কোয়ার্টার ফাইনালে ক্রোয়েশিয়া

ক্রোয়েশিয় গোল রক্ষক ডোমিনিক লিভাকোভিচের বীরোচিত পারফর্মেন্সে টাইব্রেকারে জাপানকে ৩-১ গোলে হারিয়ে কাতার বিশ^কাপের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে গত আসরের রানার্সআপ ক্রোয়েশিয়া। জাপানের তিন খেলোয়াড় তাকুমি মিনামিনো, কাউরু মিতোমা এবং মায়া ইউশিদার শট আটকে দেন লিভাকোভিচ।
আল-ওয়াকরাহ স্টেডিয়ামে আজ অনুষ্ঠিত শেষ ষোলর ম্যাচে নির্ধারিত সময়ে ম্যাচটি ১-১ গোলে ড্র হয়। প্রথমার্ধে জাপানের হয়ে গোল করেন ডেইজেন মিডা এবং দ্বিতীয়ার্ধে ক্রোয়েশিয়ার হয়ে গোলটি পরিশোধ করেন ইভান পেরিসিচ। অতিরিক্ত ৩০ মিনিটেও কোন পক্ষ গোল করতে না পারায় টাইব্রেকারে নিস্পত্তি হয় ম্যাচের ফলাফল।
এর আগে ম্যাচের তৃতীয় মিনিটেই কর্নার পায় জাপান। তবে শোগো তানিগুচির ক্রসের বলটি অল্পের জন্য গোল পোস্টের বাইরে চলে যায়। ৮ম মিনিটে গোলের সুযোগ সৃস্টি করে ক্রোয়েশিয়া। জাপানী রক্ষনভাগে তাকেইরো টোমিইয়াসুর ভুলে ডি বক্সের সামান্য বাইরে বল পেয়ে যান ক্রোয়েশিয়ার ইভান পেরিসিচ। তবে বল নিয়ে ছোট ডি বক্সে ঢুকে তার নেয়া কৌনিক শটের বল দখলে নেন জাপানের গোল রক্ষক শুশি গোন্ডা।
১২তম মিনিটে প্রতিআক্রমনে যায় জাপান। এ সময় ডান প্রান্ত দিয়ে জুনিয়া ইতো বল নিয়ে ক্রোয়েশিয় সীমানায় গিয়ে নিচু ক্রস করলেও চলন্ত বলে পা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হন ইউতো নাগাতোমো। এই পর্যায়ে বিপজ্জনক হয়ে উঠেন জাপানের ইতো। এ সময় ডান প্রান্ত দিয়ে বেশ কয়েকটি আক্রমন পরিচালনা করেন তিনি। যদিও শেষ পর্যন্ত সতীর্থদের ব্যর্থতায় সফল হননি।
২৩ মিনিটে বিপজ্জনক অবস্থান থেকে লুকা মড্রিচের নেয়া ফ্রি কিকের বল জাপানি পোস্টের সামনে জোসকো গাভারডিওলের সামনে পড়লে তিনি দ্রুত বলটি জালে জড়াতে গিয়ে বারের উপর দিয়ে বাইরে মেরে দেন।
৪১ মিনিটে একটি পরিকল্পিত আক্রমন থেকে জাপানের মিডফিল্ডার ডাইচি কামাডা দারুন একটি সুযোগ সৃস্টি করেন। উজ্জীবিত হয়ে খেলতে থাকা এই তারকা টাচ লাইনে বল নিয়ে কাট ব্যাক করার পরও জালে শট নিতে ব্যর্থ হন। তবে পরক্ষণের আক্রমনে আর হতাশ হতে হয়নি জাপানিদের। ৪৩ মিনিটে ছোট কর্নারের পর বল ক্রস করেন রিটসু ডোয়ান। বলটি ডি বক্সে মায়া ইউশিদার পায়ে লেগে চলে যায় বক্সের সামনে থাকা ডেইজেন মিডার কাছে। দ্রুত পা চালিয়ে বলটি জালে পাঠাতে ভুল করেননি মিডা (১-০)। অবশ্য অফসাইড সন্দেহ দূর করার জন্য গোলের সিদ্ধান্ত দেয়ার আগে ভিএআর চেক করে নেন কর্তব্যরত রেফারি।
ম্যাচের প্রথমার্ধটি এবার বেশ জমজমাট হয়েছে। দুই পক্ষই আক্রমনও পাল্টা আক্রমনের মধ্য দিয়ে খেলেছে। এর আগে অবশ্য দুই বিশ^ চ্যাম্পিয়নকে পরাজয়ের স্বাদ দিয়েছে জাপান। ২০১০ ও ২০১৪ বিশ^ চ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে দেয়া দলটি বিরতিতে যাবার আগে ১-০ গোলের লিড পেয়ে যায় ২০১৮ রানার্সআপদের বিপক্ষে। যদিও প্রথমার্ধে বল দখলের লড়াইয়ে এগিয়ে ছিল ক্রোয়েশিয়া। ৫৮.৬ শতাংশের বিপরীতে জাপানিদের দখলে ছিল ৪১.৪ শতাংশ।
