্ট,
বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাক্চারার্স এসোসিয়েশন।

রাসেল/