কেন আপনি শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করবেন?

ব্যাংকে টাকা রাখলেই ক্ষয়

ব্যাংকের সাধারণ সঞ্চয়ী হিসাবে টাকা জমা রাখলে এখন লাভ নয়, লোকসান গুনতে হচ্ছে আমানতকারীদের। ব্যাংকের সার্ভিস চার্জ, সরকারের বিভিন্ন কর, মূল্যস্ফীতিজনিত ক্ষয় বাদ দিলে বছর শেষে সঞ্চয়কারীদের মূল টাকাই থাকে না। উল্টো মূল টাকা থেকে বিভিন্ন চার্জ ও কর কেটে রাখে ব্যাংক। আমানতের সুদহার কমানোর ফলে ব্যাংকগুলোতে এখন সাধারণ সঞ্চয়ী হিসাবের সুদহার ৩ থেকে ৫ শতাংশ। ১ লাখ টাকা ব্যাংকে জমা রাখলে বছর শেষে কোনো লাভ পাওয়ার সম্ভাবনা নাই।

এফডিআরের মুনাফায় সংসার চলত যাদের, তারা হতাশ

ব্যাংকে স্থায়ী আমানত বা এফডিআর রেখে কিছুটা হলেও সংসারের ব্যয় নির্বাহের সুযোগ ছিল। কিন্তু বর্তমানে এফডিআরের সুদের হার বেশি মাত্রায় কমিয়ে দেওয়ায় এখন এতে আয় খুব বেশি হচ্ছে না। এ ছাড়া অনেক ব্যাংক এফডিআর হিসাবে সঞ্চয় নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে এই খাত থেকে বিশেষ করে অবসরভোগী ও অন্য কাজে অক্ষম ব্যক্তিদের বাড়তি আয়ের সুযোগ আর নেই।

ক্ষুদ্র সঞ্চয়ে নানা বাধা

স্বল্প ও মধ্যম আয়ের মানুষের সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য আকর্ষণীয় কিছু প্রকল্প চালু করে ব্যাংকগুলো। প্রতি মাসে ১০০ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত জমা রাখার সুযোগ দেওয়া হয়। নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে সুদসহ বেশ বড় অঙ্কের টাকা হাতে পাওয়ার এই প্রকল্পগুলো ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। কিন্তু ব্যাংকের অলস অর্থের ছড়াছড়ি থাকায় সেই ক্ষুদ্র সঞ্চয়কারীদের নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। এমনিতেই সুদহার প্রায় অর্ধেক কমিয়ে আনা হয়েছে, তার পরও সঞ্চয়কারীদের নানা শর্ত পূরণের বাধ্যবাধকতা আরোপ করে সঞ্চয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। এ ছাড়া বিকল্প হিসাব খোলা, করের ভয় দেখানো, অল্প টাকা নেওয়া ঝামেলা ইত্যাদি কথা বলছেন ব্যাংকাররা।

অর্থনীতিবিদ ড. জাহেদ বখত বলেন, মাসিক সঞ্চয় প্রকল্পগুলোর বিপরীতে সুদহার গড়ে ৮ শতাংশের মতো। এতে সঞ্চয়কারীদের অসুবিধা হতে পারে। ঋণের চাহিদা নেই। ভালো গ্রাহকেরা ৯ শতাংশ সুদে ঋণ চাচ্ছেন। আমরা দিচ্ছিও। এ জন্য ২-৩ শতাংশ স্প্রেড না থাকলেও ব্যাংকও চালানো যাবে না। ঋণের চাহিদা না বাড়লে সঞ্চয়ের অর্থ ব্যাংকের জন্য বোঝা হয়ে যাচ্ছে। ব্যাংকে হাজার হাজার কোটি টাকা অলস পড়ে আছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ীদের হাতে কালো টাকার ছড়াছড়ি। আপনার আয়ের কিছু অংশ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে লাভবান হোন। পক্ষান্তরে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখুন।

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ এখনো ব্যাংকের চেয়ে ভালো

আপনি যদি ভালো মৌল ভিত্তির কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেন, তবে বছর শেষে ব্যাংকের চেয়ে বেশি লভ্যাংশ পাবেন। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে আপনি লাভবান হোন এবং দেশীয় শিল্পকে এগিয়ে নিতে সহযোগিতা করুন। আপনার বিনিয়োগের ফলে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে, বেকারত্ব দূর হবে, চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য বাংলাদেশ গড়তে এগিয়ে আসুন।

