কোভিড-১৯: চলচ্চিত্র ও বিনোদন জগতে স্থবিরতার হানা

বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ এর হানায় বিশ্বব্যাপী অন্যান্য খাতের মতো চলচ্চিত্র ও বিনোদন জগতেও নেমে এসেছে স্থবিরতা। চলচ্চিত্রের সবেচেয়ে বিখ্যাত আন্তর্জাতিক বার্ষিক আসর কান উৎসব স্থগিত করা হয়েছে। বাংলাদেশের বিনোদন ও সিনেমা শিল্পও এ মহামারির হাত থেকে রক্ষা পায়নি। ভাইরাস আতঙ্কে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের (এফডিসি) সব কার্যক্রম থেমে আছে। যদিও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি শনিবার এফডিসি থেকে একটি র‌্যালি বের করে। এতে সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর, সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান, অভিনেতা ডিপজল ও ইলিয়াস কাঞ্চনসহ অনেকে অংশ নেন। তারা মাস্ক বিতরণ করেন এবং ভক্তদের করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে বরং সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান। সম্প্রতি দেশে করোনাভাইরাস স্থানীয়ভাবে ছড়ানো শুরু করলে এবং মৃত্যুর ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার অনেক প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। ভাইরাসটির আরও ছড়িয়ে পড়া রোধে বর্তমানে দেশের সিনেমা হলগুলো ১৮ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে এবং এ অবস্থা ২ এপ্রিল পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক-পরিবেশক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু জানিয়েছেন। তিনি ইউএনবিকে বলেন, ‘যেহেতু ভাইরাসটি কাছাকাছি থাকা একজনের কাছ থেকে আরেকজনের মাঝে ছড়ায়, তাই সিনেমা হলের মতো জনাকীর্ণ স্থানগুলোতে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার অধিক ঝুঁকি রয়েছে। এ জন্য আমরা ১৮ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল পর্যন্ত সিনেপ্লেক্সসহ কোনো হলে শো না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’যদি এ সংকট বজায় থাকে তাহলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সিদ্ধান্তটি বহাল থাকতে পারে বলে জানান তিনি। তবে, দেশের শীর্ষ সিনেমা মাল্টিপ্লেক্স যমুনা ফিউচার পার্কের ব্লকবাস্টার সিনেমাস এবং স্টার সিনেপ্লেক্সের সব শাখার (বসুন্ধরা সিটি, সীমান্ত সম্ভার ও এসকেএস টাওয়ার) কার্যক্রম সমিতির সিদ্ধান্তের দুই দিন পর ২০ মার্চ থেকে স্থগিত করা হয়। দেশের সিনেমা হলগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগে একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ ছবি শাকিব খানের ‘শাহেনশাহ’ মুক্তি পায় ৬ মার্চ। এটি শতাধিক হলে প্রদর্শিত হচ্ছিল।

এখন চলচ্চিত্রপ্রেমী ও হল মালিকরা ঈদুল ফিতর উপলক্ষে যে কয়েকটি সিনেমার মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছেন তার মধ্যে আছে শাকিবের ‘বিদ্রোহী’ ও ‘নবাব এলএলবি’, আরেফিন শুভর অ্যাকশন প্যাক ‘মিশন এক্সট্রিম’, সিয়াম আহমেদের ‘শান’, আনন্ত জলিলের বাংলাদেশ-ইরান যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ‘দিন- দ্য ডে’ এবং টলিউড স্টার দেব’র বাংলাদেশি স্পাই থ্রিলার ‘কমান্ডো’। সেই সাথে তাদের আশা, পরিস্থিতি ইতোমধ্যে স্বাভাবিক হয়ে আসলে করোনাভাইরাসের কারণে এখন যে ক্ষতি হচ্ছে তা ঈদে পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হবে। দেশি-বিদেশে অবস্থান করা অভিনেতা ও অভিনেত্রীরা ইতোমধ্যে করোনাভাইরাস বিষয়ে তাদের ভক্তদের সচেতন করতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন। তাদের অনেকে নিজেদের কোয়ারেন্টাইনে রাখার তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিয়েছেন আবার কেউ কেউ সুরক্ষামূলক ব্যবস্থাগুলোর প্রচারণা চালাচ্ছেন। ঢালিউড স্টার শাকিব খান, সিয়াম আহমেদ, আরেফিন শুভ ও রিয়াজ আহমেদ এবং বলিউডের মেগাস্টার সালমান খান, শাহরুখ খান ও হৃতিক রোশনসহ আরও অনেকে ভক্তদের কোভিড-১৯ বিষয়ে সতর্ক ও নিরাপদ থাকতে ভিডিও বার্তা বা স্ট্যাস্টাস দিয়েছেন।

এদিকে, বর্তমান স্থবিরতার কারণে আর্থিক সমস্যায় পতিত প্রোডাকশন কর্মীদের সহায়তার জন্য বাংলাদেশ ও ভারতের কয়েকটি প্রোডাকশন হাউজ, অভিনয় শিল্পী, পরিচালক ও প্রযোজক অনলাইনে যৌথ তহবিল সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছেন। দেশের নাট্য জগতেও করোনাভাইরাসের হাওয়া লেগেছে। বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন ভাইরাস ছড়ানো রোধে ১৭ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত নাটকের প্রদর্শনী, মহড়া ও অন্যান্য কার্যক্রম স্থগিত করেছে। সেই সাথে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ৩১ মার্চ পর্যন্ত তাদের থিয়েটার ও অডিটরিয়ামের সব কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার অভিনয় শিল্পী সংঘ, ডিরেক্টরস গিল্ড ও টেলিভিশন প্রোগ্রাম প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রতিনিধি এবং অন্যরা তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সাথে সাক্ষাৎ করে পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন এবং ২২ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত টেলিভিশন বিজ্ঞাপন (টিভিসি), নাটক ও ছোট পর্দার অন্যান্য কাজের শ্যুটিং স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেন। কোভিড-১৯ এর কারণে ক্ষতির মাত্রা যাতে সর্বনিম্ন হয় এবং বিশ্ব যেন এ মহামারির হাত থেকে দ্রুতই রেহাই পায়-এটাই এখন দেশ-বিদেশের চলচ্চিত্র ও বিনোদন জগতের সাথে জড়িত প্রত্যেকের চাওয়া। সূত্র-ই্উএনবি

আজকের বাজার/ আখনূর রহমান