চ্যাঁপা শুটকির গন্ধে জড়িয়ে আছে কিশোরগঞ্জের শতবর্ষের ঐতিহ্য।
বড় বাজারের শুটকি হাট যেন এক জীবন্ত ইতিহাসের পাতা। সেখানে প্রতি সপ্তাহে দু’দিন-বুধ ও বৃহস্পতিবারে জমে ওঠে শুটকির হাট, প্রতিবাজারে লেনদেন হয় তিনকোটি থেকে চারকোটি টাকার।
কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী বড় বাজারের চ্যাঁপা শুটকি আজ দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও খ্যাতি কুড়িয়েছে। হাওরের জেলেদের শ্রম-ঘাম মিশে আছে এই শুটকিতে। জেলার নিকলী, ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী সিলেট এবং সুনামগঞ্জ থেকে আসে নদীর তাজা মাছ। বর্ষার জল নামলে প্রচুর পুঁটি মাছ পাওয়া যায়।
সেসব মাছ প্রক্রিয়াজাত করে রোদে শুকিয়ে তৈরি হয় শত শত মণ চ্যাঁপা শুটকি। এর স্বাদে মিশে থাকে নদীর জল আর প্রকৃতির বৈচিত্র।
স্থানীয় শুটকি ব্যবসায়ীরা জানান, সপ্তাহে দু’দিন বুধ ও বৃহস্পতিবারের বাজারে তিন থেকে চারকোটি টাকার চ্যাঁপা-শুটকি বিক্রি হয়। এ হিসেবে এক মৌসুমেই কিশোরগঞ্জের বড় বাজারের চ্যাঁপা শুটকির আড়তগুলোতে প্রায় দুইশ’ কোটি টাকার বানিজ্য হয়। শুধু দেশেই নয়, বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে এই শুটকি।
বড় বাজারের দয়াল ভান্ডারের ম্যানেজার হারুন অর রশীদ জানান, কার্তিক মাস থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত চলে চ্যাঁপা-শুটকির মৌসুম। এই ছয়মাসে আমাদের কয়েক কোটি টাকার ব্যবসা হয়ে থাকে। দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা এখান থেকে এসে চ্যাঁপা-শুটকি কিনে নিয়ে যায়।
লোকনাথ ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী সুকুমার বর্মন বলেন, বড় বাজার কেবল শুটকির হাট নয়, এটি কিশোরগঞ্জের শতবর্ষী ঐতিহ্যের প্রতীক। দেশের ঐতিহ্যবাহী এই বাজারকে সংরক্ষণ ও উন্নয়নে আরও উদ্যোগ প্রয়োজন।
কারণ বড় বাজার শুধু বাজার নয়, এটি বাঙালির খাদ্যসংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।
বড় বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন জানান, বড় বাজারের শুটকির হাট শুধু ব্যবসার স্থান নয়, এটি একটি ঐতিহ্য। তিনি বড় বাজারের অবকাঠামোগত উন্নয়নের দাবি জানান।
কিশোরগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম জানান, শুটকি শিল্পকে আরও এগিয়ে নিতে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে মৎস্য অধিদপ্তর কাজ করছে। এ লক্ষ্যে সরকার বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।