‘টাইকুন’ জাপানি শব্দ। ‘টাই’ অর্থ ‘মহান’ এবং ‘কুন’ অর্থ ‘সমরনায়ক’। টাইকুন এমন এক ব্যক্তি, যিনি উচ্চাকাক্সক্ষা ও সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে নিজেকে এক গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে অধিষ্ঠিত করেছেন। যেকোনো মহান ব্যক্তিত্বের ক্ষেত্রে এ কথা যেমন প্রযোজ্য, তেমনি ছোট-বড়নির্বিশেষে নিজ নিজ ক্ষেত্রে সফল হওয়ার জন্য প্রত্যেকের মধ্যেই এহেন টাইকুন মানসিকতা থাকা প্রয়োজন। সফল শেয়ার ব্যবসায়ী হতে হলে আপনাকেও টাইকুন মানসিকতা অর্জন করতে হবে। একজন মহান রাজনীতিবিদ, একজন সফল সেনানায়ক কিংবা একজন টাইকুন ব্যবসায়ীর কথা চিন্তা করুন। এঁদের সবার মধ্যেই কিন্তু একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয়:

‘প্রতিটি মহান ব্যক্তিই তাঁদের কাজকে উপভোগ করেন’

একজন বিজ্ঞ ব্রোকারের মন্তব্য, যাঁরা ব্যর্থতার পরেও শেয়ার ব্যবসায় লেগে থাকেন, তাঁরা কোনো না কোনো সময়ে সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যান, সফল ব্যবসায়ী হয়ে ওঠেন। প্রকৃতপক্ষে যত বেশি জ্ঞান অর্জন করা যাবে, সফলতার মাত্রাও সেই পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। এই জানার শেষ নেই। তাই তো বলা হয়, দুনিয়ার বিশাল সমুদ্র থেকে সারা জীবনের একক মানবীয় প্রচেষ্টায় মাত্র দু-এক ফোঁটা জ্ঞানই অর্জন করা সম্ভব।

‘কীভাবে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করবেন, বিনিযোগ করার পূর্বে কিছু তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করতে হয়।’ যেমন শরীরের জ্বর মাপার জন্য ডাক্তাররা থার্মোমিটার ব্যবহার করে তাপ নির্ণয় করেন, কিন্তু আমরা শেয়ারে বিনিয়োগের পূর্বে শেয়ারবাজারের কিছু গুরুত্বপূর্ণ সূচক যেমন P/E Ratio, Earning per Share,Dividend Yeild, Net Asset Value, Cash flow Management আমরা বাজারে শেয়ারের চাহিদা বিবেচনা না করে বিনিয়োগ করার চেষ্টা করি। ওই সমস্ত বিষয় বিবেচনায় নিয়ে শেয়ারে বিনিয়োগ করা বাঞ্ছনীয়। কিন্তু জীবনের সব ক্ষেত্রে নিজ নিজ বিশেষজ্ঞের মতামত গ্রহণ করে আপনার অর্জিত অর্থ বিনিয়োগ করুন।

শেয়ারে বিনিয়োগ ও অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ

ক. মাটি খাঁটি, সোনা আধা আর কাপড় কিনে গাধা।

খ. সাধারণ লোকের ব্যবসায়ী হওয়ার দরকার কী?

গ. বাণিজ্যে লক্ষ্মী, সুদে নয়।

ঘ, ব্যাংক এফডিআর

শেয়ারবাজারের অন্ধকার দিক

 (ক) গুজব

 (খ) ফাঁকি

 (গ) ম্যানিপুলেশন

 (ঘ) আস্থাহীনতা

 (ঙ) ইনসাইডার ট্রেডিং

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীর ভ্রান্ত ধারণা

  •  আমি শেয়ার বেচলে দাম বাড়ে।
  •  আমি শেয়ার কিনলে দাম কমে।
  • কোন শেয়ারের দর কখন, কী পরিমাণে বৃদ্ধি পাবে, সে বিষয়ে কেউ কিছু বলতে পারে না।

