খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণে সরকারকে আরো উদ্যোগী হতে হবে

বর্তমানে আমাদের দেশের জনসংখ্যা ষোল কোটিরও বেশি। মূলত ফুড বা খাদ্যের ব্যপারটা আসলে যেমন দৈনন্দিন আমরা ভাত, ডাল, মাছের পাশাপাশি সাবসিডিয়ারি ফুড যদি চিন্তা করি তাহলে বলতে হয় এই খাতের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। কারণ বাংলাদেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে।

মানুষের দৈনন্দিন ব্যস্ততার ফলে সাবসিডিয়ারি ফুডের আগ্রহ বেড়ে যাচ্ছে। আমাদের জনসংখ্যা প্রতিনিয়ত বৃদ্বি পাচ্ছে যা চলতেই থাকবে এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় উন্নতির ফলে আমাদের জন্মের হারের তুলনায় মৃত্যু হার কমছে। যার ফলে মানুষের আয়ু বেড়ে যাচ্ছে। বেড়ে যাচ্ছে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা।

আমি ব্যক্তিগতভাবে মনেকরি ফুড সেক্টরের চাহিদা আরো বৃদ্ধি পাবে। আর চাহিদার সাথে সাথে খাদ্যের গুনগত মানের দিকেও মানুষের নজর আসবে। গুনগত মান রক্ষা করতে গিয়ে আমাদের কিছু চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করতে হয়। যেমন ফুডের গুনগত মান রক্ষা করতে গিয়ে দাম একটু বেড়ে যায়। ভালো জিনিস পেতে হলে দাম একটু বেশি দিতে হবে সেটা ক্রেতাদের অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।

অল্প মূল্যে যদি কেউ পণ্য বিক্রি করতে চায় বা উৎপাদন করতে চায় তাহলে গুনগত মান রক্ষা করা কঠিন। মুল্য কম দিতে চাইলে মান রক্ষা করা কঠিন। যেমন আমাদের পণ্যের মধ্যে রয়েছে চানাচুর, ব্রেড, বিস্কুট এসব পন্যের ক্রেতা কিন্তু সব সব শ্রেনীর মানুষ। তাই আমাদের দাম নির্ধারন করতেও একটু চিন্তা করতে হয়।

আমাদের ক্রয়ক্ষমতা বাড়লেও অধিকাংশ ক্রেতাই চায় কম মূল্যে পণ্য কিনতে। যার ফলে যারা কম মুল্যে পণ্য বাজারজাত করতে চায় তারা কিন্তু গুনগত মান রক্ষা করতে পারেনা। তাই ভোক্তাদের মানষিকতা পরিবর্তন করতে হবে।

আমি বলতে চাই, খাদ্য এমন একটা জিনিস যেটা আমার স্বাস্থের সাথে জড়িত, বাবা-মা, সন্তানের স্বাস্থের সাথে এবং ছোট বাচ্চাদের স্বাস্থের সাথে জড়িত তাই এখানে কোন ছাড় দেওয়া যেতে পারেনা। অবশ্যই দেখতে হবে খাবারগুলো কোন পরিবেশে তৈরি করা হচ্ছে । কোন কাঁচামাল দিয়ে পণ্য তৈরি হচ্ছে। ভালো কাঁচামাল ব্যবহার করলে দাম একটু বেশি হবে তবে মান ঠিক থাকবে।

ভোক্তাদের আরো স্বাস্থ্য সচেতন হতে হবে। কারণ খাদ্যের মাধ্যমে যাতে শরীরে কোন সমস্যা তৈরি না হয়। ভালো মানের খাদ্য ক্রয় করতে হলে দামের দিকে না তাকিয়ে গুনগত মানের দিকে তাকাতে হবে।

ফুড সেক্টরের বেশির ভাগ কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় অনেক সময় কাঁচামাল সংগ্রহ করতে দাম বেড়ে যায় বা আন্তর্জাতিক বাজারে দর বৃদ্ধির ফলে পণ্যের দাম বাড়াতে হয়। ম্যানুফ্যাকচারার রাতারাতি চাইলেই দর বাড়াতে পারে না। ফলে মাঝে মাঝে একটু ঝামেলায় পড়তে হয়।

যারা কাঁচামাল আমদানি করে তাদের এই দিকে একটু খেয়াল রাখতে হবে। ফুড সেক্টরে সরকারের যথেষ্ট সহযোগিতা রয়েছে তবে আরো নজরদারি বাড়াতে হবে।কাঁচামালের দর অনেক সময় বেড়ে যায়, সেটা কি আসলেই ঠিক আছে কিনা বা কেউ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দাম বাড়াছে কি না, সেদিকে সরকারকে আরো নজরদারি বাড়ানো উচিত। তাহলে এই খাত আরো এগিয়ে যাবে।

ভ্যাটের বিষয়ে যদি সরকার আরো একটু ছাড় দিত তাহলে ফুড সেক্টর আরো এগিয়ে যেত। ভ্যাটের মাত্রা না বাড়িয়ে ভ্যাটের আওতা বাড়ালে সবার জন্যই সহনীয় হত। বিগত দুই থেকে তিন বছর যাবত এই মাত্রা বাড়ানো হয়েছে যেটা আমাদের জন্য একটু বেশি হয়ে গেছে। সবাই যেন আগ্রহ সহকারে ভ্যাট দিতে পারে সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

আমরা অত্যন্ত স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পণ্য উৎপাদন করে থাকি এটা আমাদের বিশেষত্ব। পানি থেকে শুরু করে কারখানার পরিবেশ সম্পুর্ন পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন যা স্বাস্থ্য সম্মত। যারা কারখানায় কাজ করে সকল শ্রমিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা এবং পরিস্কার ও জীবানুমুক্ত পোষাক পরিধানের ব্যবস্থা করে থাকি কোম্পানির পক্ষ থেকে। ফলে আমাদের উৎপাদিত সকল পণ্য স্বাস্থ্য সম্মত এবং মাননিয়ন্ত্রীত। আমরা যত কাঁচামাল ব্যবহার করে থাকি সব কাঁচামাল ফ্রেশ এবং মানসম্মত যেটা আমাদের বিশেষত্ব, যেটা অন্যদের তুলনায় ভিন্ন।

আমরা দেশের বাজারের চাহিদা মিটিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের পণ্য বাজারজাত করার পরিকল্পণা রয়েছে। গুডডে ফুড খুব তাড়াতাড়ি রেডি ফুড উৎপাদন করবে।

এম এম মোস্তাফা জামাল
ব্যবস্থাপনা পরিচালক, লিডারস ফুডস এন্ড ভেভারেজ লি.