কুষ্টিয়ায় তালের রস বিক্রি করে স্বাবলম্বী গাছি গহের।

ভোরে মসজিদে মোয়াজিনের ফযরের আযানের সুর আল্লাহ আকবার দিলেই ঘুম ভাঙ্গে আব্দুল গহের আলীর। ঘুম থেকে উঠে নামাজ আদায়ের পর রেরিয়ে যান তাল গাছে উঠার উদ্দেশ্যে । সাত সকালে তাল গাছে উঠার একটাই উদ্দেশ্য , তালের রস সংগ্রহ করা। অন্য গাছিদের মত তাল গাছে বাঁশ বাঁধে যাতে তাড়াতাড়ি তাল গাছে ওটানামা ও রস সংগ্রহ করতে পারে। প্রতিটি তাল গাছের মাথায় মৌচা একটু কেটে সঙ্গে নেট দিয়ে বেঁধে মাটির হাড়ি পেতে রাখে। হাড়ির মধ্যে একটু চুন দিয়ে আসে যাতে রস পরিষ্কার থাকে। যে গাছে তাল ধরে না তাকে জটা তাল গাছ বলে। সাধারণত জটা গাছ ও যে গাছে তাল ধরে উভয় প্রকার গাছ থেকে রস সংগ্রহ করেন তিনি।

বছরের পর বছর ধরে তালের রস সংগ্রহ করে বিক্রি করেন এই গাছি। রস বিক্রি করে যা উর্পাজন করেন তা দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন গাছি আব্দুল গহের আলী। চৈত্র মাসের শুরু থেকে জ্যৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত দিনে তিনবার সকাল দুপুর ও সন্ধ্যায় তাল গাছের রস সংগ্রহ করেন তিনি।

কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলায় পান্টি ইউনিয়নের খাগড়বাড়িয়া গ্রামের আব্দুল গহের আলী আব্দুল গণি সেখের ছেলে তিনি। সোমবার সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, রস সংগ্রহ করে তার নিজ গ্রাম খাগড়বাড়িয়া মোড়ে রস বিক্রি করেন এই গাছি। তার দেখা দেখি গাছি আমিরুল , রাজীব ,অহেদ ,আমজাদ ,মনোহর আরোও অনেকে রস বিক্রি করেন এখানে। প্রতিদিন শত শত মানুষ বিভিন্ন জেলা হতে ভীর জমায় রস খাওয়ার জন্য।

কেমন আছেন এখন ? এমন প্রশ্নের জবাবে দৈনিক আজকের বাজারকে আব্দুল গহের আলী বলেন,আমার দুই মেয়ে এক ছেলে । ছেলে মেয়ে উভয়কে বিয়ে দিয়েছি। আগে অন্য মৌসুমে পানের বরজে কাজ করতাম এখন বয়সের ভারে শরীর অসুস্থতার জন্য করতে পারি না। তালের রস সংগ্রহ করে আল্লাহর রহমতে পরিবারের সবাইকে নিয়ে ভাল ভাবে জীবন যাপন করছি।

তিনি আরোও বলেন, প্রতিদিন এক একটি গাছ থেকে ১৮ গøাস রস সংগ্রহ করি। প্রতি গøাস রস ১০-১৫ টাকা করে বিক্রি করি। তাতে প্রতি মৌসুমে ৯০-৯৫ হাজার টাকা আয় হয় বলে জানান এই পরিশ্রমী গাছি। এতে তিনি স্বাবলম্বী হতে পেরেছেন।

সামিউর রহমান দৈনিক আজকের বাজারকে বলেন,আমি কুষ্টিয়া থেকে এসেছি তালের রস খেতে। এখানকার তালের রস খুবই সুস্বাদু ও ভেজাল মুক্ত। আমি মাঝে মাঝে এখানে তালের রস খেতে আসি।

স্কুল ছাত্র সোহানুর রহমান বলেন, আমি প্রতিদিন স্কুলে যাওয়া আসার সময় তালের রস খাই। তালের রস খুবই মিষ্টি। গরমের মধ্যে রস খেলে শরীরের মধ্যে ভাল লাগে।

হুমায়ুন কবীর দৈনিক আজকের বাজারকে বলেন, আমি ঝিনাইদহ থেকে আসছি। আমরা কয়েক বন্ধু মিলে এখানে তালের রস খেতে আসছি। সুন্দর ও মনোরম পরিবেশে মিষ্টি তালের রস খেতে খুবই ভাল লাগে।

রফিকুজ্জামান মিয়া ,কুষ্টিয়া প্রতিনিধি