এমন সব ধারণা সর্বশেষ এবং একমাত্র সঠিক ধারণা মনে না করে বিষয়সমূহ আরও গভীরভাবে বিশ্লেষণ করে টাইকুন মানসিকতা নিয়ে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করুন।

বর্তমান বিশ্বে কয়েক প্রকারের ট্রেডার আছে

১. নবিশ ট্রেডার

২. সাকসেসফুল ট্রেডার

৩. ডিসিপ্লিন ট্রেডার

৪. অ্যাডভেঞ্চারস ট্রেডার

৫. টেকনিক্যাল ট্রেডার

৬. অ্যালকোহলিক ট্রেডার

৭. ২৪ ঘণ্টার ট্রেডার

৮. মোক ট্রেডার

৯. ইনফ্লুয়েন্স ট্রেডার

১০. সেন্টিমেন্টাল ট্রেডার

আপনি কোন প্রকারের বিনিয়োগকারী বা ট্রেডার, তা পর্যালোচনা করে আপনার টাকা আপনার লাভ সতর্কতার সঙ্গে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে লাভবান হোন।

বিশ্বে ৩ প্রকারের ক্রিকেট খেলা হয়

 – টেস্ট

 – ওয়ানডে ৫০ ওভার

 – টি-২০

ক্রিকেট খেলার মতো শেয়ারবাজার সম্পর্কে কোনো বিশেষজ্ঞ সঠিক কোনো পরামর্শ বা মতামত দেওয়া খুবই কঠিন। আজকের যে শেয়ার জেড গ্র“পের অন্তর্ভুক্ত, লভ্যাংশ ঘোষণার পরদিন সেই শেয়ারটি এ গ্র“পে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। তাই এই কঠিন সমীকরণে ক্রিকেট খেলা যেমন অনিশ্চিত, তেমনি শেয়ারবাজারের লাভ ও ক্ষতি অনিশ্চিত। উদাহরণস্বরূপ

  • যেসব বিনিয়োগকারী বাজার বিশ্লেষণ করে দীর্ঘমেয়াদি চিন্তাভাবনা করে টেস্ট খেলার ন্যায় শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেন, ওই সব বিনিয়োগকারী দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগের ফলে অবশ্যই লাভবান হন।
  • এক দিনের ৫০ ওভারের ক্রিকেট খেলার ন্যায় ডে ট্রেডাররাও শেয়ারবাজারে ট্রেড করে থাকেন। দিন শেষে ক্রিকেটের ন্যায় তাদেরও লাভ-লস হয়। বড় বিনিয়োগকারীর জন্য ইহা কিছু ফলপ্রসূ হলেও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য মোটেও ভালো নয়। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর প্রাথমিক শেয়ারবাজারে আবেদন করে ভাগ্য যাচাই করাই উত্তম।
  •  টি-২০ বর্তমান ডিজিটাল যুগে ক্রিকেটপ্রিয় মানুষের কাছে  অনেক জনপ্রিয়। ঠিক তেমনি কিছু আবেগপ্রবণ বিনিয়োগকারী টি-২০-র ন্যায় শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে থাকেন। টি-২০-এ যেমন বাউন্ডারি বা ওভার বাউন্ডারি হলে দর্শক করতালির মাধ্যমে অভিনন্দন জানায়। সহজে উইকেটের পতন হলেও বিশ্বমানের ক্রিকেটাররা মাথা নত করে মাঠ ছাড়েন। তেমনি শেয়ারবাজারের আবেগপ্রবণ বিনিয়োগকারী দিন শেষে হাস্যোজ্জ্বলভাবে হাউস থেকে বের হন বাউন্ডারি মেরে। নতুবা উইকেটের পতন ঘটিয়ে মাথা নত করে বের হন। ইহা শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারী, স্টেক হোল্ডারদের জন্য মোটেও কাম্য নয়। তাই বিশেষজ্ঞরা সব সময় বলে থাকেন, বুঝেশুনে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে লাভবান হোন।

লেখক: মো. সিদ্দিকুর রহমান

ব্যবস্থাপনা পরিচালক

এসআর ক্যাপিটাল লি.

আনন্দ টাওয়ার, ৪র্থ তলা, জেল রোড

সিলেট।