কৃষিতে আমরা অনেকদূর যাব

‘কৃষি ব্যাংকে ব্যবসার চেয়ে আগে দেখা হয় সার্ভিস। কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে, তাই কৃষককে বাঁচাতেই হবে। তার ব্যবসা বাঁচলে দেশ বাঁচবে। একজন ব্যাংকার হিসেবে হয়তো অতোটা সময় আমরা সেদিকে দিই না। কিন্ত সেটা দেয়া দরকার। একটা ইন্ডাস্ট্রি যদি থাকে তাহলে সেখানে হাজার কর্মী কাজ করে। আমাকে তো কেবল লাভ লোকসান দেখলেই চলবে না’ – বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইসমাইল বলেছেন এসব কথা। আজকের বাজার ও আজকের বাজার টেলিভিশন এবিটিভির সঙ্গে তাঁর কথপোকথনের চুম্বক অংশ তাঁরই ভাষায় প্রকাশ করা হলো।

সরকারি ব্যাংক সবসময় লোকসানি ব্যাংক
লাভ লোকসানের কথা আসলেই মনে করতে হবে সেটা ব্যবসা। কিন্ত সরকারি কোনও ব্যাংক কিন্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান না বা ব্যবসা করে না। সরকারি ব্যাংকের ভূমিকা প্রাইভেট ব্যাংকের চেয়ে আলাদা। এসব ব্যাংকই সবাইকে লোন দিয়ে তাদের ব্যাবসা বাণিজ্য বাড়িয়ে, এগিয়ে নিয়ে এসেছে। এন্টারপ্রেনারশিপ বলতে কোন কথাই আমাদের জানা ছিল না। কোথায় টাকা পাওয়া যাবে, কিভাবে পাওয়া যাবে সেটাও জানতো না কেউ। এই ব্যাংকগুলোই তাদের টাকা দিয়ে উন্নত করেছে। এখন সেই সব ব্যবসায়ীদের অনেকেই ব্যবসা শিখে নিজেরাই বিভিন্ন ব্যাংকের মালিক হয়ে গেছেন। তাদের দায়িত্ব আর সরকারি ব্যাংকের লায়ালেবিলিটি কিন্ত এক না। ফলে সরকারের যে দায়িত্ব আছে তাদের সে দায়িত্ব নাই। আর এ জন্য সরকারি ব্যাংক তাদের সেই নর্মসগুলো অনেক ক্ষেত্রে মেনে চলতে পারে না। ফলে তারা লোজার হয়।

কৃষি ব্যাংক কোনোকালেই লাভ লোকসানের কথা চিন্তা করে নি। যদি চিন্তা করতো তাহলে কী হতো? যেমন, আজ আমার কস্ট অব ফান্ড কিন্ত ১০ এর উপরে। আমি লোন দিচ্ছি ৯ এর উপরে। তার মানে আমি আমার কস্ট অব ফান্ডের চাইতে সোয়া ১ বা দেড় ভাগ কমে লসে টাকা লোন দিচ্ছি। শুরুতে লস দেখা গেলেও এর ধারণাটা হচ্ছে, আমি যদি কৃষক বাচাতে না পারি তা হলে আমার কত লস হবে। ২০০ কোটি টাকা লস হবে বা ২০০০ কোটি টাকা লস হবে। আর যদি আমি সেই কৃষককে উঠিয়ে আনতে পারি, তাহলে সেখানে ২০০ না দুই লক্ষ টাকা লাভ হবে। এইখানে ব্যাপারটা ওই ভাবে বলা হয়েছে। আবার বলা হয়, অদক্ষতার কথা, এটা আসলে মোটেও ঠিক না। আমি সেটা মোটেও ঠিক মনে করি না। আমার সময়ে তো আমি সবাইকে দক্ষতার সাথে কাজ করতে দেখেছি। এখানে যেভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু আছে তা খুবই স্বচ্ছ ও পরিষ্কার। আর যাদের নিয়োগ দেয়া হয় তারা অত্যন্ত দক্ষ ও মেধাবী। গত বছর ৭০০ পদের বিপরীতে ২ লক্ষ আবেদন জমা পড়েছে। আমি আন্তরিকতার সাথে খোলাসা করে বলছি, এইসব নিয়োগের ক্ষেত্রে কোন ধরনের হস্তক্ষেপ করা হয় না। এর কোন সুযোগই নেই। আমরা আইবিএ-কে দিয়ে পরীক্ষা নিয়েছি, এখন এই কাজ বাংলাদেশ ব্যাংক করছে একই নিয়মে। মোটামুটি বিসিএস পরীক্ষার সমান্তরাল মানে আমাদের নিয়োগ পরীক্ষা চলছে। ফলে এই ছেলেমেয়েগুলো আমাদের এখানে আসছে, কাজও করছে। তার পরও এই লোকসানতো ইনহেরেন্ট কারণ আমাকে তো ওই সার্ভিস দিতে হচ্ছে। সার্ভিসই যখন দিতে হচ্ছে, তখন তো আমি লাভের দিকে যেতে পারি না।