বিরতি থেকে ফিরে গোল পরিশোধে মরিয়া হয়ে উঠে ক্রোয়েশিয়া। সফলতা পেতে বেশী সময় লাগেনি। ম্যাচের ৫৫ মিনিটে গোল পরিশোধ করে ক্রোয়েশিয়াকে সমতায় ফিরিয়ে আনেন পেরিসিচ। মাঝমাঠ থেকে ডিয়ান লোভরেনের ক্রসের বল লাফিয়ে উঠে দর্শনীয় প্লেসিং হেডে জাপানের জালে জড়িয়ে দেন তিনি। জাপানের গোল রক্ষক ডান দিকে ঝাপিয়ে পড়ে বলটি প্রতিহত করা চেস্টা করেছিলেন। কিন্তু বলটি তার নাগালের বাইরে দিয়ে বার ঘেষে জালে জড়িয়ে যায় (১-১)।
এর ২ মিনিট পর প্রতি আক্রমনে যায় জাপান। আনুমানিক ২৫ গজ দূর থেকে মিডফিল্ডার ওয়াতারু এন্ডোর বুলেট গতির শট কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন ক্রোয়েশিয় গোল রক্ষক ডোমিনিক লিভাকোভিচ।
তবে গোল পরিশোধের ঘটনা টনিকের মতো কাজ করে ক্রোয়েশিয়দের মধ্যে। ফের ম্যাচের নিয়ন্ত্রনে এগিয়ে যায় তারা। ৬১ মিনিটে ডি বক্সের বাইরে থেকে লুকা মড্রিচের বুলেট গতির ভলি জাপানের বক্সে ঢুকার মুহুর্তেই ফিস্ট করেন গোন্ডা। ৬৬ মিনিটে আন্দ্রে বাডিমির দারুন গোলের একটি সুযোগ পেয়েছিলেন। সতীর্থ আন্দ্রে ক্রামারিচের ডিফ্লেক্টেড পাসের বল সামনে পেয়েও জালে জড়াতে ব্যর্থ হন তিনি।
এরপর থেকে মন্থর হয়ে আসে ম্যাচের গতি। এর অবশ্য কারণও আছে । নির্ধারিত ৯০ মিনিট যদি মতায় তাকে তাহলে অতিরিক্ত সময় খেলতে হবে দল দুটিকে। এই কারণে হয়তো তারা শক্তি সংরক্ষন করে খেলার চেস্টা করছিল তারা। তবে তাদেরকে উৎসাহ দিতে থাকে ৪৫ হাজার ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন স্টেডিয়ামে উপস্থিত প্রায় ৪৩ হাজার দর্শক।
ম্যাচের ৮০ মিনিটে আকস্মিক এক আক্রমন করে বসে জাপান। তাকেইরো টোমিইয়াসু ক্রোয়েশিয় বক্সে দ্রুত ঢুকে গিয়ে সরাসরি শট না করে কাট ব্যক করেন সতীর্থের আশায়। কিন্তু তার বাড়িয়ে দেয়া বল জালে জড়ানোর মতো কোন খেলোয়াড় সেখানে ছিলনা। যদিও ওয়ান অন ওয়ান পজিশনে সরাসরি শট নিতে পারতেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ৪ মিনিটের ইনজুরি টাইমেও কোন পক্ষ গোল করতে না পারায় অতিরিক্ত সময়ে গড়ায় ম্যাচ। কাতার বিশ^কাপে এটিই ছিল প্রথম অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো ম্যাচ। এই সময়ও কোন পক্ষ গোল করতে না পারায় ট্রাইব্রেকারের মাধ্যমে নির্ধারিত হয় জয় পরাজয়। টুর্নামেন্টের প্রথম টাইরেব্রকারে ক্রোয়েশিয়া ৩-১ গোলে জাপানকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করে।
এর আগে তিনবার পরস্পরের মুখোমুখি হয়েছিল জাপান ও ক্রোয়েশিয়া। দুই পক্ষই একটি করে ম্যাচে জয়লাভ করেছিল। সর্বশেষ ২০০৬ সালের ম্যাচে গোলশুন্য ড্র করে তারা।