বন্যা দুর্গত এলাকায় ক্ষুদ্র ঋণ আদায়ে ‘জুলুম’ না করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার ২০ আগস্ট দিনাজপুর জিলা স্কুল মাঠে বন্যা দুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণের সময় তিনি এ আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নতুন ফসল ঘরে না ওঠা পর্যন্ত আমরা বন্যার্তদের সহয়তা দিয়ে যাবো। বন্যায় যাদের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তাদের ঘরবাড়িও মেরামত করে দেওয়া হবে। যারা লোন দিয়েছেন, সাপ্তাহিক কিস্তি তোলার জন্য বন্যার্ত মানুষদের কোন ভাবেই আপনারা জুলুম করবেন না। এনজিওদের প্রতি এটা আমার নির্দেশ। ৫০ লাখ পরিবারকে চাল দিচ্ছি। আপনারা যাতে ১০ টাকা কেজি চাল খেতে পারেন তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
দেশে বন্যা, দুর্যোগ থাকবেই উল্লেখ কর প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমস্ত প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করেই আমাদের বেঁচে থাকতে হবে। একটি মানুষও যেন গৃহহীন না থাকে বা খাবারের কষ্ট না হয়, সেই ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, উত্তরবঙ্গে হাহাকার ছিল, মঙ্গা লেগেই থাকত। আওয়ামী লীগ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর উত্তরবঙ্গের মঙ্গা দূর করে। উত্তরবঙ্গে যেন মঙ্গা না থাকে আমরা তার ব্যবস্থা করি। ২০০১ সালে বিএনপি জোট সরকার ক্ষমতায় আসলে উত্তরবঙ্গে আবারও মঙ্গা দেখা দেয়। ২০০৮ সালে নির্বাচনের পর ক্ষমতায় এসে আবারও আমরা সেই মঙ্গা দূর করি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতিমধ্যে আমরা বিদেশ থেকে খাদ্য কেনা শুরু করেছি। দেশে এখন পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ রয়েছে। আপনারা চিন্তা করবেন না। আওয়ামী লীগ বিজিবি, সেনাবাহিনী, পুলিশবাহিনী সবাই ত্রাণ বিতরণ করছে। জাতির পিতা এ দেশ স্বাধীন করে দিয়েছেন আমরাও গৃহহারা মানুষের ঘর-বাড়ি করে দিচ্ছি।
নিজের জীবন মানুষের জন্য উৎসর্গ করেছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি বাবা, মা, ভাই-বোন সব হারিয়েছি। আমার আর হারাবার কিছু নেই। আমার বাবা দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন। আমি দেশের মানুষের জন্য আমার জীবন উৎসর্গ করেছি। প্রয়োজনে আপনাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য আমিও জীবন দেব।
ত্রাণ বিতরণের সময় উপস্থিত ছিলেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী এবং জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার এমপি, খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মো. কামরুল ইসলাম, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জাল হোসেন চৌধুরী মায়া, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইমাম চৌধুরী, জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, মনোরঞ্জনশীল গোপাল এমপি, শিবলি সাদিক এমপি, জেলা প্রশাসক মীর খায়রুল আলম, পুলিশ সুপার মো. হামিদুল আলমসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
প্রসঙ্গত, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর শুক্রবার জানিয়েছে গত সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়া চলতি মৌসুমের দ্বিতীয় দফার এ বন্যায় এ পর্যন্ত ২৭ জেলার ১৩৩ উপজেলা ও ৪৩টি পৌরসভা এ বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকায় প্রায় ১১ লাখ ৪১ হাজার পরিবারের ৫০ লাখ ১৮ হাজার ৭০৬ জন বানভাসি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ছয় লাখ ১৮ হাজার ৭০৯ হেক্টর জমির ফসল।
আজকের বাজার: আরআর/ ২০ আগস্ট ২০১৭