কৃষি ব্যাংকের আরেকটা ব্যাপার আছে, এর কস্ট অব ফান্ড বেশি হবেই । কারণ আমার তো ৩৫ লক্ষের বেশি ক্লায়েন্ট আছেন যারা আমাদের কাছ থেকে লোন নিয়েছেন। আমাদের ৫০ হাজার টাকার লোন দিতে যে কাগজপত্র দেখতে হয়, পাঁচ -দশ কোটি টাকা লোন দিতে গেলে অন্য কোন ব্যাংকের জন্য এতোটা প্রয়োজন হয় না। তাদের এক ব্যাংকের ২০ কোটি টাকা দিতে তিন দিন কাজ করে দিতে পারে, আমার সেখানে ২০ কোটি টাকা লোন দিতে লাগে দুই’শ লোক। কারণ সব ধরনের কাগজপত্র দেখতে হয়। ধানের জন্য ধানি জমি, আমের জন্য জমি আছে কি না সেটা দেখাতে হবে। এসব দেখতে, সার্ভে করতে সময় লাগে। কিন্ত কমার্সিয়াল ব্যাংকের ক্ষেত্রে তো সেটা লাগছে না। তারা দেখবে প্রতিষ্ঠান আছে কি না। সেটা ভাড়া জায়গায়ও হতে পারে। তাতে কিছু যায় আসে না। তারা শুধু দেখবে সঠিক লাভ আসছে কি না। এ কারণে আমাদের কস্ট অব ফান্ড বেশি। এটা বেশি হওয়ায় লোকসানটা হয়।

কৃষি ব্যাংক ও রাকাব একই
আমাদের এই কৃষি ব্যাংক এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক একই। রাজশাহী কৃষি ব্যাংক হওয়ার কারণ সেটা এই শাখারই একটা অংশ। আগে এটা একটা বিভাগ ছিল, ৮৭ সালে ভাগ হয়ে তা ডিভিশন হয়ে আরও একটা শাখা হয়েছে। এই দুটো মিলিয়ে আমাদের ১৪-১৫’শ ব্রাঞ্চ আছে। আমার এখানেই আছে ১০৩১ টা ব্রাঞ্চ। আমাদের চেয়ে বেশি শাখা আছে কেবল সোনালী ব্যাংকের। কিন্ত যদি ব্যাংকের ডেনসিটি ধরেন তাহলে আমাদের বেশি। কারণ সোনালী ব্যাংক সারা বাংলাদেশে আছে আর আমি কেবল তিন বিভাগে। ব্যপ্তি ধরলে বলব যে ওদের আছে ১২০০ ব্রাঞ্চ আর আমার আছে ১৪০০। তাদের চাইতে আমরা বেশি, আমাদের লস হচ্ছে কারণ তাদের মতো করে আমরা বাণিজ্যিক হতে পারছি না।

এই যে এবারের বন্যার কথাই বলি, বন্যার কারণে আমরা লোন রি-শিডিউল করে দিলাম। তা না হলে কৃষক টাকা দিতে পারবে না। সুতরাং এখানে ব্যবসার চেয়ে আগে দেখা হয় সার্ভিস। কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে, তাই কৃষককে বাঁচাতেই হবে। তার ব্যবসা বাঁচলে দেশ বাঁচবে। একজন ব্যাংকার হিসেবে হয়তো অতোটা সময় আমরা সেদিকে দিই না। কিন্ত সেটা দেয়া দরকার। একটা ইন্ডাস্ট্রি যদি থাকে তাহলে সেখানে হাজার কর্মী কাজ করে। আমাকে তো কেবল লাভ লোকসান দেখলেই চলবে না। যদি ইন্ডাস্ট্রিটা না চলে তার ফলাফল কী দাঁড়াবে? মানুষগুলো বিপদে পড়ে গেল। এতে করে রাষ্ট্রের উপর চাপ বাড়ল, তারা দরিদ্রসীমার নিচে নেমে গেল। সুতরাং রাষ্ট্রীয় দৃষ্টিভঙ্গি আর বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গি কখনই এক হবে না। ফলে রাষ্ট্রীয় ব্যাংক বা প্রতিষ্ঠান কোনভাবেই ওইভাবে লাভ করতে পারবে না। আমি অদক্ষতার কথা বলব না, এখানে সিস্টেমটাই এমন, সেখানে আসলে কর্মীদের দক্ষতাকে দায়ী করা যাবে না। এখন যদি বাণিজ্যিক ব্যাংকের কর্মীদের দিকে দেখেন তারা বেশিরভাগই কিন্ত আমার এখানের বা অন্য সরকারি ব্যাংকের। তারা তাদের ব্যাংক লাভজনক ভাবে চালাচ্ছে কিন্ত এটাকে পারে না কেন? এর কারণ এখানকার সিস্টেম বা কিছু লিমিটেশন বা বাধা। রাষ্ট্রিয় দায় দায়িত্ব এখানে মূখ্য বিষয়।

