কুমিল্লার হাট বাজারে তরমুজ উঠতে শুরু করেছে

গ্রীষ্মের দৃষ্টিনন্দন মনলোভা ফল তরমুজ কুমিল্লার হাট বাজারে আমদানি হতে শুরু করেছে ছোট-বড় আকারের হাইব্রিড জাতের তরমুজ। মৌসুমী ফল হিসেবে বিশেষ চাহিদার খ্যাতি রয়েছে তরমুজ ফলে। স্বল্প দামের বিশেষ গুন সম্পন্ন উৎকৃষ্ট সু-স্বাধূ ফলে আয়রন, ক্যালসিয়াম, ক্যালরীর মত গুণাগুণ সম্পন্ন তরমুজের গ্রহণ যোগ্যতা প্রচুর। সহজ চাষযোগ্য ফলের ক্রয় মূল্য ক্রেতার নাগালে থাকায় গরীব-ধনী সবার তরমুজ খেতে পারছে। তাই সহজ আবাদ যোগ্য হওয়ায় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের উপকূল চাষিরা মনোযোগী তরমুজের আবাদে। আর অক্লান্ত পরিশ্রমে উপকূলয়ী অঞ্চলে আবাদ হওয়া সারা দেশের পাশাপাশী তরমুজ দখল করে নিয়েছে কুমিল্লার হাট-বাজার ও শহর-গ্রাম। আর নানা জাতের স্তুপাকৃতির দৃশ্য নজর কাটছে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের। সে সাথে লোভনীয় ফল ক্রয়-বিক্রয়ে সর্বত্র ভিড় জমেছে।
কুমিল্লায় তরমুজ বিক্রেতা মো. শাহআলম বাসসকে বলেন, বাজারে তরমুজ আসতেই বিক্রি হচ্ছে দেদ্বারছে। স্বাদে-গুণে এগিয়ে থাকায় নোয়াখালীর তরমুজে রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। যে কারণে কুমিল্লা জেলার গ্রামে-গঞ্জে বাজার ভরে উঠেছে নোয়াখালীর তরমুজে। আবার রৌদ্রের দাপদাহ থেকে শরীরের ক্লান্তি দুর করতে সামর্থ্য অনুপাতে তরমুজ ক্রয় করতে পেরে খুশী ক্রেতারাও। কুমিল্লা কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তরমুজের অনেক জাত রয়েছে। দেশীয় জাতের তরমুজের মধ্যে রয়েছে- গোলালন্দ ও পতেঙ্গা জাতের তরমুজ। বিদেশি জাতের মধ্যে রয়েছে- টপইল্ড, সুগার ডেলিকাটা, গ্লোরি, চালর্স, স্টোন গ্রে ইত্যাদি। হাইব্রিড জাতের মধ্যে রয়েছে- পতেঙ্গা জায়েন্ড, মিলন মধুর, ওয়ার্ল্ড কুইন, বিগ টপ, চ্যাম্পিয়ন, অমৃত, সুগার এম্পায়ার, সুইট বেবি, ফিল্ড মাস্টার, সুগার বেলে, ক্রিমসন সুইট, ক্রিমসন গ্লোরি, মোহিনী, আমরুদ, ভিক্টর সপার, ওশেন সুপার, আসাই ইয়ামাভো, আধারি, পুষা বেদানা, পাটনাগরা, মুধ এফওয়ান ইত্যাদি। তবে বর্তমানে হাইব্রিড জাতের তরমুজ বাজারে উঠতে শুরু করেছে। কৃষি বিজ্ঞানী ড. শহীদুল্লাহ বলেন, খাদ্য, পুষ্টি ও ওষুধি গুণে ভরপুর বিধায় তরমুজ বাঙালি সমাজে খুবই জনপ্রিয় ফল। প্রচন্ড গরমে একফালি তরমুজ ক্লান্ত মানুষের রসনা তৃপ্ত করে। প্রতিদিন এক টুকরো তরমুজ খেলে শরীরের ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল বা চর্বি গঠনে বাধাগ্রস্ত হয়। হৃদরোগে ঝুঁকি কমে যায়। শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। আমেরিকান গবেষকরা একদল ইঁদুরকে চর্বিযুক্ত খাবার ও তরমুজ খেতে দিয়ে পরীক্ষা করেছেন। পরীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে, চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণের পরও পাশাপাশি তরমুজ খাওয়ার কারণে ইঁদুরগুলোর রক্তে লো-ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন বা এলডিএলর পরিমাণ অনেক কম হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। রক্তে এলডিএল চর্বি বৃদ্ধি পেলে ধমণীতে পানি জমে যায়। ফলে পানি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়। কৃষি বিজ্ঞানী ড. শহীদুল্লাহ আরো বলেন, নিয়মিত তরমুজ খেলে রক্তে চর্বি কমে যায়। তরমুজ সাধারণত শুষ্ক আবহাওয়ায় বেশি ফলে। বাংলাদেশে বসন্ত ও গ্রীষ্ম মৌসুমে বাতাসে জলীয় কণা কম থাকার কারণে তরমুজের ব্যাপক ফলন হয়। যে বছর বেশি বৃষ্টিপাত, সে বছর তরমুজের ফলন কমে যায়। এ বছর বৃষ্টি কম থাকার কারণে তরমুজের ফলন বেশি হতে পারে বলে জানিয়েছেন এ কৃষি বিজ্ঞানী। তবে স্থানীয় জাতের তরমুজ এখন খুবই কম চাষাবাদ হয়। বিদেশী ফলের তুলনায় দেশী ফলের মূল্য একেবারে কম বললে চলে। আবার বেশী মূল্যের ফলের তুলনায় দাম কম ফলের পুষ্টিগুণ বহুগুণ। যে করণে সু-স্বাধু তরমুজের বেড়েছে কদর। তাছাড়া ক্রয়সাধ্য হওয়ায় তরমুজে মাধ্যমে সকল পুষ্টির চাহিদা পূরণ সম্ভব বলে জানান ক্রেতা মোঃ আলাউদ্দিন। তাই রোগ-বালায় হতে বাঁচতে হলে তরমুজসহ যে কোনো দেশীয় মৌসুমী ফল খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসকরা। কুমিল্লার মেডিকেল কলেজের ডাঃ ইজাজুল হক বাসসকে বলেন, তরমুজ ফল আইরন, ক্যালসিয়াম, শর্করাসহ বহু প্রকারের ভিটামিন সমৃদ্ধ ফল। প্রচন্ড গরমের দিনে হিটস্ট্রোক হতে বাচাঁতে হলে সবাইকে তরমুজ জাতীয় ফল খাওয়া জরুরী। আবার মৌসুমী ফলে সাধারণ মানুষের ভিটামিনের চাহিদা সম্ভব বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রারণ অধিদফতর কুমিল্লার উপ-পরিচালক সুরজিত চন্দ্র দত্ত বলেন, তরমুজ চাষে প্রয়োজন বেলে দো-আশ মাটি, পর্যাপ্ত সার-ফসফেট এবং পানি। পরিমান মতো পানির যোগান না থাকায় কুমিল্লা অঞ্চলে তেমন একটা তরমুজ চাষ হয় না। তবে পাশর্^বর্তী নোয়াখালী জেলার সুর্বণ চর এলাকার তরমুজের ব্যাপক ফলন হচ্ছে। এসব অঞ্চলের তরমুজে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানী হচ্ছে বলে জানান তিনি।