ক্রাইস্টচার্চে দুটি মাসজিদে হামলায় ৫০ জন নিহতের ঘটনায় অভিযুক্ত ব্রেন্টন ট্যারেন্ট বিচারের জন্য উপযোগী কিনা তা জানতে তার মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছে নিউজিল্যান্ডের একজন বিচারক।
হাইকোর্টের বিচারক ক্যামেরন মান্ডার শুক্রবার এ আদেশ দেন।
এদিন ২৮ বছর বয়সী অস্ট্রেলীয় নাগরিক ট্যারেন্ট সর্বোচ্চ নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে অকল্যান্ডের কারাগারের একটি কক্ষ থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শুনানিতে অংশ নেন।
ক্রাইস্টচার্চের আদালতের বড় পর্দায় যখন ট্যারেন্টকে দেখা যায় তখন তার পরনে ছিল ধূসর রংয়ের একটি সোয়েটার। তার হাতে হাতকড়া পরানো ছিল। হামলায় হতাহতদের পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে আদালত ছিল পরিপূর্ণ।
কেউ কেউ হুইলচেয়ারে করেও আদালতে উপস্থিত হয়েছিলেন। হামলায় আহতদের অনেকেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
শুনানি চলাকালে ট্যারেন্টকে আবেগী মনে হয়নি। মাঝে মাঝে তিনি ঘরের চারপাশে তাকান বা মাথা উচু করেন, মনে হয় কি বলা হচ্ছে তা শুনে তার ভালোই লাগছে।
পরে বিচারক ব্যাখ্যা করেন, ট্যারেন্ট শুধু বিচারক এবং আইনজীবীদের দেখতে পাচ্ছেন। তবে গ্যালারিতে বসা সাধারণ মানুষকে তিনি দেখতে পাচ্ছেন না।
ট্যারেন্ট শুধু একবারই কথা বলেছেন। তিনি আসনে বসেছেন শুধুমাত্র তা বিচারককে নিশ্চিত করেন। যদিও তার কণ্ঠ বাইরে আসছিল না। কেননা ভিডিওর শব্দ বন্ধ ছিল। এটা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি যে, শব্দ ইচ্ছাকৃতভাবে নাকি অনিচ্ছাকৃতভাবে বন্ধ ছিল।
মান্ডার জানান, মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়া তার আদেশের কোনো কিছু পড়া উচিৎ হবে না। আর এধরনের মামলায় এটি (মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা) স্বাভাবিক পদক্ষেপ।
আইনজীবীরা জানান, এটা সম্পন্ন করতে দুই থেকে তিন সপ্তাহ সময় লাগবে।
আদালত কক্ষে দুই ডজনেরও বেশি সাংবাদিক এবং প্রায় ৬০ জন সাধারণ মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
শুনানি চলাকালে আদালতের একজন রেজিস্ট্রার আদালতে উপস্থিত হওয়া মানুষদের আরবি ও ইংরেজি ভাষায় শুভেচ্ছা জানান। তাদের মধ্যে অনেককেই আবেগী এবং কান্না করতে দেখা যায়।
বিচারক বলেন, ট্যারেন্ট ৫০ জনকে হত্যা এবং ৩৯ জনকে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে অভিযুক্ত। পুলিশ এই সপ্তাহে অতিরিক্ত অভিযোগ দাখিল করার আগে প্রাথমিকভাবে একটি একক, প্রতিনিধিত্বমূলক হত্যার অভিযোগ দায়ের করেছে।
গত ১৫ মার্চ হামলায় আল নূর মসজিদে ৪২ জন, সাতজন লিনউড মসজিদে এবং একজন পরে নিহত হন।
নৃশংস ওই হত্যাকাণ্ডের দিনই প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক ট্যারেন্টকে আটক করা হয়। পরের দিন তিনি নিজেই মামলা লড়তে চান জানিয়ে তার পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ দিতে অস্বীকৃতি জানান।
কিন্তু পরে ট্যারেন্ট তার পক্ষে লড়ার জন্য শন টেইট ও জোনাথন হাডসন নামে অকল্যান্ডের দুজন আইনজীবীকে ভাড়া করেছেন।
মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ১৪ জুন অনুষ্ঠিত হবে।
আদালতের বাইরে ইয়ামা নবী নামে একজন বলেন, তাকে দেখে তিনি খুবই অসহায় বোধ করছেন।
ক্রাইস্টচার্চ হামলায় নবী তার বাবাকে হারান।
তিনি বলেন, ‘আমরা শুধুমাত্র আদালতে বসেছিলাম এবং শুনেছি। আমরা কি করবো? আমরা কিছুই করতে পারি না। নিউজিল্যান্ডের বিচারক এবং প্রধানমন্ত্রীর ওপর ছেড়ে দিয়েছি।’
হামলায় বেঁচে যাওয়া তোফাজ্জল আলম (২৫) বলেন, হামলার সময় তিনি লিনউড মসজিদে নামাজ পড়ছিলেন। শুনানিতে অংশ নেয়াকে তিনি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেছেন, কেননা হামলায় তার অনেক বন্ধু নিহত হয়েছেন।
আলম বলেন, ট্যারেন্টকে দেখে তিনি হতাশ হয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘মনে হয়েছে, সে যা করেছে তার জন্য মোটেও অনুতপ্ত নয়। তার ভেতরে কোনো আবেগ নেই। তাকে দেখে সব ঠিকই আছে মনে হয়েছে। আমি খুবই দুঃখিত। দুঃখিত নিজের জন্য। দুঃখিত হামলায় নিহত আমার বন্ধুদের জন্য। এবং তার জন্য।’