ক্ষুদ্র কৃষি উদ্যোক্তাদের জন্য সেবা কতটা
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের একটা নিজস্ব ধারা আছে। দেশের উন্নয়নের গতির সঙ্গে আমরাও তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, ২১ সালে বাংলাদেশ হবে মধ্যম আয়ের দেশ আর ৪১ সালে সেটা হবে উন্নত একটি দেশ। এমন একটা কথা বলাটাই তো বড় সাহসের ব্যাপার। মুখে বললেই তো পরে সেটা মনে আসবে, তখন সবাই তার মতো করে কাজের মাধ্যমে এগিয়ে যাবে। সেই ধারাবাহিকতায় আমরাও এগিয়ে যাচ্ছি। আমার পরিকল্পনা হলো, আমি বেশি করে টাকা বিনিয়োগ করতে চাই। যদি সেটা করা হয় তাহলে সেই সব এলাকায় অর্থনৈতিক কার্যক্রম বেড়ে যাবে। যখনই সেখানে অর্থনৈতিক কার্যক্রম বাড়তে থাকবে তখনই সেখানে পার ক্যাপিটাল ইনকামও বাড়তে থাকবে। কাজের ক্ষেত্র বেড়ে যাবে। ফলে সেখানে দরিদ্রতা কমে আসবে আনুপাতিক হারে। আমি যদি আরো বেশি টাকা দিতে পারি তাহলে সে হার নেমে আসবে ৬ ভাগে। এ হিসাব করে আমরা কৃষি ব্যাংক এ বছর গ্রামে ১০,০০০ কোটি টাকা লোন দিতে চাই। কৃষির সাথে এগ্রো বিজনেস, ফিসারি, হ্যাচারি, ডেইরি, পোল্ট্রি, গরু পালন ইত্যাদি ক্ষেত্রে আমরা এই লোন দিতে চাই। এবার আমরা বেশি করে টার্গেট করেছি গরু পালনের দিকে। প্রতি বছর ঈদের সময় সারা দেশে হই চই পড়ে যায় ইন্ডিয়া থেকে গরু আনার জন্য। আমাদের সে পরিমাণ গরু নেই এখন। তাই একটা প্রকল্প করতে চাই গরু লালন পালনে জোর দিয়ে। গরু মোটাতাজা করার একটা কথা বলা হয়, সে রকম প্রকল্প আমরা নিতে চাই না। কারণ ভ্যাকসিন, ক্যামিক্যাল দিয়ে গরুকে মোটাতাজা করা হয় সেটা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। আমি বলছি গরু লালন পালনের কথা।

এটা একটা লাভজনক ব্যবসা হতে পারে। কেউ খামারের মাধ্যমে সেটা করতে পারে। এটা যে কেবল ঈদের সময় হবে তা নয় এটা একটা ধারাবাহিক ব্যবসা। কেউ যদি একটা গরু ১০০ দিন লালন পালন করে তা হলে সে বিক্রি করলে ভালো লাভ পাবে। এখন কেউ দুই বছরের একটা ছোট গরু ২০-২২ হাজার দিয়ে কিনতে পারেন। এভাবে ৩০০ গরুর একটা খামার করা যায়। যেখানে প্রতি মাসে ১০০ করে গরু সেই খামারে আনা হবে। এভাবে পর্যায়ক্রমে ৩০০ গরু। তার পর ১০০ দিন পালনের পর প্রথম ধাপের ১০০ গরু ১০০ দিন পর বিক্রি করে আবার ১০০ গরু আনা হবে। এভাবে ধারাবাহিক প্রসেসের মাধ্যমে ব্যবসা সম্প্রসারণ করা যায়। এতে করে ভেল্যু এড হবে। সেটা কি ভাবে? যদি সে প্রসেস মেনে গরু না পালে তা হলে মাংস কম পাবে আর যদি সঠিক প্রসেস মেনে ধারাবাহিকভাবে খামার করে তাহলে বেশি মাংসের গরু উৎপাদন সম্ভব। ফলে কৃষক বা খামারি লাভবান হবেন।

কৃষি ব্যাংকের লোনের প্রক্রিয়া
আসলে দেশের উন্নয়নের সঙ্গে আমরাও সামিল হতে চাই। সারা দেশের কৃষকদের সামিল করতে চাই। আর এটা করতে আমরা লোনের জন্য সঠিক মানুষ খুঁজছি। কিন্ত প্রায় সবার ধারণা এরকম যে, সরকারের টাকা নিলে আবার ফেরত দেব কেন? সবাই যে এমন আবার তা কিন্ত না, তার পরও আমাদের বদনাম হয়ে গেছে। ফলে আমাদের ব্যাড লোনটা বেশি হয়ে গেছে। এ থেকে বেরিয়ে আসতে আমরা এখন ননক্লাসিফাইড লোক খুঁজি। গত বছর এমন ব্যাড লোনের সংখ্যা ২৮ পারসেন্টে গিয়ে থামে। এবার সংখ্যা আমরা তা কমিয়ে এনেছি ২৩ পারসেন্টে। আমাদের টার্গেট এটা অর্ধেকে নিয়ে আসা।

আসলে আমি বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে দেখেছি, কথা বলেছি অনেকের সঙ্গে। তারা যে লোন রাখতে চায় তা কিন্ত না। তারা সবাই টাকা ফেরত দিতে চায়। কিন্ত সে যখন দেখে যে অন্যজন দিচ্ছে না তখন সেও নিরুৎসাহি হয়ে যায়। আসলে কৃষি ব্যাংক আপনাকে সহায়তা করতে চায়। না হলে আপনাকে তো দাদন ব্যবসায়ী বা মহাজনের কাছে হাত পাততে হবে, বা হচ্ছে। সে মহাজনের কাছে তো আর যেতে হচ্ছে না। যে নিচ্ছে সে তো সার্ভিস চার্জ দিচ্ছে মাত্র, এই ব্যাপারটা সবার কাছে পরিষ্কার হচ্ছে এখন। তাই লোনের টাকা ফেরত দেয়া উচিত। এ ব্যাপারে সচেতনতা বাড়ছে। এবং সবাই ব্যাংকে আসছে। কিন্ত আমি তো সিকিউরিটি ছাড়া টাকা দিতে পারি না।

কী ধরনের সিকিউরিটি দিতে হয়
সরকারের একটা নিয়ম আছে যে, ৫ লাখ পর্যন্ত লোন নিলে কোনও সিকিউরিটি দিতে হয় না। তা না হলে কেউ যত টাকার লোন নিবে তার বিপরীতে তাকে সমপরিমাণ সম্পদের সিকিউরিটি আমাদের কাছে রাখতে হবে। যেহেতু আমাদের সেই রকম কালচার ডেভেলপ করেনি তাই ওই ৫ লাখ টাকা দিতে গেলেও অনেক ব্যাংক সেটা দিতে চায় না। মহাজনের কাছ থেকে টাকা নিলে তাকে তো ২০০ পারসেন্ট সুদ দিতে হয়। সেখানে তো আমি ৯, ১০, ১১ পারসেন্ট নিচ্ছি । পরিমাণটা হিসাব করলেই তো বোঝা যায়।

একটা উদাহরণ দিই। কয়েকদিন আগে আমি সফিপুরে একটা মোরগের খামার দেখতে গিয়েছিলাম। বেশ বড় আকারের। সে একসময় কাজী ফার্মে কাজ করতো। তাকে আমরা ১০-১১ সালের দিকে ৫ কোটি টাকা লোন দিয়েছি। সে মাত্র ২ বছরের মধ্যে সব টাকা শোধ করে দিয়েছে। আবার সারে ১২ কোটি টাকা লোন দিলাম তারও প্রায় ৮ কোটি টাকা শোধ হয়ে গেছে। আবার আরেকটা দিয়েছি সারে ১২ কোটি । দেখে আসলাম কি সুন্দর খামার। এরকম ব্যাক্তিদের আমরা সহযেই লোন দিতে পারি। কারণ সে তো নিয়ম মেনে সব টাকা শোধ করছে। বিশ^াসযোগ্য সে। সে যদি আবার লোন চায় তাহলে আমি আবার লোন দেব কারণ সে তার খামার বড় করেছে। সে অনেক জমি কিনেছে। সে তার টাকা বড় দালান কোটা না বানিয়ে খামারের উন্নয়নে বিনিয়োগ করেছে। তো তাকে আপনি লোন না দিয়ে কাকে দেবেন বলেন। আমরা একজন উদ্যোক্তার বুদ্ধি, সিনসিয়ারিটি, কর্মস্পৃহা, সততার দিকে মূল্যায়ন করি। কারণ তার কাজ কর্মের ধরণের মাধ্যমেই বুঝা যায় যে সে এই টাকাটা দাবী করে।

আবার অনেকে এমন না। এসেই বলবে যে আমি একটা খামার করতে চাই কত টাকা লোন দেবেন। ব্যাপারটা এম না। প্রথমেই একটা প্রজেক্ট প্রফাইল তো লাগবে। কত টাকা লাগবে সেটা তো উদ্যোক্তাকে বলতে হবে, আমি কেমনে বলবো। এ ব্যাপারে আমি তাদের বলি প্রথমে আপনি কি ব্যাবসা করবেন সেটা ঠিক করেন। তারপর দু’জনের বাড়ি যান যারা একই ধরনের ব্যবসায় লস করেছে, আবার দুজনের বাড়িতে যান যারা লাভে আছে। এরকম করে পুরো ব্যাপারটা নিয়ে গবেষণা করে আপনি কিভাবে এগোবেন সেটা শিখে আসেন। তখন আমি নিজে আপনার বাড়িতে যাব, আপনাকে লোন দিব। কিন্ত সত্যি কথা কী আমি এমন লোক পাচ্ছি না এখন পর্যন্ত। আবার অনেকে দালাল ধরে আসে। সে নাকি কৃষি ব্যাংক থেকে ৫০ কোটি লোন নিয়ে দেবে। তার সাথে কন্ট্রাক্ট থাকে সে টাকা পাইয়ে দিলে ২ কোটি পাবে। আসলে তার উদ্দেশ্যই হলো টাকাটা নিয়ে আর না দেয়া। না হলে সে শুরুতেই তো ২ কোটি লস করে নিল। সমস্যা হলো, সে এ কাজ করার জন্য নিজেই নিজের ক্ষতির কারণ হলো। আর আমি যে টাকাটা দিতে পারতাম সেখান থেকে তারা বঞ্চিত হলো। এটা হলো তার নির্বুদ্ধিতা। কারণ ব্যাংকের টাকা কেউ মেরে খেতে পারে না। যেদিন থেকে লোন নেবে সেদিন থেকে তার ঘুম হারাম। সে আর ঠিক থাকতে পারবে না। তার মাথা, নার্ভ আর কাজ করবে না। কারণ তার পর থেকেই তো লোনের টাকাটা বাড়তে থাকবে। হয় তাকে সেটা শোধ করতে হবে। নয়তো তাকে পাগল হতে হবে। সুতরাং তাকে অবশ্যই সিনসিয়ার মানুষ হতে হবে। আমাদের সমস্যা হবে না খুব কারণ তার কাছ থেকে তো সে অনুপাতে সিকিউরিটি নেয়া আছে। হয়তো আমাদের ঘুরাতে পারবে অনেকদিন কিন্ত টাকা তাকে পরিশোধ করতেই হবে। তার মানে এ ক্ষেত্রে দু’পক্ষকেই সচেতন হতে হবে। তাহলে সব কিছু ঠিক থাকবে। তবে এখন অবস্থার অনেকটাই পরিবর্তন হচ্ছে।

 

এগ্রোবেইজড ইন্ডাস্ট্রি স্থাপনে সুবিধা
আছে তো, আপনি যদি দুধের গরুর একটি খামার করে কোনো ইন্ডাস্ট্রি করতে চান তাহলে তাদের জন্য আমাদের সহযোগিতার হাত বাড়ানো আছে। দেখুন সম্প্রতি একটা ছেলে আসে আমার কাছে। সে একেবারেই যুবক, পিএইচডি করে এসেছে ইংল্যান্ড থেকে। সে এমন একটা উদ্যোগ নিতে চায়। আমি খুবই খুশি হয়েছি। সে এখানে উৎপাদন করে ইংল্যান্ডে রপ্তানি করতে পারবে। আমি তাকে লোন দিব। তার পরিকল্পনা ও ব্যপস্থাপনা ভালো, উচ্চ শিক্ষিত, ব্যাবসার জন্য সে সারা পৃথিবী ঘুরে বেড়াতে পারবে। এবং দেখার জন্য তার আছে বড় চোখ, তার ভিশনটা অনেক বড়। আমি তো তাকেই টাকাটা দিতে চাই। সে তার বাবাকে নিয়ে এসেছিল, তার বাবা অনেক বড় একজন মানুষ। আমি তাকে বলেছি যে, আমি তোমার বাবাকে না, তোমাকে দেখে লোন দিব। এই ধরনের লোকরা যদি আসে তাহলে সবকিছুই ঠিকভাবে চলবে। এই যে জেনারেল আমজাদ হোসেন, প্রাণ কোম্পনি করে গেছেন তিনি আমার এখান থেকে মাত্র ৫ কোটি টাকা নিয়ে শুরু করেন। এখন তাদের হাজার হাজার কোটি টাকা। কেন এমন হলো? তাদের কোনোরকম ক্লাসিফাইড লোন নাই সব নন ক্লাসিফাইড। আমরা কিন্ত এমন ব্যবসায়ীই চাই। আমরা এমন ব্যবসায়ীদেরই টাকা দিতে আগ্রহী, তারা আসুক আমাদের কাছে। আমরা টাকা দিব। যুবউন্নয়ন থেকে ট্রেনিং শেষ করে তারা আমাদের কাছে আসে না। তারা বসে থাকে বা বিদেশে চলে যেতে চায়। বাইরে যাবার দরকার কী। আমাদের কাছে আসুক না তারা। আমরাই সহযোগিতা করব। কিন্ত তারা সেটা করতে চায় না, তারা নগদে পেতে চায়। এটা কি করে হয় বলেন?

আমরা জানি, গরুর মাংসের বাজার বিশ^জুড়ে এবং এর এই মাংসের দামও অনেক বেশি। আমাদের যুব সমাজের কিন্ত বাজারে নিজেদের প্রমাণ করার সেই সুযোগ রয়েছে । আজ আমাদের গার্মেন্টস শিল্প কোথায় গিয়েছে। এক সময় কি এমন অবস্থা ছিল ? ছিল না। এই গার্মেন্টস শিল্প দিয়ে এখন সারা বিশ^ আমাদের চেনে। তাহলে আমি গরুর মাংস দিয়েও সেটা পারব। এই যে শিপ বিল্ডিং, এই কাজেও আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। বেলজিয়াম আমাদের কাছ থেকে তো আর না দেখে জাহাজ নিচ্ছে না। তাই না? তাহলে অন্য সেক্টরে আমরা কেন পারব না? যদি আমাদের যুবারা সেভাবে সক্রিয় হয়, আমরা টিক থাকি, দরজা বন্ধ করে আমরা যদি কেবল ব্যুরোক্রেট না হই তাহলে সম্ভব। সেভাবে আমাকেও যেতে হবে। তাদেরও আসতে হবে। এভাবেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।

সরকার কী উদ্যোগ নিবে
এসএমই, কৃষি ইন্ডাস্ট্রির সম্ভাবনা এখন ব্যাপক। ভারত, থাইল্যান্ড বা চায়না তারা খাদ্য, ফল দিয়ে বিশ^ বাজার দখল করছে। আমাদের প্রাণ কোম্পানি ১২৭ টি দেশে তাদের পণ্য পাঠাচ্ছে। সেই সব পণ্যের সেখানে নিশ্চয়ই চাহিদা আছে। এসব বড় বড় প্রতিষ্ঠান ছাড়াও অনেক ছোট প্রতিষ্ঠান আছে যা আমরা সহজেই করতে পারি। এখানে প্রচুর অভিজ্ঞতা লাগবে। একসঙ্গে সব কিছু চাইলে তো হবে না। আস্তে আস্তে সময়ের সঙ্গে বড় হওয়া উচিত। তাই না। আমাদের এখানে বড় বড় এগ্রো বেইজড ইন্ডাস্ট্রি আছে যেখানে প্রচুর সুযোগ আছে। দেখেন ৭০ সালে ধান, গম, ভূট্টা দিয়ে ৯০টন সিরিয়াল তৈরি হতো। ২০১৭ সাল, মানে ৪৭ বছরের ব্যাবধানে সেটা বেড়ে প্রায় ৩ কোটি আশি লক্ষ টনে দাঁড়িয়েছে। তার মানে, চার দশকে সেটা বেড়েছে অনেকগুণ। কোন এক সময় সাড়ে সাত কোটি লোক না খেয়ে কাটিয়েছে, আমি নিজে দেখেছি। ৭২ সালের কথা। সে সময় আমি কলেজে শিক্ষকতা করি। তখন জামা কাপড়ের প্রচন্ড অভাব ছিল। মনে আছে, আমার একটাই শার্ট ছিল। ধুয়ে দিলে শুকানোর আগ পর্যন্ত খালি গায়ে থাকতে হতো। জামাকাপড়ের অভাব ছিল, খাবারের অভাব ছিল । আজ একটা বড় ফলের দোকানে যতটা ফল পাওয়া যাবে, ১৯৬৬ সালে আমি যখন প্রথম ঢাকা আসি, তখন সারা ঢাকা শহরেও মনে হয় এতো ফল ছিল না। ডাইভার্সিফিকেশনের মাধ্যমে আজ আমরা কোথায় চলে এসেছি! এখন কেনো কিছুরই অভাব নেই। ঠিক একইভাবে আমাদের কৃষিতেও ডাইভারসিফিকেশন প্রয়োজন। এটা হচ্ছেও। কৃষিতে আমরা অনেক ভালো করছি। এতে আমাদেরও অবদান কম না। আমরা অর্থ দিয়েছি, বিএডিসি বীজ দিয়েছে, এগ্রিকালচার এক্সটেনশন মানুষকে বুঝিয়েছে কিভাবে কৃষি কাজ করতে হয়, বারি রিসার্চ করে ধানের উন্নত জাত আবিষ্কার করছে, বিনা নিউক্লিয়ার কৃষিতে রিসার্চ করছে। সবার সমন্বিত প্রয়াসে আমরা কৃষিতে এগিয়ে যাচ্ছি। কিভাবে সম্ভব সেটা, সেখানে তো আমাদেরই লোক কাজ করছে। তারা প্রতিনিয়ত চমৎকার কাজ করে যাচ্ছে। এ জন্যই এমন একটা মেসিভ পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে। সাড়ে সাত কোটি লোক যেখানে খাবার খেতে পারত না, সেখানে আজ ষোল কোটির কাছাকাছি খেতে পারছি, আমরা রপ্তানিও করছি। বিদেশে দৌড়াদৌড়ি না করে দেশেই সম্ভাবনা খুঁজে বের করা দরকার। ডাইভারসিফিকেশনের মাধ্যমে আরো এগিয়ে যাওয়া সম্ভব।

সরকারের এখানে কী করার আছে
সরকারের মূল কাজ হলো উদ্যোক্তাকে সাপোর্ট দেয়া। আজ যারা এক্সপোর্ট করছে ইপিবি তাদের তৈরি করেছে বলা যায়। সব রকমের লজিস্টিক সাপোর্ট দিয়ে তারা আজ সবাইকে এগিয়ে নিয়ে এসেছে। তাই বলছি, সরকারের কাজ হলো রাস্তা তৈরি করা বা পথ দেখানো। বর্তমানে সেটা অনেকখানি হয়ে গেছে। এখন দরকার বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর এগিয়ে আসা। তখন সমানতালে সবকিছু এগিয়ে চলবে, দেশ উন্নত হবে, সবাই ভালো থাকবে। সরকার শুধু স্টেয়ারিংটা ধরবে। যদি নতুন কোনো সেক্টর আসে, সেখানে সাবসিডি দরকার হলে, সরকার সেটা করবে। ওই সেক্টরকে ওপরে উঠিয়ে দেয়ার দায়িত্ব তখন সরকারের। অনেক বড় বড় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পর্যায়ে, রিটায়ার্ড সরকারি দায়ীত্বশীলরা এখন উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন। তারাই বেসরকারি খাতের সব সমস্যা, সরকারের প্রতিনিধিদের কাছে তুলে ধরতে পারেন। সরকার তখন প্রয়োজন অনুসারে সমস্যার সমাধান করবে। তখন সরকারি বেসরকারি পর্যায় এক সঙ্গে কাজ করবে। এগিয়ে যাবে। আমি মনে করি, বাংলাদেশই একদিন, এই সাউথ এশিয়ার মধ্যে, একমাত্র উন্নত দেশ হবে। এখন যারা উন্নত বলে দাবি করছে,তারা আমাদের সঙ্গে টিকতে পারবে না।

যুব সমাজের অনেকেই বিপথে আছে, তাদের জন্য
আসলে যুব সমাজ হলো আমাদের শক্তি। তারা বিভিন্নভাবে এখন বিভ্রান্ত। আমি কয়েকদিন আগে এক জায়গায় বলেছি যে, তারা লাখ লাখ টাকা নিয়ে চাকরির পেছনে ঘুরেছে; কিন্ত কই তারা তো চাকরি পায় নি? পাচ্ছে না, উল্টো হয়রানির শিকার হচ্ছে। এক ধরনের দালাল আছে যারা এদের প্রলোভন দেয়। তারা বলে, এখন তো সবকিছু দুই নাম্বারে চলে সুতরাং ওই পথে না গেলে কিছু হবে না। আর চাকরি পাইয়ে দেবে বলে, প্রার্থীর কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা নেয় । টাকা নিয়ে সেখান থেকে দালাল কিছু রেখে দেয়। তার পর প্রভাবশালী কারো কাছে গিয়ে, টাকার বিনিময়ে চাকরির আব্দার করে। যদি চাকরি কোনোভাবে হয়ে যায়, তাহলে তো হয়েই গেল, না হলে তখন দালাল ভালো লোক সাজে এবং টাকাটা ফেরত দিয়ে দেয়।

অন্যদিকে মেধাবিরা যে চাকরি পাচ্ছে, তার একটা উদাহরণ আমি দিই । কৃষি ব্যাংকে ৫২৪ জনকে এই জুলাই মাসে নিয়োগ দিলাম। এর মধ্যে ১৪০ জনই আসে নি। তার মানে কী, এর চাইতেও আরো ভালো চাকরি সে পেয়েছে। সুতরাং চাকরির জন্য বিভ্রান্ত হবার কোন কারণ নেই। আরে, চাকরি তো একটা দুইটা না, হাজারো চাকরির সম্ভাবনা আছে আমাদের। সেখানে যোগাযোগ করতে হবে। না হলে উপরে ওঠার জন্য অনেক পথ রয়েছে তাকে সেদিকে এগুতে হবে। চাকরি করতে হবে কেন? উদ্যোক্তা হও, ব্যবসা করো। বুদ্ধি থাকতে হবে। পরিকল্পনা থাকতে হবে। তারপর সঠিক পথে এগিয়ে যেতে হবে। এভাবে এগুচ্ছে অনেকেই। আর এর ধারাবাহিকতা থাকলে আমরা সবার উপরে থাকবই।

আপনার এগিয়ে আসার গল্পটা জানতে চাই
একেবারে যে প্ল্যান করে আজ এই পর্যায়ে এসেছি সেটা বলবো না। আমার বাড়ি বরিশাল বিভাগের ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর থানার জালুয়া গ্রামে। একটা অজপাড়া গাঁ ছিল সেটা, স্কুলে যেতে গেলেও সেখানে নৌকা দিয়ে যেতে হতো, না হলে হেঁটে অনেক পথ ঘুরে পানিতে ভিজে তারপর স্কুলে যেতে হতো। সেখান থেকে আমি উঠে এসেছি। আমি ভালো ছাত্র থাকার ফলে শিক্ষকরাও আমায় বিভিন্ন সময় সহযোগিতা করেছেন। এস এস সি দিয়েছি ৬৪ সালে, তার পর বিএম কলেজে আসলাম, ৬৬ সালে এইচ এস সি। সেখান থেকে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে। সেখানে ফিজিক্স কেমিস্ট্রির ছাত্রদের বলা হতো মেধাবী। আর ভর্তির জন্য প্রতিযোগিতাও হতো এ বিষয়গুলো নিয়ে। সুতরাং হিসেব করে দেখলাম যে আমি ফিজিক্সে পড়ব এবং চেস্টা করে আমি ফিজিক্সেই চান্স পেলাম। সেখান থেকেই অনার্স মাস্টার্স পাশ করে এক বন্ধুর আগ্রহে বিসিএস পরীক্ষা দিলাম। ওই সময় চাকরি করার কোন ইচ্ছে আমার ছিল না। এদিকে বিসিএস পাশ করে ৭৭ ব্যাচে আমি চাকরিতে ঢুকি। আসলে বাড়ির সবার চাপাচাপিতে আমার চাকরিতে আসা। না হলে অন্য কোন কিছুতে হয়তো চলে যেতাম। এর আগে কিছুদিন কলেজে অধ্যাপনা করেছি। বিসিএসএর আলাদা একটা অভিজ্ঞতা অর্জন হয়েছে আমার। এর একটা ভালো দিক আছে। বিভিন্ন স্থানে কাজের মাধ্যমে আলাদা কিছু অভিজ্ঞতা পাওয়া যায়। যার মাধ্যমে আজ আমি এই ব্যাংকের দায়িত্বে আছি। আমি ইউএনও ছিলাম, ম্যাজিস্ট্রেট ছিলাম, আমি ডিসি ছিলাম, জাতিসংঘে কাজ করেছি। সেখানে দেশ আমায় পাঠায়নি; আমি সারা বিশে^র প্রার্থীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে তারপর সেখানে নিয়োগ পেয়েছি। আবার দেশের সচিবালয়ে কাজ করেছি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, সংস্থাপন মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে কাজ করেছি। একসময় বিএডিসির চিফ হিসেবে কাজ করেছি। মাঠে মাঠে কাজ করেছি। সব কিছু মিলিয়ে, অনেক অভিজ্ঞতা নিয়ে, ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে এই কৃষি ব্যাংকের দায়িত্বে এসেছি। আমি মনে করি, প্রত্যেকটা চেয়ারের দেশকে সার্ভিস দেয়ার সুযোগ থাকে। যদি চেয়ার চলে যায় তাইলে আর সেবা করার সুযোগ থাকবে না। আমি সেবা দিতে এসেছি।

সারা দেশে কৃষি ব্যাংকের যতটা শাখা আছে, তার একটি ব্রাঞ্চের ম্যানেজারও নাই যারা আমাকে চেনে না। আমি আসার পরে প্রতিটা রিজিওনে গিয়েছি, সবার সাঙ্গে মিটিং করেছি, প্রতিটা ব্রাঞ্চের সবার প্রায় সবার সঙ্গে আমার যোগাযোগ আছে। সদ্য যারা নিয়োগ প্রাপ্ত হয়তো তারা ছাড়া বাকি অন্য সবাই আমাকে চেনে, জানে।

চাকরি জীবনে, রাজনৈতিক জীবনে এখন আমি যে কোন জায়গায় যেতে পারি। চাকরি তো দেখাই যাচ্ছে। গেলবারই আমি রাজনীতিতে আসতে চেয়েছি, নির্বাচনের নমিনেশন চেয়েছিলাম কিন্ত বিভিন্ন কারণে আমি সেটা পাই নি। এবার আমার সে সম্ভাবনাটা আছে। কারণ যার জনপ্রতিনিধি হবার সুয়োগ আছে তাকেই তো নমিনেশন দেয়া হবে। এবার সে সুযোগ আমার আছে।

রাজনীতিতে আসতে চাচ্ছেন কেন?
অনেকেই আমাকে বলেন যে, আপনি একজন ভালো মানুষ, আপনি কেন পলিটিকসের মতো এমন নোংরা জায়গায় যাবেন? আমি বলি, যদি ডেমোক্রেটিক সরকার ব্যবস্থা পরিচালিত হয়, তাহলে বুঝা যাবে সেখানে ধারাবাহিকভাবে একজন জন প্রতিনিধির রোল রয়েছে। সেখানে যদি আপনি ভালো লোক না দেন বা না যায় তাহলে চলবে কী করে? এর মাঝে যদি বলেন সেখানে না যাবার জন্য তার মানে কি বুঝাতে চান। আসলে সঠিক ধারণার জায়গাটা আমাদের কাছে এখনও বদ্ধ হয়ে আছে। সেটাকে উৎরাতে হবে, না হলে সঠিক উন্নয়ন বাধা পাবে। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে যে দেশ পরিচার্লিত হবে সেখানকার রাজনীতিতে অবশ্যই ভালো লোক থাকতে হবে, ভালো লোক যেতে হবে। না হলে আধুনিকতা ও পরিবর্তন আসবে কিভাবে? সুতরাং আমি চাই সেবার মাধ্যমে আমার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে।

আল্লাহ কিন্ত এখনও আমায় ভালো রেখেছেন, দেখেন আমি অবসরে যাই নি। তার আগেই আমি এডিশনাল সেক্রেটারী থাকা অবস্থায় চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। কারণ সচিব থাকা অবস্থায় পলিটিক্যালি অনেকের স্বার্থ সিদ্ধিতে অবৈধভাবে সহযোগিতা করিনি। এর জন্য দেখা গেল যে আমার নিচের পদের লোকের প্রমোশন হয়, আমারটা আটকে থাকে। তাই এমন নোংরা পলিটিক্সের ভিক্টিম হতে চাই নি। ২০০৬ এ তখন সব পাওনা বুঝে নিয়ে চাকরিতে ইস্তফা দিলাম। আমি রাজনীতি পছন্দ করি, কারণ সেবা দেয়ার সব ধরনের সুযোগ এখানে আছে। কাজ করার ক্ষেত্রে আমার যে অভিজ্ঞতা আছে অন্যের কাছে তো সেটা নাই। সুতরাং জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমি যে কাজ করতে পারব, সেটা অন্যরা পারবে না। এর জন্য আসলে আমি চেষ্টা করছি। আমাকে যে একটা পদে যেতে হবে তা তো না। যেহেতু আমি একজন ব্যুরোক্র্যাট আমার কথা সবাই শোনে। কেউ কোন বিপদে পড়লে আমার কাছে আসে। আমি সুপারিশ করে দিই তার সমস্যার সমাধান হয়ে যায়, একজন উপকৃত হয় এতেই আমি সন্তুষ্ট। এটা তো আমার জন্য একটা ইতিবাচক দিক।

যাই হোক, কৃষি নিয়ে আমার যে বক্তব্য, এটা যদি কারো উপকারে আসে, তাহলে মনে করব, আমার সামান্যতম একটু অবদান থাকল তার উন্নয়নে।

মোহাম্মদ ইসমাইল
চেয়ারম্যান,বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক